রমজানের আগে করনীয় কাজ
রমজানের আগে করনীয় কাজ – রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহর কোনো বান্দা যে কোনো ভালো কাজ বা আমল যদি যথাযথভাবে উত্তম উপায়ে করে; তবে সে আমল বা কাজ আল্লাহ তাআলা পছন্দীয় হিসেবে গ্রহণ করেন। (তাবারানি)
১। তাওবাহ-ইসতেগফার করা
পবিত্র রমজানের আগের সব গোনাহ থেকে তাওবাহ ইসতেগফার করতে হবে। কোনো অন্যায়কারী যদি ভাবে যে, রমজান চলে এসেছে, আর আমার সব গোনাহ এমনিতেই ক্ষমা হয়ে যাবে। বাস্তবে বিষয়টি এমন নয় বরং আগে থেকে তাওবাহ-ইসতেগফার করে রমজানের যাবতীয় কল্যাণ লাভে নিজেকে প্রস্তুত করা খুবই জরুরি। আর তাতে আল্লাহ তাআলা ওই বান্দার আগের সব গোনাহ মাফ করে দিয়ে রমজানের যাবতীয় কল্যাণ দিয়ে জীবন সুন্দর করে দেবেন। এ জন্য বান্দা বেশি বেশি পড়বে-
>> আল্লাহুম্মাগফিরলি
হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করে দিন।
২। রমজানের সব উপকারিতা স্মরণ করা
বরকতময় মাস রমজান মাসে কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনাগুলো মেনে চলার প্রস্তুতি নেওয়া। মাস রমজান আসছে, মানসিকভাবে বারবার এ কথার স্মরণ ও নেক আমলের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে এ দোয়াটি বেশি বেশি করা-
>> আল্লাহুম্মা বাল্লিগনা রামাদান
হে আল্লাহ! আপনি আমাদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন। অর্থাৎ রমজান পর্যন্ত হায়াত দান করুন।’
আরও পড়ুন >> রমজান মাসের শ্রেষ্ঠ আমল
৩। রমজানের রোজার মানসিক প্রস্তুত করা
পবিত্র রমজান মাসে পরিপূর্ণ সাওয়াব ও ক্ষমা পেতে মানসিকভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করা। জীবনভর যত গোনাহ করেছি এ রমজানে সেসব গোনাহ বা অন্যায় থেকে পরিপূর্ণ ক্ষমা পেতে হবে। সবচেয়ে বেশি সাওয়াব পেতে হবে। রমজান শুরু হওয়ার আগে এ প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করা জরুরি।
৪। রমজান আগেই কাজা রোজা আদায় করা
রমজান শুরু হওয়ার আগে বিগত জীবনে অসুস্থ হওয়ার কারণে বা সফরের কারণে রমজানের ফরজ রোজা কাজা হয়ে থাকলে তা যথাযথভাবে আদায় করে নেওয়া। বিশেষ করে মা-বোনদের ভাঙতি রোজা থাকতে পারে। তাই রমজানের আগে শাবান মাসের এ সময়ে কাজ রোজা আদায় করে নেওয়া। এতে দুইটি ভালো আমল বাস্তবায়িত হবে-
>> রমজানের ফরজ আমলের প্রতি আগ্রহ বাড়বে
>> সুন্নাতের অনুসরণ হবে।
৫। যাবতীয় গুনাহ থেকে সাধারণ ক্ষমার চেষ্টা করা
আল্লাহ তাআলা রমজান মাসে অনেক মানুষকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। তবে এ সাধারণ ক্ষমা সবার ভাগ্যে জোটে না। কেননা এ ক্ষমা পেতে হলে দুইটি কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। ক্ষমা প্রার্থনা করে তা থেকে ফিরে আসতে হবে। তাহলো-
>> শিরক থেকে মুক্ত থাকাঃ
আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শিরক না করা। কেউ ইচ্ছা কিংবা অনিচ্ছায়, ছোট বা বড় শিরক করে থাকলে রমজান আসার আগেই তা থেকে তাওবাহ-ইসতেগফারের মাধ্যমে ফিরে আসা।
>> হিংসা থেকে মুক্ত থাকাঃ
কারো প্রতি কোনো বিষয়ে হিংসা না করা। কারণ হিংসা মানুসের সব নেক আমলকে সেভাবে জালিয়ে দেয়; যেভাবে আগুন কাঠকে জালিয়ে দেয়। তাই হিংসা পরিহার করে মনকে ক্ষমা লাভে স্বচ্ছ রাখা।
আরও পড়ুন >> পবিত্র মাহে রমজানের বৈশিষ্ট ও ফজিলত
৬। ফরজ রোজার নিয়ম-কানুন জেনে নেয়া
রমজান মাস আসার আগে রোজা পালনের মাসআলা-মাসায়েল তথা নিয়ম-কানুনগুলো ভালোভাবে জেনে নেওয়া জরুরি। আর তাতে রমজানের রোজা নষ্ট হওয়া থেকে বা মাকরূহ হওয়া থাকে বা অন্যান্য বিষয়গুলো জেনে নেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করা।
৭। বিগত রমজানের অসমাপ্ত কাজ চিহ্নিত করা
রমজান মাস আসার আগে বিগত রমজানের আগে করনীয় কাজ নেক আমলগুলো করতে না পারার কারণগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করা। যেমন-
(i) কেন নিয়মিত কোরআন অধ্যয়ন করা হয়নি?
(ii) কেন তারাবিহ পড়া হয়নি?
(iii) কেন দান-সহযোগিতা করা হয়নি?
(iv) কেন ইতেকাফ করা হয়নি?
(v) কেন রোজাদারকে ইফতার করানো হয়নি?
(vi) কেন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা সম্ভব হয়নি?
(vii) কেন কোরআন-সুন্নার আলোচনায় বসা হয়নি?
(viii) কেন রমজানের পরিবারের লোকদের হক আদায় করা হয়নি?
(ix) কেন রমজানের পাড়া-প্রতিবেশি বা আত্মীয়দের হক আদায় করা হয়নি?
আরও পড়ুন >> রমজানের সেরা ৩টি গজল | Bangla Gojol
৮। শাবান মাসজুড়ে রমজানের মহড়া চালু রাখা
রমজানের আগে করনীয় কাজ – রমজান মাসের বেশি বেশি ইবাদত করতে এবং রোজা রাখার জন্য শাবান মাসে বেশি বেশি নফল রোজা রাখা। বেশি বেশি কোরআন অধ্যয়ন করা। নফল নামাজ পড়া। তাওবাহ-ইসতেগফার করা। ত্যাগের মানসিকতা তৈরি করা। দান-সাদকাহ শুরু করা। যাতে এ মহড়ার বাস্তবায়ন পুরো রমজানজুড়ে সুন্দরভাবে চালানো যায়।
৯। রমজান মাসজুড়ে ২৪ ঘণ্টার রুটিন করা
এই মাসজুড়ে যে যেই কাজেই থাকুক না কেন, পুরো সময়টি কোন কোন কাজে কীভাবে ব্যয় হবে তার একটি সম্ভাব্য রুটিন তৈরি করে নেওয়া। আগাম রুটিন থাকলে রমজানে চরম ব্যস্ততার মাঝেও নেক আমলসহ অন্যান্য কাজগুলোও ইবাদতের মধ্যেই কেটে যাবে। এককথায় সব কাজের তালিকা করে নেওয়া।
১০। শাবান মাসের শেষ দিকে রমজানের চাঁদের অনুসন্ধান করা
শাবান মাসের ২৯ তারিখ সন্ধ্যায় চাঁদের অনুসন্ধান করা সুন্নাত। মুছে যাওয়ার পথে থাকা এ সুন্নাতটিকে আবারও জীবিত করার পূর্ব পরিকল্পনা গ্রহণ করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রমজানের আগে করনীয় কাজ উল্লেখিত ১০টি প্রস্তুতি যথাযথভাবে আগাম নিজেদের জীবনে বেশি বেশি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।