নামাজে এবং অবসরে কোরআন পাঠ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসের একাধিক বর্ণনায় নামাজে কোরআন পড়ার গুরুত্ব ও ফজিলত বর্ণনা করেছেন। সেটি হল-
১. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তোমাদের কেউ কি পছন্দ করে যে, সে তার পরিবারের কাছে ফিরে এসে দেখবে- তার তিনটি বড় আকারের নাদুস-নুদুস গর্ভবর্তী (অতি মূল্যবান মরুভূমির জাহাজখ্যাত) উষ্ট্রী আছে? আমরা বলি- ‘হ্যাঁ’ আমরা দেখতে চাই।’
প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তাহলে তোমাদের কেউ যদি নামাজে তিনটি (কোরআনের) আয়াত পাঠ করে; তবে তা হবে তার জন্য তিনটি বড় আকারের নাদুস-নুদুস গর্ভবর্তী উষ্ট্রীর চেয়েও উত্তম।’ (মুসলিম)
২. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এ ফরজ নামাজগুলো সঠিকভাবে আদায় করবে; গাফেলদের তালিকায় তার নাম লেখা হবে না। আর যে ব্যক্তি এক রাতে ১০০ (একশ’) আয়াত পাঠ করবে; গাফেলদের তালিকায় তার নাম লেখা হবে না অথবা তার নাম লেখা হবে বিনয়ী লোকদের তালিকায়।’ (ইবনে খুজায়মা, মুসতাদরেকে হাকেম)
৩. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি (রাতের) নামাজে দাঁড়িয়ে ১০ আয়াত পাঠ করবে; গাফেলদের তালিকায় তার নাম লেখা হবে না। আর যে ব্যক্তি (রাতের) নামাজে দাঁড়িয়ে ১০০ আয়াত পাঠ করবে; তার নাম লেখা হবে বিনয়ী লোকদের তালিকায়। আর যে ব্যক্তি (রাতের) নামাজে দাঁড়িয়ে ১ হাজার আয়াত পড়বে; তার নাম লেখা হবে বিপুল সাওয়াবের অধিকারী লোকদের তালিকায়।’ (আবু দাউদ)
যাকাতের গুরুত্ব ও ফজিলত | ইসলামে যাকাত দেওয়ার নিয়ম
৪. হজরত তামিম দারি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এক রাকাআতে (কোরআনের) একশ’ আয়াত পাঠ করবে; তার আমল নামাজ এক রাত আল্লাহর সামনে বিনীত থাকার সাওয়াব লেখা হবে।’ (মুসনাদে আহমাদ)
৫. নামাজে কোরআন তেলাওয়াত আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের কার্যকারী আমল। যে আমলের কারণে বান্দা আল্লাহর দপ্তরে বিনয়ীর মর্যাদা পায়।
৬. সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, নামাজে বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করা। দীর্ঘ বা লম্বা কেরাতে নামাজ পড়া। বিশেষ করে রাতের নফল নামাজে কুরআনুল কারিমের বেশি বেশি আয়াত তেলাওয়াত করা। এর বিনিময়ে হাদিসে ঘোষিত ফজিলত পাওয়ার চেষ্টা করা।
৭. পবিত্র কুরআন শরীফ ছহি (শুদ্ধ) করে পড়লে অনেক ছওয়াব, তেমনি অশুদ্ধ পড়লে গুণাহ হয় এবং অনেক ফরজ ইবাদতও নষ্ট হয়ে যায়। অশুদ্ধ পড়ার কারণে কোন কোন ক্ষেত্রে অর্থের পরিবর্তনও হয়ে যায়, তাই প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর উপর তাজবীদের সঙ্গে শুদ্ধ পবিত্র কুরআন শরীফ পাঠ করা একান্ত কর্তব্য ।
পুরাতন কম্পিউটার কিনে আপনি ঠকছেন না তো !!
৮. ‘আমি এই কুরআনকে পৃথক পৃথক করে নাযিল করেছি যেন আপনি উহা মানুষের সম্মুখে থেমে থেমে পড়তে পারেন, আর আমি উহাকে নাযিল করার সময়ও (অবস্থামত) ক্রমে ক্রমে নাযিল করেছি। (যেন উহা সহজ ও সুস্পষ্টভাবে বোধগম্য হয়)।’ (বনী ইসরাঈল ১০৬)
‘আমি উহাকে এক বিশেষ ধারায় আলাদা অংশে সজ্জিত করেছি।’ (ফুরকান ৩২)
৯. কুরআন শুদ্ধ করে পড়ার ফজিলত সম্পর্কে হাদীস : হযরত উসমান ইবনে আফফান (রা.) বর্ণনা করেন, নবী করীম (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তি সর্বোত্তম, যে নিজে কুরআন শিখে এবং অন্যকে শিখায়’ (বুখারী)
১০. আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন, নবী করীম (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ অন্য কোন নবীর তিলাওয়াত শুনেন না, যেরূপ তিনি কোন নবীর সুমধুর তিলাওয়াত শুনেন (অর্থাৎ যিনি সুস্পষ্ট করে সুন্দরভাবে তিলাওয়াত করেন তা যেরূপ শুনেন তদ্রুপ অন্যের তিলাওয়াত শুনেন না)। অধঃস্তন রাবীর সঙ্গী (আবু সালমা) বলেছেন এর অর্থ উচ্চস্বরে সুষ্পষ্ট করে তিলাওয়াত করা।’ (বুখারী)
১১. রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি পবিত্র কুরআন শরীফের একটি হরফ পড়বে সে ব্যক্তি দশটি নেকী পাবে।’
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সমস্ত ইবাদতের মধ্যে পবিত্র কুরআন শরীফ পাঠ করা সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত।’
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয় যার অন্তরে পবিত্র কুরআন শরীফের কোন একটি অক্ষরও নেই সে যেন একটি খালি ঘর’।
১২. রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি পবিত্র কুরআন শরীফ পাঠ করে এবং উহার হুকুম অনুযায়ী আমল করে কিয়ামতের দিন তার পিতামাতাকে এমন একটি টুপি পরানো হবে, যার আলো সূর্যের আলো হতেও অধিক উজ্জ্বল হবে।’
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা পবিত্র কুরআন শরীফ পাঠ কর, নিশ্চয়ই উহা তোমাদের জন্য কিয়ামতের ময়দানে সুপারিশ করবে।’