তারাবীর নামাজ পড়ার নিয়ম এবং ফজিলত
শুরু হয়েছে রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের মাস পবিত্র রমজান। এই মাসের প্রধান দুটি আমল হলো রোজা এবং নামাজ। রোজা হলো আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সুবহে সাদিক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার, দাম্পত্য মিলন ও রোজা ভঙ্গ হওয়ার সকল বিষয় থেকে দূরে থাকা। আর রাতে তারাবীর নামাজ। তারাবীর নামাজ পড়ার নিয়ম এবং ফজিলত সমুহ প্রতিটি মুসলমানের জানা প্রয়োজন।
তারাবীহ নামাজের নিয়ম সমূহ
১। এশার ফরয এবং সুন্নাত নামায শেষে তারাবীহ এর নামাজ শুরু করবেন ।
২। দুই দুই রাকাত করে ৮/২০ রাকাত পড়বেন।
৩। স্বাভাবিক ভাবে যে রকম নামাজ পড়ে ঠিক সেভাবে দোয়া কেরাত পড়তে হবে ।
৪। কোন নির্দিষ্ট সূরা নেই, যে কোন সূরা দিয়ে পড়তে পারেন । চাইলে এক রাকাতে একাধিক সূরা পড়তে পারেন।
৫। যেমন প্রথম রাকাতে সূরা ফীল সূরা কুরাইশ সূরা মাউন এবং দ্বিতীয় রাকাতে সূরা কাওসার সূরা কাফিরূন এভাবে ধারাবাহিকতা রেখে পড়তে পারেন।
৬। এমন কি সূরা ফাতিহা সহ আর মাত্র যে কোন দুইটা সূরা দিয়েও সব নামায পড়তে পারেন।
আরও পড়ুন >> ওজু বা পবিত্রতা ছাড়া সালাত কবুল হয় না । অযুর গুরুত্ব
প্রতি চার রাকাত শেষ করে একটু বিশ্রাম নিবেন। এই সময়ে দুআ দুরুদ এস্তেগফার পড়তে পারেন, কুরআনও পড়তে পারেন বা নফল নামাজ ও পড়তে পারেন।
৪ রাকাত পরপর মোনাজাত না করে ২০ রাকাত শেষে মোনাজাত করতে পারেন। তবে আপনি চাইলে মোনাজাত করতেও পারেন, নাও পারেন । নিজের যা প্রয়োজন মোনাজাতে চেয়ে নিবেন
আরও পড়ুন >> রমজানের আগে করনীয় কাজ সমুহ । মাহে রমজান ২০২২
তারাবীহ নামাজের ফজিলত
রমজানে তারাবীহ নামাজ গোনাহ মাফের অন্যতম উপায়। রমজান মাসে তারাবীহ বা তাহাজ্জুদ নামাজ পড়লে বিগত জীবনের গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। হাদিসে এসেছে- হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানে রাতে বিশ্বাসের সঙ্গে সাওয়াবের আশায় দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করে, তার আগের গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।’(বুখারি ও মুসলিম)
তারাবীহ নামাজের নিয়ম
দুই রাকাআত করে তারাবীহ নামাজ আদায় করতে হয়। দুই দুই রাকাআত করে প্রতি ৪ রাকাআত পরপর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতে হয়। বিশ্রামের এ সময়টিতে বহু প্রচলিত এই দোয়া পড়ে থাকেন। আর তাহলো-
سُبْحانَ ذِي الْمُلْكِ وَالْمَلَكُوتِ سُبْحانَ ذِي الْعِزَّةِ وَالْعَظْمَةِ وَالْهَيْبَةِ وَالْقُدْرَةِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْجَبَرُوْتِ سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْحَيِّ الَّذِيْ لَا يَنَامُ وَلَا يَمُوْتُ اَبَدًا اَبَدَ سُبُّوْحٌ قُدُّوْسٌ رَبُّنا وَرَبُّ المْلائِكَةِ وَالرُّوْحِ
উচ্চারণ : ‘সুবহানাজিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি, সুবহানাজিল ইয্যাতি ওয়াল আঝমাতি ওয়াল হায়বাতি ওয়াল কুদরাতি ওয়াল কিবরিয়ায়ি ওয়াল ঝাবারুতি। সুবহানাল মালিকিল হাইয়্যিল্লাজি লা ইয়ানামু ওয়া লা ইয়ামুতু আবাদান আবাদা সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালায়িকাতি ওয়ার রূহ।’
আরও পড়ুন >> প্রতিদিন হাঁটার উপকারিতা || দিনে প্রায় ৬০০০ ধাপ হাটতে হবে
তারাবির নামাজের মোনাজাত
পবিত্র রমজানে তারাবীহ নামাজের রাকাআত সংখ্যা নিয়ে বহু মতভেদ রয়েছে। যে যত রাকাআত নামাজই পড়ুন কেন, অনেকেই ৪ রাকাআত পরপর মোনাজাত করে থাকেন আবার অনেকে পুরো নামাজ শেষ করে মোনাজাত করে থাকেন। তবে বহুল প্রচলিত একটি দোয়া অনেকেই পড়ে থাকেন। আর তাহলো-
اَللَهُمَّ اِنَّا نَسْئَالُكَ الْجَنَّةَ وَ نَعُوْذُبِكَ مِنَ النَّارِ يَا خَالِقَ الْجَنَّةَ وَالنَّارِ- بِرَحْمَتِكَ يَاعَزِيْزُ يَا غَفَّارُ يَا كَرِيْمُ يَا سَتَّارُ يَا رَحِيْمُ يَاجَبَّارُ يَاخَالِقُ يَابَارُّ – اَللَّهُمَّ اَجِرْنَا مِنَ النَّارِ يَا مُجِيْرُ يَا مُجِيْرُ يَا مُجِيْرُ- بِرَحْمَتِكَ يَا اَرْحَمَ الرَّحِمِيْنَ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকাল জান্নাতা ওয়া নাউজুবিকা মিনাননার। ইয়া খালিক্বাল জান্নাতি ওয়ান নার। বিরাহমাতিকা ইয়া আঝিঝু ইয়া গাফফার, ইয়া কারিমু ইয়া সাত্তার, ইয়া রাহিমু ইয়া ঝাব্বার, ইয়া খালিকু ইয়া বাররু। আল্লাহুম্মা আঝিরনা মিনান নার। ইয়া মুঝিরু, ইয়া মুঝিরু, ইয়া মুঝির। বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।’
তারাবির নামাজে যা করা উচিত নয়
অনেকের মাঝেই দ্রুত কিংবা তাড়াতাড়ি তারাবিহ নামাজ পড়ার প্রবণতা দেখা যায়। এমনটি কোনোভাবেই উচিত নয়। বরং তারাবীহ নামাজ ধীরস্থিরভাবে পড়াই উত্তম। এতে তারাবীহ নামাজের সৌন্দর্য ও মর্যাদা প্রকাশ পায়। গোনাহ থেকে মুক্তি পায় মুমিন। আমিন।