নাটোরের লালপুর আর রাজশাহীর বাঘা – প্রতারণার আরেক নাম নাটোরের লালপুর ইমো কিংবা বিকাশ প্রতারণা দিন দিন বেড়েই চলছে। চলুন কি ভাবে প্রতারণা করে থাকে দেখে আসি।
২৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর হাজারীবাগ থানায় একটি মামলা হয়। এরপর তদন্তে নেমে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম-দক্ষিণ বিভাগ অভিযান চালায় নাটোরে। ১ মার্চ সোহাগ, রিপন ইসলাম, সোহেল রানা ও লিটন আলী নামে চারজনকে গ্রেফতার করে। ডিবি জানায়, এরা মোবাইল ফোন হার্ডওয়্যার অ্যান্ড সফটওয়্যার ফিক্সিংয়ের কাজ খুব ভালোভাবে রপ্ত করেছে। নারীকণ্ঠে কথা বলার দক্ষতা কাজে লাগিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পাতে তারা। প্রতারণায় টার্গেট করে অনলাইন যোগাযোগমাধ্যম ইমো ব্যবহারকারী মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসীদের।
বিস্তারিত জানতে Google News অনুসরণ করুন
নাটোরের লালপুর উপজেলার বিলমারিয়া ও রাজশাহীর বাঘা উপজেলার দুড়দুড়িয়া গ্রামের ৮০ ভাগ মানুষই প্রতারণার সঙ্গে জড়িত। নাটোর জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সাইফুর রহমান বলেন, বিলমারিয়ার প্রতারকরা মূলত হ্যাকার গ্রুপ। এদের বাড়ি নাটোরের লালপুর কিন্তু এরা সারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রতারণা করে। তবে দেশের যে কোনো স্থানে তাদের নামে মামলা হলে মামলার রিকুইজিশনে গ্রেফতার করা যায়। এতে কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই।
যা আছে ফিঙ্গারপ্রিন্টের তথ্য বিশ্লেষণে – নাটোরের লালপুর
সারা দেশে গ্রেফতার আসামিদের ফিঙ্গারপ্রিন্টের নমুনা থানা কিংবা আদালত থেকে সংগ্রহ করে থাকে সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ। ফরেনসিক ল্যাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের ১৪ আগস্ট পর্যন্ত তাদের ডাটা ব্যাংকে ২ লাখ ৪৩ হাজার ফিঙ্গারপ্রিন্টের তথ্য জমা হয়েছে। এসবের মধ্যে ঢাকায় যেসব ব্যক্তির ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংগ্রহ করা হয়েছে তাদের ৬০ শতাংশই এক অপরাধে বারবার জড়িয়ে পড়ে। অর্থাৎ প্রতারণা, চুরি, মাদক কিংবা ছিনতাইয়ে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে যায়, জামিনে বেরিয়ে আবার অপরাধ করে।
আরও পড়ুন >> বাকী এবং কিস্তিতে ক্রয়–বিক্রয় ইসলামে জায়েজ কিনা?
২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রথাগত পদ্ধতিতে (ম্যানুয়াল) আঙুলের ছাপের তথ্য সংরক্ষণ করা হতো। পরে অটোমেটিক ফিঙ্গার আইডেনটিফিকেশন সিস্টেম সফটওয়্যারের মাধ্যমে আসামিদের আঙুলের ছাপের সংরক্ষণ শুরু হয়। ১০ হাজারের বেশি আসামির আঙুলের ছাপ ডাটা ব্যাংকে থাকা ছাপের সঙ্গে একাধিকবার মিলেছে। এ মিলে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে তারা বারবার গ্রেফতার হচ্ছে।
প্রতারকদের আরেক গ্রাম
মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার গোয়ালদহ ও মহেশপুর নামে দুটি গ্রামের ১৩৫ প্রতারকের ব্যাপারে তথ্য পায় পুলিশ। এরা গ্রামে বসেই বিকাশের মাধ্যমে দেশজুড়ে প্রতারণার জাল বিস্তার করেছে। পুলিশ বলছে, ২০২১ সালের ১ থেকে ৮ জুন পর্যন্ত চট্টগ্রাম নগরের ইপিজেড ও হালিশহর এলাকার শতাধিক বিকাশ গ্রাহক প্রতারণার শিকার হন। একের পর এক অভিযোগের পর তদন্তে নেমেই মাগুরার ওই দুটি গ্রামের খোঁজ পাওয়া যায়। সেখানে তদন্তসংশ্লিষ্টরা গিয়ে দেখে, গোয়ালদহ ও মহেশপুর গ্রামে পুকুরপাড়ে বা পাটের ক্ষেতে মাচার মতো কিছু টংঘর আছে।
অধিকাংশ যুবকই সেই টংঘরে আড্ডা দেয়। যাদের বয়স ১৫ থেকে ৩০ বছর। তারা সেখানে বসেই একের পর এক মানুষকে বিকাশ বা রকেটের কর্মকর্তা সেজে ফোন করে। এরপর গ্রাহকদের কাছ থেকে পিন কোড হাতিয়ে নেয়। দুটি গ্রামে এমন সাত-আটটি চক্র রয়েছে। শ্রীপুর উপজেলা চেয়ারম্যান মিয়া মাহমুদুল গনি এই প্রতিবেদককে বলেন, অনলাইনের কারণে প্রতারণা একসময় ব্যাপক আকার ধারণ করেছিল, প্রশাসনের তৎপরতায় এখন তা কিছুটা কমেছে। এখন ওই দুই গ্রাম অনেকটা পুলিশ পাহারায় থাকে।
সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক বলেন, মানুষের সংখ্যা যত বাড়বে, সামাজিক সমস্যাও বাড়বে। কর্মসংস্থানের সীমাবদ্ধতার কারণে প্রতারণার মতো অপরাধ বাড়ার অন্যতম কারণ বলে তিনি মনে করেন।