জামায়াতে নামাজ পড়ার ব্যাপারে – নবী কারীম (সা) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য মসজিদ তৈরি, করে, তার জন্য আল্লাহ্ জান্নাতে ঘর তৈরি করেন।
অন্য হাদীসে বর্ণিত আছে, সে ব্যক্তি আল্লাহর আরশের ছায়ার নিচে স্থান পাবে যার মন সবসময় মসজিদে লেগে থাকে।
মসজিদ আবাদ করার অর্থ ঘর বা বিল্ডিং তৈরি করা বুঝায় না। বরং প্রকৃতপক্ষে মসজিদে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগী করা এবং জামাআতে নামাজ প্রতিষ্ঠা করাই বোঝায়।
রাসূলুল্লাহ্ (সা) এবং সাহাবায়ে কিরাম জামা’আতের ব্যাপারে খুব যত্নবান ছিলেন। তাদের আমল দেখে মনে হয় জামা’আত নামাজেরই এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এমনকি মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতর অবস্থায়ও রাসূলুল্লাহ (সা) জামাআতে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকাকে অপসন্দ করেছেন।
একা নামাজ আদায় করার তুলনায় জামাআতে নামাজ আদায় করলে সাতাশ গুণ সাওয়াব পাওয়া যায়।” জামাআতে নামাজ আদায় করাতে বহু হিত ও কল্যাণ নিহিত রয়েছে। জামা’আতের প্রতি পাবন্দী করার দ্বারা মানুষের মন অধিক আকৃষ্ট হয়। এতে নিজের নামাজকে সহীহ্ ও সুন্দর করার বিরাট সুযোগ সৃষ্টি হয়।
এমনকি এতে নামাজের মাসাইল ও নিয়ম-কানুন শেখার সুযোগ সৃষ্টি হয়। জামা’আতের একটি বড় ফায়দা এই যে, যখন একদল মুসলমান এক কাতারে আল্লাহ তা’আলার দরবারে পাড়ায় এবং বিনয় বিগলিত অন্তর নিয়ে তাঁর নিকট ফরিয়াদ জানায়, তখন আল্লাহ্ তা’আলার রহমতের সাগরে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ফলে অযুত সহস্র ধারায় নেমে আসে তার অফুরন্ত করুণা ও রহমত।
জামাআতের বিশেষ ফায়দা এই যে, অনেক সময় আল্লাহর প্রিয় বান্দার ইখলাস ও তাকওয়ার বদৌলতে গোটা জামা’আত আল্লাহর রহমতের ছায়াতলে স্থান পেয়ে যায় এবং আল্লাহর কোন খাস বান্দার হৃদয়ের সজীবতা তখন সকলের হৃদয়কে সজীব করে তোলে। ফলে একজনের উসীলায় গোটা জামা’আতে নামাজ কবুল হয়ে যায়।
জামাআত তরকের অপকারিতাঃ
নামাজ জামা’আতেই আদায় করতে হবে। নবী কারীম (সা) জীবনে জামা’আত ত্যাগ করেননি। নবীর উম্মত হিসেবে জামাআতে নামাজ আদায় করা অবশ্য কর্তব্য। জামা’আত ছাড়া সালাত আদায়ের অপকারিতা সম্পর্কে হযরত আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা) নবী কারীম (সা) থেকে বর্ণনা করেছেন, নবী কারীম (সা) ইরশাদ করেন : হে মুসলমান সকল ! আল্লাহ্ তোমাদের জন্য সুনানে হুদা বা হিদায়াতের পন্থা নির্ধারিত করে দিয়েছেন।
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামা’আতের সাথে মসজিদে আদায় করাই হচ্ছে সুনানে হুদী। তোমরা যদি তোমাদের ঘরে নামাজ আদায় করা শুরু কর, যেমন অমুক ব্যক্তি জামা’আত ছেড়ে ঘরে নামাজ আদায় করে, তাহলে তোমরা তোমাদের নবীর সুন্নাত ছেড়ে দিলে। যদি তোমরা নবীর সুন্নাত ছেড়ে দাও, তাহলে হিদায়াতের পথ থেকে তোমরা বিচ্যুত হয়ে পড়বে।
জামাআত ওয়াজিব হওয়ার শর্তাবলীঃ
১। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া – অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য জামাআত ওয়াজিব নয়।
২। পুরুষ হওয়া – মহিলাদের জামাআতের নামাজ আদায় ওয়াজিব নয়।
৩। জ্ঞানবান হওয়া – অজ্ঞান, পাগল বা নেশাগ্রস্থদের জন্য জামাআত ওয়াজিব নয়।
৪। যে সব ওযরের কারণে জামাআত ছেড়ে দেওয়ার অনুমতি আছে, সে সব ওযর না
থাকা।
আরও পড়ুন >> ১০টি প্রয়োজনীয় ক্যামেরা এক্সেসোরিজ যা থাকা প্রয়োজন
জামাআতের আহকামঃ
১। দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত জামাআতবদ্ধভাবে নামাজ আদায় করা সুন্নাতে মুআক্কাদাহু,
ওয়াজিবের কাছাকাছি। মসজিদেই জামাআতে নামাজ আদায় করতে হয়। প্রয়োজনে
মসজিদের বাইরে, ঘরে, আফিসে, মাঠে; ভ্রমণে জামা’আত আদায় করতে হয়।
২। জুমু’আ ও দুই ঈদের নামাজের জন্য জামা’আত শর্ত।
৩। রমযানের তারাবীর নামাজও জামা’আতে আদায় করা সুন্নাতে মুআক্কাদাহ্।
৪। কুসূফের নামাজও জামা’আতে আদায় করা সুন্নাতে মুআক্কাদাহ।
৫। রমযানের বিতরের নামাজ জামাআতে আদায় করা মুস্তাহাব।
৬। জামাআতে কাতার সোজা করা সুন্নাত।
৭। নামাযীর সামনে সু দেওয়া। নামাযীর সামনে দিয়ে লোকজন যাতায়াতের আশংকা থাকলে সামনে একহাত উঁচু ও অন্তত এক আংগুল পরিমাণ মোটা কিছু দাঁড় করে রাখা মুস্তাহাব।