হাশরের ময়দানে দাঁড়িপাল্লায় সবচেয়ে ভারী জিনিষ কি?

Spread the love

হাশরের ময়দানে দাঁড়িপাল্লায় সবচেয়ে ভারী জিনিষ চরিত্র। মুমিনদের জন্যে এটা একটা লোভনীয় হাদিস! ভাবতেই ভালো লাগে যে, আমি কোনোভাবে যদি আমার চরিত্র সুন্দর করতে পারি, হাশরের ময়দানে তাহলে আমার পাল্লা সবচেয়ে ভারী হবে আল্লাহর জন্যে নিজের চরিত্রকে ঘষে মেজে সুন্দর রাখতে আমরা আমাদের বাস্তব জীবনে যেসব কাজ প্রতিদিন করতে পারি-

হাশরের ময়দানে দাঁড়িপাল্লায় সবচেয়ে ভারী জিনিষ

১. প্রমান ছাড়া কাউকে খারাপ ভেবে না বসা। সাহাবীদের সময় একবার এক সাহাবী যখন দেখলেন আরেকজন সাহাবীর দাড়ি থেকে মদের ফোঁটা বেয়ে বেয়ে পড়ছে, সে তাকে প্রথমেই দোষ না দিয়ে ভাবলেন, হয়তো তার সাথে কারো ঝগড়া হয়েছে, এর ফলে রাগ করে কেউ তার দিকে মদের গ্লাস ছুড়ে মেরেছে, তাই এখন তার দাড়ি থেকে এর ফোঁটা বেয়ে বেয়ে পড়ছে।

২. নিয়তেই বরকত! প্রতিনিয়ত নিজের নিয়তকে চেক করা। আমি এই কাজটা কেন করছি? কাকে খুশি করার জন্যে করছি? কেউ যদি সত্যি কোনো কাজ আন্তরিক ভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে করে – তাহলে সেই কাজে উচ্চমানের কোয়ালিটি থাকবে! একটা সিম্পল নিয়ত করলে যে কোনো কাজ বরকতপূর্ণ হয়ে যায়।

যেমন কেউ যদি ঘুমানোর আগে এই নিয়ত করে ঘুমায় যে, “হে আল্লাহ! আমি এই ঘুমের মাধ্যমে যে এনার্জি পাবো, সেটা দিয়ে যেন ঘুম থেকে উঠে আরো ভালোভাবে তোমার ইবাদাত করতে পারি।” তাহলে পুরা ঘুমটাই তার জন্যে ইবাদাত হবে এবং সে যতটা সময় ঘুমাবে তার জন্যে নেকী পেতে থাকবে! সুবহানাল্লাহ ঘুমানোর জন্যে পুরস্কার!

অপ্রয়োজনীয় কথা-আলাপে মশগুল না হওয়া

৩. অপ্রয়োজনীয় কথা-আলাপে মশগুল না হওয়া। কেউ কথা বলার সময় তাকে কথার মাঝে কাট করে নিজের কথা বলা শুরু না করা! কেউ কথা বলতে থাকলে কখনো তাকে মাঝখানে কাট করে নিজেরা কথা বলা শুরু করে দিও না। কারণ, যে কথা বলছে সে যদি জ্ঞানী হয়, তাকে শুনতে থাকো, তোমার জ্ঞান বাড়বে! আর যে কথা বলছে, সে যদি মূর্খ হয় তাকে শুনতে থাকো – তোমার ধৈর্য্য বাড়বে! নিশ্চয়ই তোমার ধৈর্য্য অর্জন করা জ্ঞান অর্জন করার থেকে বেশি জরুরি!”

৪. নিজের সমালোচনা শুনলে পার্সোনালি না নেওয়া, কষ্ট না পাওয়া! বরং চিন্তা করে দেখা – আমার মাঝে কি আসলেই এই ভুল আছে।

শুধু সমালোচনা না, তাকে সবার সামনে খুব খারাপ ভাবে অপমান করা হয়েছে! তিনি অফেন্ডেড তো হলেননা, বরং এর উত্তরে তৎক্ষনাত দুই হাত তুলে সবার সামনে দুআ করলেন, “হে আল্লাহ! এই ব্যক্তি যদি সত্য বলে থাকেন, তাহলে তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও, আমার উপর দয়া করো এবং আমার তাওবা কবুল করে নাও! আর যদি এই ব্যক্তি যা বললেন, সেটা সত্য না হয়, তাহলে তার এ আচরণের জন্যে তুমি তাকে ক্ষমা করে দাও, তার উপর দয়া করো এবং তার তাওবা কবুল করে নাও!”

৫. প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাবার আগে সবাইকে মাফ করে দিয়ে অন্তর ক্লিন করে ঘুমানো।

৬. কোনো ব্যাপারে অন্তরে অহংকার ঢুকে যাচ্ছে কি না চেক করা। “যে ব্যক্তির অন্তরে অণু পরিমাণ অহংকারও আছে সে জান্নাতে যেতে পারবে না। আর যে ব্যক্তির অন্তরে অণু পরিমাণ ঈমানও আছে সে জাহান্নামে যাবে না।” হাক্বকে প্রত্যাখ্যান করা এবং মানুষকে তুচ্ছজান করাই হলো অহংকার। (সুনান আত তিরমিযী – ১৯৯৯, সহীহাহ (১৬২৬), মুসলিম।)

হাশরের ময়দানে সবচাইতে দরকার উত্তর চরিত্র

৭. যদি কারো উপর হিংসা হতে থাকে, সেই ব্যক্তির নাম ধরে তার সাফল্যের জন্যে বেশি বেশি দুয়া করা। এটাকে অনেক স্কলার হিংসার বেস্ট চিকিৎসা বলেছেন। একটা উদাহরণ দেই, ধরেন ক্লাসে আব্দুল্লাহ অনেক ভালো রেজাল্ট করলো, এতে উমরের হিংসা হচ্ছে। উমর কন্ট্রোল করতে পারছে না. তার মনে এটা নিয়ে কষ্ট লেগেই আছে যে, তার বন্ধু তার থেকে এতো ভালো অবস্থানে আছে, অথচ সেও অনেক পরিশ্রম করে।

উমর সেই দিন থেকে বেশি বেশি আব্দুল্লাহর জন্যে দুয়া করতে থাকলো, আল্লাহ যেন আব্দুল্লাহকে আরো বেশি সাফল্য দেন, রহমত এবং বরকত দেন! আলহামদুলিল্লাহ দুয়া করতে করতে কয় মাসের মধ্যেই উমরের অন্তর থেকে হিংসা দূর হয়ে গেলো। আল্লাহ সুবহানাতায়ালা উমর এবং আব্দুল্লাহ দুইজনকেই অনেক ভালো পজিশনে যাবার তাওফিক দিলেন।

৮. নিজের ভুল/গুনাহ -র একটা লিস্ট বানানো। নিজের ভুল নিয়ে বেশি ব্যতিব্যস্ত থাকা, যেন অন্যের ভুল নিয়ে গল্প করার কোনো সুযোগ না থাকে।

৯. হাশরের ময়দানে দাঁড়িপাল্লায় সবচেয়ে ভারী জিনিষ- এমন কোনো কথা কারো পিছনে কখনো না বলা, যেটা সে যদি সামনে থাকতো, তাহলে তার সামনে কখনোই বলা যেত না. এটাই গীবতের ক্লাসিক সংজ্ঞা। গীবত মৃত ভাইয়ের মাংস খাবার মতন জঘন্য গুনাহ (কুরআন: সুরাহ হুজুরাত)

১o. রাস্তার মধ্যখানে কখনো ময়লা না ফেলা! আমার পরিচিত একজনকে দেখতাম সে দেশে গেলে একটা ব্যাগ নিয়ে ঘুরতো। বলতো, দেশে তো সব জায়গায় Trash can পাওয়া যায় না, সারাদিনের ময়লা সে তার ঐ ব্যাগে রাখতো। ঘরে এসে ময়লার বিনে ফেলে দিতো। রাস্তার মাঝে থেকে কিছু সরিয়ে ফেলে দেওয়াটাও সাদাকাহ।

১১. বড় – ছোট সবাইকে নিয়ে ভালো চিন্তা করা. যারা আমাদের থেকে বয়সে বড়, তারা আমাদের থেকে বেশি বছর ধরে বেঁচে আছেন, কাজেই তারা আমার থেকে বেশি নেক কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। আবার যারা আমাদের থেকে বয়সে ছোট, তারা আমাদের থেকে কম গুনাহ করার সুযোগ পেয়েছে।

আরো পুড়ুন :: রোজা রাখার দলিল ও ফজিলত সমুহ

Loading spinner

Check Also

১০০টি ছোট ছোট হাদিস

১০০টি ছোট ছোট হাদিস (সংক্ষিপ্ত) | গুরুত্বপুর্ণ সহীহ হাদিসের সংকলন

Spread the love১০০টি ছোট ছোট হাদিস – হাদিস হলো ইসলামের মূল শিক্ষা ও জীবন পরিচালনার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *