স্বপ্নে নদী, সাগর কিংবা নদী ভ্রমণ
স্বপ্নে নদী, সাগর কিংবা নদী ভ্রমণ দেখা এবং এর ব্যাখা সমুহ বিস্তারিত যানতে সম্পুর্ণ বিষয়টি পড়ে দেখুন। মানুষ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন খোয়াব বা স্বপ্ন দেখে থাকে নিশ্চয় তার কোন কারণ বিদ্যমান থাকে। চলুন দেখে আসা যাক কি সেই কারণ।।
নদী দেখাঃ
নদীর ব্যাখ্যা সাধারণত ছোট-বড় আকৃতিগত পার্থক্য হিসাবে মানুষ দ্বারা করা হয়। কেউ স্বপ্নে দেখল নদীতে নেমে সে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। এর অর্থ-স্বপ্নে যে পরিমাণ ভীত-চিন্তাগ্রস্ত হয়েছে, বাস্তব জীবনেও সে তদ্রূপ ভয়-ভীতি ও চিন্তা-ভাবনার শিকার হবে।
একই ভাবে নদীর পানি যদি নোংরা ময়লাযুক্ত হয়, কিন্তু পান করেছে সে নির্মল পরিষ্কার পানিই, তাহলে সে মঙ্গলের অধিকারী হবে এবং শান্তি ও নিরাপদে তার জীবন কাটবে। কিন্তু নদীর পানি যদি নোংরা দেখে আর উক্ত পানিই সে পান করেছে মর্মে দেখতে পায়, তাহলে সে পানকৃত পানির সমপরিমাণ রোগ-ব্যাধি, দুঃখ-যাতনা, আপদ-বিপদের কবলে পতিত হবে।
ভিডিও >> ইসলামে দাড়ি রাখা ফরজ নাকি সুন্নত
যে ব্যক্তি নদীর পানি দ্বারা পরিতৃপ্ত হয়েছে মর্মে স্বপ্ন দেখতে পায়, সে ছোট-বড় নদীর ব্যাপ্তি ও বিস্তৃতি অনুপাতে কারো পক্ষ থেকে সম্পদের অধিকারী হবে। কোন ব্যক্তি নদী কিংবা সাগরে গোসল করছে মর্মে স্বপ্ন দেখল, অথচ তার মনে ভয়-ভীতি, অপমান-লাঞ্ছনা, বিচলিত ভাব ইত্যাদির কোনটাই অনুভব হয়নি, অথবা ঝর্ণায় (খালে) গোসল করছে দেখতে পেল, তাহলে এর ব্যাখ্যা হবে-তার দুঃখ-কষ্ট ও মর্মপীড়া দূরীভূত হবে। ব্যাধিগ্রস্ত হলে রোগমুক্তি ঘটবে, মনে প্রফুল্লতা আসবে। ঋণগ্রস্ত হলে আল্লাহ্ তাকে দায়মুক্ত করবেন। কোন প্রকার ভয়ের সম্মুখীন হলে আল্লাহ্ তাকে নির্ভয় করে দেবেন। অধিকন্তু কারাগারে নিক্ষিপ্ত হলে মহান আল্লাহ্ তার কারামুক্তির ব্যবস্থা করে দেবেন।
পবিত্র কালামে আল্লাহ্ পাক এরশাদ করেছেন :
أركض برجلك هذا مُعْتَسَلٌ بَارِدٌ وَشَرَابٌ o وَوَهَبْنَالَهُ أَهْلَهُ وَمِثْلَهُمْ
مَّعَهُمْ رَحْمَةً مِّنَّا وَذِكْرَى لِأُولِي الْأَلْبَابِ .
অর্থঃ তোমার পা দিয়ে তুমি ভূমিতে আঘাত কর। পান ও গোসল করার জন্য এটি নির্গত এক শীতল ঝর্ণা বিশেষ। আমার পক্ষ থেকে রহমতস্বরূপ এবং বুদ্ধিমানদের জন্য উপদেশস্বরূপ। তার পরিবারবর্গ ও তাদের ন্যায় আরও অনেক তাকে আমি দান করলাম। (সূরা সোয়াদ : আয়াত ৪২)
(বলা বাহুল্য, আলোচ্য ব্যাখ্যা মূলত এ আয়াতের মর্ম থেকে উৎসারিত। – অনুবাদক)
আরও পড়ুন >> সূরা ইখলাস ও সূরা কাহাফ পাঠের ফজিলতসমুহ
কেউ স্বপ্নে দেখল নদী পার হয়ে সে কূলে উঠে গেছে, তাহলে ব্যাখ্যা হবে তার ভয়-ভীতি, চিন্তা-কষ্ট দূর হয়ে যাবে। কিন্তু সেখানে যদি কাদামাটি থাকে কিংবা তরঙ্গলহর চলতে থাকে, তাহলে ব্যাখ্যা হবে-দীর্ঘ দিন উঠাবসা, চলাফেরা ছিল, ব্যবহারিক জীবনে সখ্যতা ছিল, এমন লোকের সাথে সে সম্পর্ক ছিন্ন করবে। এর পর হয় অপর কারো সাহচর্যে গমন করবে অথবা নিঃসঙ্গ অবস্থায় থাকবে।
সাগর দেখাঃ
স্বপ্নে সাগর দেখতে পাওয়া ফলত বৃহত্তর সাম্রাজ্যের পূর্ব- লক্ষণ। কিন্তু এই শর্তে তাতে ময়লা-আবর্জনা কিংবা ভয়াল তরঙ্গ থাকবে না। কেউ স্বপ্নে দেখল সে সাগরের এমন পানি পান করছে, যাতে ময়লা-আবর্জনা অথবা উত্তাল প্রবাহ আর ঢেউয়ের তান্ডব বলতে কিছুই নেই। তাহলে ব্যাখ্যা হবে, যে পরিমাণ পানি সে পান করেছে, তার সমপরিমাণ রাজত্ব বা ক্ষমতার অধিকারী হবে এবং পার্থিব জীবনে সে প্রাচুর্যময় অবস্থায় দিন কাটাবে। কিন্তু সাগর যদি ময়লা-আবর্জনাপূর্ণ, অন্ধকারাচ্ছন্ন কিংবা তরঙ্গময় ছিল বলে মনে হয়, তাহলে সে পরিমাণ দুঃখ-কষ্ট ও বিপদ-বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে।
কেউ স্বপ্নে দেখল সাগরের পানিতে সে ডুবে গেছে, তাহলে পানি স্বচ্ছ-পরিষ্কার হলে এটা তার রাষ্ট্রীয় কাজে বিভোর থাকার নিদর্শন। পক্ষান্তরে, পানি অপরিচ্ছন্ন হলে সে ব্যক্তি প্রাণঘাতী বিপর্যয়ের শিকার হবে। যদি কেউ স্বপ্ন দেখে সাগরবক্ষে চলাফেরা করছে, তাহলে ব্যাখ্যা হবে, পার্থিব জীবনে সে রাজা-বাদশাহ্ এবং দুনিয়াদার লোকদের উপর প্রবল ও বিজয়ী থাকবে। তদুপরি সে নিজ বাসস্থান পরিবর্তন করবে। আল্লাহ্ই ভাল জানেন।
আরও পড়ুন >> ১০০/- টাকার প্রাইজবন্ড ড্র ।। Prize Bonds Result
নৌকা দর্শনঃ
স্বপ্নে নৌকা দেখতে পাওয়া সাধারণত মুক্তির আলামত। তবে কোন সময় এর ব্যাখ্যা রাজা-বাদশাহ্র দরবারে পৌঁছার কারণ ও ওসীলা হিসাবে করা হয়। আবার কোন সময় এর ব্যাখ্যা হয় দুশ্চিন্তা-দুর্ভাবনায় পতিত হওয়া। কিন্তু পরিণামে শীঘ্রই তার মুক্তি নসীব হবে বলে আশা করা যায়।
কেউ স্বপ্নে দেখল-সাগরবক্ষে সে নৌকায় বসা রয়েছে। এর তা’বীর হবে উক্ত নৌকার ছোট-বড় ও প্রশস্ততা অনুপাতে সে রাষ্ট্রীয় কাজে অংশগ্রহণ করবে, কিন্তু পরবর্তী পর্যায়ে তা থেকে সে মুক্তি পেয়ে যাবে। যদি কেউ স্বপ্ন দেখে সে নৌকায় বসা রয়েছে আর তাতে পানি ঢুকে পড়েছে, এর তা’বীর হবে সে ব্যক্তি রোগ-ব্যাধি অথবা দুশ্চিন্তার শিকার হবে, কিংবা কারাগারে আটক হবে। কিন্তু এক পর্যায়ে এই সমস্ত বিপদ থেকে সে মুক্তি পাবে।
কেউ নৌকা থেকে বের হয়েছে মর্মে স্বপ্ন দেখল। এর অর্থ অচিরেই সে মুক্তি পাবে। নৌকা যদি শুকনায় আছে বলে দেখতে পায়, এর ব্যাখ্যা হবে সে দুশ্চিন্তা ও বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে। কিন্তু অনতিবিলম্বে তা থেকে উদ্ধার পেয়ে যাবে। কেউ দেখল—নৌকাটি কেবলা পানে বয়ে চলছে, এর ব্যাখ্যা হবে অতিশীঘ্র সে বিপদ-মুসীবতের ছোবল থেকে পরিত্রাণ পেয়ে যাবে।
নদী দর্শনঃ
মানুষ ডুবে যায় না এ জাতীয় ছোট খাল-নালা কার্যত নদীর সমার্থবোধক। তা দেখার অর্থ সুসংবাদ ও সচ্ছল জীবন। খালটি চাই সংকীর্ণ ধরনের হোক অথবা ব্যাপক ধরনের (সম্প্রসারিত) হোক। যদি ঘরের মধ্যে পানি ভেসে যাচ্ছে দেখতে পায়, তাহলে পানি মিষ্ট হলে আর যমীন থেকে উৎসারিত না হলে প্রাচুর্যময় জীবনের অধিকারী হওয়ার আলামত। যদি দেখে— ঘরে, দেয়ালে অথবা সাধারণত পানি উৎসারিত হয় না এহেন অনুপযোগী স্থান থেকে প্রবাহিত হয়ে পানির ফোয়ারা বয়ে চলেছে, তাহলে এর ব্যাখ্যা হবে-সে দুশ্চিন্তা, দুঃখ-বেদনা, ভয়-ভীতি ও কান্নার শিকার হবে।
অর্থাৎ, ঝর্ণার দুর্বলগতি ও প্রবাহের তীব্রতা অনুসারে এ সমস্ত বিপদ তথাকার বাসিন্দাদের উপর নিপতিত হবে। কারণ, ঝর্ণার পানির গতি যত তীব্র হবে, বিপদও সে অনুপাতে অধিক পরিমাণে দেখা দিবে। এমনকি স্থানীয় বাসিন্দাদের ভয়-ভীতি, কান্নাকাটি মাত্রা ছাড়িয়ে যাবে ।
আর পানি ময়লা-আবর্জনাযুক্ত হওয়া অবস্থায় ব্যাপার মারাত্মক আকার ধারণ করবে। কেউ যদি ঝর্ণা থেকে পানি পান করেছে মর্মে দেখতে পায়, তাহলে পানকৃত পানির পরিমাণ অনুসারে তার প্রতি দুঃখ-যাতনার আঘাত পতিত হবে। যদি কেউ ঝর্ণার পানি দিয়ে উযূ কিংবা গোসল করেছে দেখতে পায়, তাহলে এটা বিপদ ও চিন্তামুক্তির শুভ লক্ষণ এবং আগত সুসময়ের পূর্বাভাস। চিন্তাযুক্ত হলে আল্লাহ্ তা দূর করে দেবেন, ভয়-ভীতির শিকার হলে নিরাপত্তার আশ্রয় দেয়া হবে।