ইদানীং রাস্তাঘাটে চলতে একশ্রেণির দরিদ্র জিনিস বিক্রেতাকে প্রায়ই বলতে শুনি (বিশেষ করে বিকেল বা সন্ধ্যার দিকে)ভাই সারাদিন কিছু বেঁচতে পারিনি আমার এই বাদাম টা বা অন্যকিছু একটু বেশী করে নেন ভাই,তাহলে বাল বাচ্চার মুখে কিছু দিতে পারব।
ঘটনা নং-১
আজ সন্ধ্যায় এমনি এক ছেলের সাথে দেখা।আমার ছেলের বয়সী মানে ১৪/১৫ বা তারো কম হবে। বলল আংকেল আমার কাছে মুড়ি মাখানো আছে একটু খান না আংকেল। আমি বললাম রাস্তার খোলা মুড়ি মাখানো আমি খাইনা যে সোনা। এরপর সে বলল আংকেল সারাদিন কিছু বেঁচতে পারিনি আপনারা মুড়ি কিনলে যদি দুই কেজি চালের টাকা হতো তবে সেই টাকা দিয়ে চাউল কিনে আমি আর মা খেতাম। শুনে খুব দুঃক্ষ পেলাম। বললাম সোনা বাবা এখন তো অনেক রাত হয়ে গেছে আর কতক্ষণই বা তুমি ভাজা বিক্রি করতে পারবে? তোমার মুড়ি আমি খাবোনা, তবে এমনি তোমাকে কিছু টাকা দিয়ে সাহায্য করছি। বললাম দুই কেজি চাউলের দাম কত? ছেলেটি চটাস করে উত্তর দিলো ভাল চাউলের দাম ৫০ এর উপরে। আমি বললাম তোমরা কি ভালোটাই খাও। সে বলল জ্বি। তখন বললাম তাহলে তো তোমরা গরীবের দলের না। দুঃক্ষিত আমি তোমাকে সাহায্যে করতে পারছি না। ছেলেটি বলল না মানে সবসময় ভাল চাউল খাই তা না কম দামেরও খাই,আপনি কম দামের টাই দেন। এটার নাম কি লোভ?????
আরও পড়ুন >> কৃষি ব্যাংকে লাখ থেকে কোটি টাকার ডিপোজিট স্কীম
আরও পড়ুন >> ব্যায়াম কিংবা জিম না করে ওজন কমাবেন কিভাবে
ঘটনা নং ২
এবার একটা দূর্নীতির গল্প করবো। কয়েকদিন আগে এক বাদাম বিক্রেতা বলল ভাই সারাদিন তেমন বেঁচতে পারিনি একটু বেশী করে নেন না ভাই বাজার সদাই না করলে আজ ছেলেমেয়ে নিয়ে কি খাবো? যদিও প্রয়োজন নেই তাও বললাম ১ কেজি দেন। মাপার সময় লক্ষ্য করলাম তার দাঁড়িপাল্লায় সমস্যা আছে। পুরো ১ কেজি মাপার পর বললাম তোমার পাল্লা কি ঠিক আছে? সে বলল একদম ঠিক। তাকে বললাম তুমি খালি পাল্লা ঝুলাওতো!!! দেখলাম একদিকে অনেক ঝুলে আছে। বললাম তোমার পাল্লায় সমস্যা আছে। আমি অন্য বাটখারায় মাপবো। সে বলল ঠিক আছে আমি একটু ধরে দিচ্ছি। আমি বললাম, না মেপেই নেবো। সে বলল থাক বাদাম নিয়েন না। আমি বললাম কেনো তোমার না টাকার দরকার!!
ঘটনা নং ৩
এবার করবো একটি অসৎ মতলবের কাহিনী। আজ আমি নিজে নার্সারিতে গেছি গাছ কিনতে। অনেক গাছ দরদাম করে নেবার পর দাম হিসাবের সময় নার্সারির মালিক ৪ টা গাছের দাম( যার দাম মাত্র ১৪০ টাকা) হিসেব করতে ভুলে গেলো। হিসেব কমপ্লিট হবার পর নার্সারির মালিক বলল যদি দুই একটা দাম বাদ যায় তবে পরে দিয়েন। আমি বললাম পরে টরে হবে না, এখনই আবার হিসেব করেন।তিনি বললেন থাক দরকার নাই। আমি গাছ গুলো ভ্যানে তুলছি আর ভাবছি আজ সকালে ফকিরকেই ভিক্ষা দিয়েছি আড়াই শো টাকার মতো। অথচ আমার মধ্যেও অসততা কাজ করছে,সামান্য ১৪০ টাকা আমাকে অসৎ বানিয়ে দেবে? বিবেকের দংশনে ভুগে নিজেকে ধিক্কার দিলাম আর নার্সারির মালিককে বললাম এই যে এই চারটি গাছের দাম হিসাব করেননি। সে বলল সমস্যা নাই, বাড়িতে চলে গেলেও আমি জানি আপনি দাম দেবেন। আমার উপর তার অগাধ বিশ্বাস, কিন্ত আমিও যে বিবেকের কাছে অপরাধী যা আমাকে কুরে কুরে আজ সারাদিন খেয়েছে।
জীবন থেকে নেওয়া: আশিকুজ্জামান জুয়েল (Habibun Nabi Md. Ashiqujjaman)