নামাজের দুই সিজদার নিয়ম
নামাজের ওয়াজিবগুলোর মধ্যে অন্যতম দুটি ওয়াজিব কাজ হচ্ছে রুকু থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়ানো এবং দুই সিজদাহর মাঝে সোজা হয়ে বসা। আমরা জানি নামাজে কোনো ওয়াজিব ছুটে গেলে সহু সিজদাহ করতে হয়। অন্যথায় নামাজ নষ্ট হয়ে যায়। আমরা অনেকেই রুকু থেকে কোনো রকম কোমর উঠিয়েই সিজদায় চলে যাই। প্রথম সিজদাহ থেকে উঠে সোজা হয়ে স্থির হয়ে বসার আগেই দ্বিতীয় সিজদায় চলে যাই।
আমরা যারা নিয়মিত এরকম করে নামাজ পড়ছি আল্লাহই ভাল জানেন আমাদের সকল নামাজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কিনা। আমরা যারা কষ্ট করে নামাজ পড়ছিই, তারা একটু সচেতন হলেই এই ভয়ংকর গুনাহ থেকে বেঁচে যেতে পারি। এই দুটি ওয়াজিব আদায়ের জন্য ৩ থেকে ৪ সেকেন্ড সময় ব্যয় করাই যথেষ্ট! তবুও আমরা তাড়াহুড়া করি। আল্লাহর রাসূলের (সা:) সামনে এভাবে কেউ নামাজ পড়লে তিনি ঐ নামাজ আবার পড়ার জন্য নির্দেশ দিতেন।
যারা এরকম ত্বরিঘড়ি করে নামাজ পড়ে তাদের ব্যাপারে রাসূল (সা) বলেছেনঃ
“এটা মুনাফিকের নামায, এটা মুনাফিকের নামায, এটা মুনাফিকের নামায। সে বসে বসে সূর্যের অপেক্ষা করতে থাকে। অবশেষে যখন সূর্য শয়তানের দু’টি শিঙের মধ্যবর্তী স্থানে (অস্ত যাওয়ার কাছাকাছি সময়ে) পৌঁছে, তখন (ত্বরিঘড়ি) উঠে চারটি ঠোকর মেরে নেয়; তাতে সে সামান্যই আল্লাহকে স্মরণ করে থাকে।” (মুসলিম ১৪৪৩নং)
দ্রুত রুকু সিজদাহ
অন্য হাদীসে এরকম দ্রুত রুকু সিজদাহকারীকে তুলনা করা হয়েছে রক্তে কাকের ঠোকর মারার সাথে।
রাসূল (সা) যখন ইমাম হয়ে নামাজ পড়াতেন তখন রুকু থেকে দাঁড়ানোর পর সাহাবিরা মনে করতেন আল্লাহর রাসূল (সা) হয়ত সিজদায় যেতে ভুলেই গেছেন! অর্থাৎ তিনি রুকু থেকে দাঁড়িয়ে অনেক লম্বা সময় ধরে দুয়া পড়তেন। আমাদের অন্তত “সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ – রব্বানা লাকাল হামদ” পুরো বাক্য ধীরস্থির ভাবে উচ্চারণ করকে আস্তেধীরে সিজদায় যাওয়া।
দুই সিজদার মাঝে রাসূল (সা) অত্যন্ত চমৎকার একটা দুয়া পড়তেন। এত সুন্দর একটা দুয়া! এই দুয়ার মাঝে দুনিয়া আখিরাতের সকল চাওয়াই চলে আসে।
দুই সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠকের দো‘আ-
আল্লা-হুম্মাগফির লী,ওয়ারহামনী, ওয়াহদিনী,ওয়াজবুরনী,ওয়া‘আফিনি,ওয়ারযুক্বনী,ওয়ারফা‘নী।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, আমার প্রতি দয়া করুন, আমাকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন, আমার সমস্ত ক্ষয়ক্ষতি পূরণ করে দিন, আমাকে নিরাপত্তা দান করুন, আমাকে রিযিক দান করুন এবং আমার মর্যাদা বৃদ্ধি করুন
(হাদীসটি নাসাঈ ব্যতীত সুনান গ্রন্থগারগণ সবাই সংকলন করেছেন। আবূ দাউদ, ১/২৩১, নং ৮৫০; তিরমিযী, নং ২৮৪, ২৮৫; ইবন মাজাহ, নং ৮৯৮। আরও দেখুন, সহীহুত তিরমিযী, ১/৯০; সহীহ ইবন মাজাহ ১/১৪৮)
আরো একটি ছোট দুয়া হাদীসে পাওয়া যায়। উপরের দুয়াটা মুখস্থ হবার আগ পর্যন্ত ছোট দুয়াটিও পড়ে যেতে পারি।
অর্থঃ হে আমার রব্ব! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। হে আমার রব্ব! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।
(আবূ দাউদ ১/২৩১, নং ৮৭৪; ইবন মাজাহ নং ৮৯৭। আরও দেখুন, সহীহ ইবন মাজাহ, ১/১৪৮)
চলুন পরবর্তী সকল নামাজে আরো কয়েক সেকেন্ড বেশি ব্যয় করে এই দুয়াগুলো নিয়মিত পড়ি। দুয়াগুলো পড়লে আস্তে আস্তে আমাদের নামাজে সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে। দুয়াগুলোর অর্থ বুঝে পড়লে নামাজে মনযোগ ও আন্তরিকতা বাড়বে। নামাজে তখন প্রকৃত ভাবেই আল্লাহর স্মরণের মাধ্যম হয়ে উঠবে। আল্লাহ আমাদের সকলের নামাজকে সুন্দর করার তাওফিক দান করুন। আমীন।