মৃত্যুঘাতি করোনা ভাইরাসের কারনে দিন দিন বেড়েই চলেছে মৃতের সংখ্যা। করোনা থেকে
বাঁচতে বেশ কিছু জিনিস মেনে চলা জরুরী।আসুন করোনার করনীয়ও এর আদ্যোপান্ত জেনে নেওয়া যাক।
চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনা ভাইরাস ইতোমধ্যে কেড়ে নিয়েছে প্রায় ১ হাজার
জনের এর উপরে প্রাণ।সংক্রমিত হয়েছে তিন হাজারের বেশি মানুষের দেহে।২০০২ সালে সার্স এবং
২০১২ সালের মার্সের মতই এ নভেল করোনাভাইরাস একই পরিবারের সদস্য, যারা ছড়াতে পারে
মানুষ থেকে মানুষে।
মধ্য চীনের উহান শহরে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর করোনা ভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়।
নিউমোনিয়ার মত লক্ষণ নিয়ে নতুন এ রোগ ছড়াতে দেখে চীনা কর্তৃপক্ষ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সতর্ক করে।
এরপর ১১ জানুয়ারি প্রথম একজনের মৃত্যু হয়।
ঠিক কীভাবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়েছিল- সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত নন বিশেষজ্ঞরা।
তবে তাদের ধারণা, মানুষের দেহে এ রোগ এসেছে কোনো প্রাণী থেকে। তারপর মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়েছে।
এর লক্ষণ শুরু হয় জ্বর দিয়ে, সঙ্গে থাকতে পারে সর্দি, শুকনো কাশি, মাথাব্যথা, গলাব্যথা ও শরীর ব্যথা।
সপ্তাহ খানেকের মধ্যে দেখা দিতে পারে শ্বাসকষ্ট। সাধারণ ফ্লুর মতই হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়াতে পারে এ
রোগের ভাইরাস।
করোনাভাইরাস মূলত শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায়। লক্ষণগুলো হয় অনেকটা নিউমোনিয়ার মত। কারও ক্ষেত্রে
ডায়রিয়াও দেখা দিতে পারে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো হলে এ রোগ কিছুদিন পর এমনিতেই সেরে যেতে
পারে। তবে ডায়াবেটিস,কিডনি,হৃদযন্ত্র বা ফুসফুসের পুরোনো রোগীদের ক্ষেত্রে মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে
পারে। এটি মোড় নিতে পারে নিউমোনিয়া,রেসপাইরেটরি ফেইলিউর বা কিডনি অকার্যকারিতার দিকে। পরিণতিতে
ঘটতে পারে মৃত্যু।
আরও পড়ুন >> নামাজের ভুল সমুহ । জামাতে নামাজ পড়ার নিয়ম
আরও পড়ুন >> ট্রাস্ট ব্যাংক বাড়ী নির্মানের জন্য ১০ লক্ষ টাকা দিচ্ছে
মানুষের দেহে ভাইরাস সংক্রমণের পর লক্ষণ দেখা দিতে পারে এক থেকে ১৪ দিনের মধ্যে। কিন্তু লক্ষণ স্পষ্ট
হওয়ার আগেই এ ভাইরাস ছড়াতে পারে মানুষ থেকে মানুষে। আর এ কারণেই চীনে এ রোগের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ
করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
চীনের বাইরে এ পর্যন্ত ১২টি দেশে নোভেল করোনা ভাইরাস ছড়ানোর তথ্য পাওয়া গেছে। তবে বাংলাদেশে
এখনও এ রোগে আক্রান্ত কাউকে পাওয়া যায়নি।
করোনা ভাইরাসের কোনো টিকা বা ভ্যাকসিন এখনো তৈরি হয়নি। ফলে এমন কোনো চিকিৎসা এখনও
মানুষের জানা নেই,যা এ রোগ ঠেকাতে পারে। ভাইরাসটির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপায় হল,
যারা ইতোমধ্যেই আক্রান্ত হয়েছেন বা এ ভাইরাস বহন করছেন- তাদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা।
দেশে যদি এ ভাইরাস ছড়িয়েই পড়ে, তাহলে কীভাবে নিরাপদ থাকার চেষ্টা করা যায় সে বিষয়ে কিছু পরামর্শ
দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
১. ঘরের বাইরে যখন যাবেন গ্লাভস বা হাতমেোজা পড়ুন। বাসে বা যে কোনো গণপরিবহনেও হাত ঢেকে রাখুন
গ্লাভসে।যদি কখনও সামাজিক প্রয়োজনে হাত মেলাতে বা খাওয়ার জন্য গ্লাভস বা হাতমেোজা খুলতেও হয়,
ওই হাতে মুখ চোখ নাক স্পর্শ করা যাবে না। আবার গ্লাভস পরার আগে অবশ্যই গরম পানি আর সাবান দিয়ে
ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে হাত।
২. যে গ্লাভস বা হাতমোজা পড়ে একবার বাইরে ঘুরে এসেছেন, খুব ভালোভাবে পরিষ্কার না করে তার দ্বিতীয়বার
ব্যবহার করবেন না। ভেজা বা স্যঁতস্যাতে গ্লাভস বা হাতমোজা ব্যবহার করবেন না।
৩. ধুলো আর ধোঁয়া থেকে বাঁচতে অনেকেই মাস্ক ব্যবহার করেন। তবে ঘরের ভেতরে বা বাইরে এ ধরনের মাস্ক
করোনাভাইরাস থেকে খুব বেশি সুরক্ষা হয়ত দেবে না। কাপড় বা কাগজের তৈরি এসব মাস্ক কয়েকবার ব্যবহার
করলেই নষ্ট হয়ে যায়। একই মাস্ক দিনের পর দিন ব্যবহার করলে তা বিপদের কারণ হতে পারে। তারচেয়ে বরং
মাস্ক না পরাও ভালো।
৪. কাশি বা হাঁচির সময় মুখ ও নাক ঢেকে রাখতে হবে। টিস্যু ব্যবহার করতে হবে, যা অবশ্যই একবার
ব্যবহারের পর ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে।
৫. কেউ যদি কাশতে থাকেন বা নাক টানতে থাকেন, কারও মধ্যে যদি সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে
তার অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করা উচিৎ, অন্তত অন্যদের নিরাপত্তার স্বার্থে।
৬. করোনা ভাইরাস যদি ছড়িয়েই পড়ে, নিরাপদ থাকার একটি চেষ্টা হতে পারে ভিড় এড়িয়ে চলা এবং অন্যদের
থেকে কিছুটা দূত্ব বজায় রেখে কথা বলা, সেটা হতে পারে দেড় ফুট দূরত্ব। হাত মেলানো বা কোলাকুলি থেকে
সাবধান,সেটা সবার ভালোর জন্যই।
৭. বাসায় টয়লেট আর কিচেন থেকে পুরনো সব তোয়ালে সরিয়ে দিতে হবে প্রত্যেকের জন্য আলাদা তোয়ালে।
সবাই তার জন্য নির্দিষ্ট তোয়ালেই ব্যবহার করবে, অন্যদেরটা কথনও স্পর্শ করবে না। সব তোয়ালে নিয়মিত
ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। ভেজা বা ড্যাম্প তোয়ালে হতে পারে ভাইরাসের বাসা, সুতরাং সাবধান।
৮. বাসার যে জায়গাগুলোতে সবচেয়ে বেশি মানুষের হাত পড়ে, তার মধ্যে একটি হল দরজার নব।
করোনাভাইরাসের ঝুঁকি যখন আশপাশে, তখন ডোরনব ব্যবহারেও সাবধান। সম্ভব হলে গ্লাভস পরে দরজা
খোলা বা বন্ধ করার কাজটি করতে হবে। তা না হলে অন্তত ভালো ভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে হাত। একই
ধরনের সতর্কতা দেখাতে হবে সিঁড়ির রেলিং, ড্রয়ার, কম্পিউটার কি-বোর্ড আর মাউস, ল্যাপটপ, কলম,
বাচ্চাদের খেলনা- এরকম যে কোনো কিছুর ক্ষেত্রে যা মানুষ হাত দিয়েই ব্যবহার করে।
৯. আপনি যদি সব সময় নিজের জিনিসপত্রই ব্যবহার করেন, সেগুলো যদি আর কেউ কখনও স্পর্শ না করে,
তাহলে মোটামুটি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। তবে যদি কখনও অন্যের ব্যবহৃত সামগ্রী আপনাকে ধরতে হয় কিংবা
আপনার কিছু অন্যকে ব্যবহার করতে দিতে হয়, অবশ্যই ওই হাত ধোয়ার আগে নাখ, মুখ বা চোখ ছোঁবেন না।
১০. মাংস, ডিম বা শাকসব্জি ভালোভাবে ধুয়ে এমনভাবে রান্না করতে হবে যাতে কোনোভাবে কাঁচা না থাকে।
সেই সঙ্গে প্রচুর তরল পানের পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকরা।
তথ্যসূত্র: ফরেইন পলিসি ম্যাগাজিন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ডব্লিউএইচও, ডাক্তার বাড়ি