ফুটানী মেরে বিয়ে। মজার জীবন কাহিনী
আমরা অনেকেই যখন ১৮/২০ হাজার টাকা বেতন পেতাম, তখনকার অবস্থা আর আজ লক্ষ টাকা আয় করেও একই অবস্থানে ঘুরপাক খাচ্ছি! কেননা খরচটা গেছে বেড়ে; বেড়েছে পণ্য আসক্তি তথা পণ্য দাসত্ব। আর বোকা মানুষেরা খুব সহজেই এমন ফাঁদে পা রাখছেন।
যে টাকা আপনার নয়, ক্রেডিট কার্ডের নামে সেই টাকা ইচ্ছেমতো খরচ করছেন। বিয়ে করবেন? কিস্তিতে মিলছে সব ফারনিচার। হানিমুনে যাবেন? বাকিতে বালি যান; টিকেটও পাবেন বাকিতে। একটা ক্যামেরা লাগবে? কেনেন বাকিতে? কিস্তি তো আছে… অল্প অল্প করে পরিশোধ করলেই চলবে!
আপনি বেতন পান ৭০,০০০ টাকা, কিন্তু ফুটানী মেরে বিয়ে করতে গিয়ে ধার করেছেন চার লাখ। এবার বালি যাচ্ছেন বাকিতে। মাসে কিস্তি ৭,০০০ টাকা মাত্র। বাসায় টিভি এনেছেন; ওখানেও কিস্তি ৫,০০০ টাকা৷ বাসাভাড়া দেন ৩০,০০০ টাকা। মাসে দু’-চারবার দামি রেস্টুরেন্টে খেয়ে ফেসবুক-এ পোস্ট দিয়ে ফুটানী মারেন। কিন্তু ঋণের টাকা কখনো পুরোপুরি শোধ হয় না। কিভাবে টাকা শোধ করবেন- এই নিয়ে সব সময় দুশ্চিন্তায় মন ভালো থাকে না; স্বস্তি নাই অন্তরে।
সামনে গরমকাল, ঘরে এসি লাগাতে হবে।
সামনে গরমকাল, ঘরে এসি লাগাতে হবে। মাথায় ঢুকে গেছে- এসিই আপনার চোখে ঘুম এনে দেবে! বাকিতে এসি কিনলেন… বোঝা আরেকটু বাড়লো। বেতনের টাকা বাড়ি ভাড়া আর কিস্তি দিতে দিতে শেষ। একপর্যায়ে কিস্তি আর কার্ড দিয়েও কুলাচ্ছে না, এবার ধার করতে হবে।
নিজের ইমেজের বারোটা বাজিয়ে ২০ দিন পর শোধ করার শর্ত নিলেন ধার, কিন্তু ২০ দিন পেরিয়ে ২২ দিন হতে চলল… পাওনাদার বন্ধু ফোন দিতেই ভাবতে লাগলেন- কী মিথ্যা অজুহাত দেওয়া যায়? বললেন কিছু একটা.. হয়ে গেল আপনার মিথ্যা বলায় হাতেখড়ি- মতিঝিল গেলে বলেন পীরেরবাগ, ঠিক পলাতক আসামীর মতো।
আজ আবার ছেলেটার জন্মদিন। আবার ফুটানী মারার চেষ্টা, নিজের যা নেই, তা নিয়ে বড়াই করা ও শো অফের চেষ্টা । যে টাকা আপনার না, যে টাকা আপনি আয় করেননি, তাই খরচ করছেন… কী যে ভয়ানক এই চক্র, তা কেবলমাত্র ভুক্তভোগীরাই জানেন।
এতো টাকা আয় করেন, টাকা যায় কই? মনে তো কোনো শান্তি নেই, আছে শুধু টেনশন। এই টাকা কিভাবে শোধ করবেন- সেই চিন্তা প্রতিনিয়ত আপনাকে অসুস্থ করে তুলছে। অনেক বাবা-মা সন্তানের জন্য কিছু করার তালে ফ্ল্যাট কেনাকে জীবনের লক্ষ্য বানিয়ে ফেলেন। বাবা-মা হিসেবে সন্তানকে ফ্ল্যাট নয়, ভালো মানুষ হওয়ার লক্ষ্য দিতে হবে। আপনি নিজেই যদি তাকে ফ্ল্যাট করে দেন, তাহলে সে আর করবেটা কী?
মাছ যখন বড়শি দিয়ে ধরা হয়, নেড়ে-চেড়ে আঁধার খেতে দেয়… গলায় বিঁধে গেলে আর নিস্তার নাই। খাঁচার পাখি ভালো খেতে পারলেও জীবনটা কাটে বন্দীদশায়। তেমনি ঋণ যে করে, তারও নিজের ওপর আর কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না! আপনি কি মনে করেন- ৫০ বছর পরের প্রজন্ম আপনার মতো কিস্তি জর্জরিত, ঋণগ্রস্থ মানুষকে মনে রাখবে?
আমেরিকার মানুষ এখন তিন ট্রিলিয়ন ডলার ঋণে ডুবে আছে। বাংলাদেশে যারা বছরে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা আয় করেন, তাদের অধিকাংশই সব সময় কমপক্ষে ৩-৪ লক্ষ টাকার ঋণী! এ তো গেল ব্যক্তি পর্যায়ের তথ্য। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা তো আরো করুণ।
যে কোম্পানি ব্যাংক থেকে ইতোমধ্যে ৫০০ কোটি টাকা ঋণ করেছে, সেই টাকা শোধ করার আগেই অন্য নামে ৭০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে বসে আছে! ভাবখানা এমন যে, তারা সবাই অমরত্ব পেয়ে গেছেন; ঋণ পরিশোধের জন্য অফুরন্ত সময় তাদের হাতে আছে! অবশ্য বাংলাদেশে এখন আর কেউ সময়মতো ঋণ শোধ করেন না, সামর্থ্য থাকলেও ইচ্ছে করেই খেলাপি হন! কেননা খেলাপি হলেই সুদের হার কমিয়ে দেওয়া হয়!
বাংলাদেশের সকল ব্যাংক একযোগে খেলাপি ঋণ আদায় শুরু করলে আমিই হতাম বাংলাদেশের সর্বচ্চ ধনীদের একজন। কেননা আমার কোনো ঋণ নেই। আপনিও আয় বুঝে ব্যয় করুন। অপচয় ও ফুটানী ধর্মীয় দৃষ্টিতেও নিষিদ্ধ। ভালো হয় নিত্য দিন দানের অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে। কেননা দাতার হাত থাকে ওপরে আর ঋণ গ্রহীতার হাত সব সময় নিচেই থাকে!