নানান দেশের নানান ভাষা বিনা স্বদেশী ভাষা মিটে কি আশা – ভাবসম্প্রসারণ Class-9, 10, SSC & HSC
পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের কাছে তার মাতৃভাষা শ্রেষ্ঠ। অন্য ভাষা যতই সহজ হোক না কেন, মাতৃভাষা ছাড়া মনের ভাব উত্তমরূপে আর কোনো ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।
মাতৃভাষা যে-কোনো মানুষের অস্তিত্ব ও আত্মপ্রকাশের অবিকল্প একটি বাহন। বিদেশি ভাষায় যতই দক্ষতা অর্জন করুক, মাতৃভাষার ন্যায় এমন সাবলীলভাবে মনের ভাব প্রকাশ করা বিদেশি ভাষায় সম্ভব নয়। মাতৃভাষায় মনের ভাব প্রকাশ করতে মানুষ যতটা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে এবং আনন্দ পায়, অন্য ভাষায় তা অসম্ভব। কারণ মাতৃভাষার সঙ্গে রয়েছে তার আত্মিক সম্পর্ক। এ সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। তার আনন্দ-বেদনা, আবেগ-আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন-কল্পনার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে মাতৃভাষা। মাতৃভাষা মানুষের অস্তিত্বের মহৎ অবলম্বন । তা দেশ ও জাতির সঙ্গে গড়ে তোলে অবিচ্ছেদ্য সাংস্কৃতিক বন্ধন। মাতৃভাষায় কথা বলে যে আনন্দ, আত্মতৃপ্তি আর প্রশান্তি অনুভব করা যায়, বিদেশি ভাষায় কথা বলে হৃদয়ের সেই তৃষ্ণা কিছুতেই মেটে না। মাতৃভাষাই মানুষের মত প্রকাশের সর্বোত্তম বাহন। মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা, বিমূর্ত চেতনা মাতৃভাষার মাধ্যমেই সঠিক প্রতিমূর্তি লাভ করে। বিদেশি ভাষায় জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা করে মানুষ খ্যাতি অর্জন করতে পারে কিন্তু মাতৃভাষাই তার অস্তিত্বের আসল পরিচয়।
আরো পড়ুন :: স্বপ্নে জান্নাত ও জাহান্নাম দেখলে কি হয়?
পড়াশোনা নিয়ে উক্তি | মোটিভেশনাল নিয়ে 100 টি সেরা উক্তি
AI Generate ভাবসম্প্রসারণ নানান দেশের নানান ভাষা
এই প্রবাদটি মাতৃভাষার অপরিহার্যতা ও গুরুত্বকে তুলে ধরে। পৃথিবীতে নানা দেশের নানা ভাষা থাকলেও, নিজের মাতৃভাষার মতো স্বাচ্ছন্দ্য ও তৃপ্তি অন্য কোনো ভাষায় পাওয়া যায় না।
মানুষের চিন্তা-ভাবনা, আবেগ-অনুভূতি, সুখ-দুঃখের প্রকাশ সবচেয়ে সহজ ও স্বাভাবিকভাবে ঘটে মাতৃভাষার মাধ্যমে। শিশু জন্মের পর প্রথম যে ভাষা শেখে, তা তার মায়ের ভাষা। এই ভাষার সঙ্গে তার আত্মিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে, যা আজীবন অটুট থাকে। বিদেশি ভাষা শিখে মানুষ পণ্ডিত হতে পারে, কিন্তু মনের গভীর অনুভূতি প্রকাশে মাতৃভাষার বিকল্প নেই।
মাতৃভাষা শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়, এটি একটি জাতির সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও পরিচয়ের বাহক। যে জাতি তার মাতৃভাষাকে সম্মান করে, চর্চা করে, সেই জাতি সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ হয়। বাংলা ভাষার জন্য ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে বাঙালি জাতি রক্ত দিয়েছে, যা মাতৃভাষার প্রতি তাদের গভীর ভালোবাসার প্রমাণ।
অতএব, “নানান দেশের নানান ভাষা, বিনা স্বদেশী ভাষা মিটে কি আশা” প্রবাদটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় মাতৃভাষার গুরুত্ব ও অপরিহার্যতা। মাতৃভাষার চর্চা ও সংরক্ষণে আমাদের সক্রিয় ভূমিকা পালন করা উচিত, যাতে আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে সজীব ও সমৃদ্ধ থাকে।