অচেনা মুখ বেহুলা অপ্রকাশিত প্রেমের কাহিনী

Spread the love

অচেনা মুখ বেহুলা অপ্রকাশিত প্রেমের কাহিনী – দেখে প্রথমেই একটু যেন অদ্ভূত মনে হয়েছিল আমার। কেন যে হয়েছিল তা তখন অত বিশ্লেষণ করবার সময় ছিল না। চারিদিকে রোগী ঘিরে ছিল আমাকে। যে-সব রোগী-রোগিণী প্রায়ই আসে আমার কাছে, মেয়েটি সে দলের নয়। অচেনা মুখ। দেখেই একটু চমক গেগেছিল, সে সুন্দরী বলে নয়, কমবয়সী বলেও নয়, তার চোখে-মুখে কি যেন একটা ছিল যা অস্বাভাবিক, যা দৃষ্টি আকর্ষণ করে। পরে জেনেছি চাপা প্রতিহিংসার আগুন ওর অন্তরে জ্বলছিল। তারই হলকা আমি দেখতে পেয়েছিলাম ওর মুখে। মনের ভিতর যে আগুন জ্বলে তা গোপন করা যায় না ।

চুলে তেল নেই। রুক্ষ চুলগুলো অসংখ্য সপশিশু বেশ জড়াজড়ি মেয়েটি রোগারোগা, রঙ কালো, চোখ-মুখের হাব-ভাব মন্দ না হলেও নিখুঁত নয়। একটা বন্ধ বর্বরতার ছাপ যেন আছে। কোঁকড়ান এত কোকড়ান যে মনে হয় করে ফণা তুলে আছে। অধরে অতি সামান্য একটু মুচকি হাসি। তা বাড়েও না, কমেও না। মনে হয় হাসিটা যেন বন্দিনী হয়ে আছে।

আমার কাছে মেয়েটি এসেছিল ঘারের ওষুধ নিতে। মাথার ঘায়ের ওষুধ। মেয়েরা যেখানে সিঁদুর পরে ঠিক সেইখানে একজিমার মত হয়েছিল, সমস্ত সীমন্তটা জুড়ে। পরীক্ষা করে দেখলাম কালো-কালো চাপড়া-চাপড়া মামড়ির মত একটা জিনিস একজিমাটাকে ঢেকে রেখেছে। সেটা পরিষ্কার করে তলার ঘা-টাকে পরীক্ষা করলাম। একজিমার মত চুলকানিই একটা, কিন্তু তার চেহারাটা বেশ রাগী রাগ, আমাদের ডাক্তারী ভাষায় অ্যাংগরি লুকিং। আমার সন্দেহ হ’ল আলকাতরা জাতীয় কোন জিনিস মেয়েটি ওর ওপর লাগিয়েছে বোধ হয়। একজিমা সারাবার জন্যে অনেকে লাগায় । বললাম, “ঘায়ের উপর আলকাতরা লাগিও না । ”

আরও পড়ুন >> সেরা ৫০ টি বিশ্বাসঘাতকতা নিয়ে উক্তি । Top 50 Betrayals

 

মেয়েটির মুখের মুচকি হাসি কমলও না, বাড়লও না। চোখের পাতা দুটি কেবল বার কয়েক ঘন ঘন নড়ল। একটি কথা বলল না সে। যে মলমটা ছিলাম সেইটে নিয়ে চলে গেল। চার-পাচদিন মেয়েটির সঙ্গে আর দেখা হয়নি। একদিন বিকেলবেলা গঙ্গার ধার দিয়ে অতি সন্তর্পণে মোটর চালিয়ে আসছি, রাস্তাটা খুব খারাপ, আশেপাশে ঝোপঝাড়ও প্রচুর, হঠাৎ দেখতে পেলুম মেয়েটি অশ্বত্থগাছতলায় দাড়িয়ে আছে, একটা ভাঙা কুঁড়েঘরের পাশে। জেলেরা যখন মাছ ধরতে আসে, তখন ওই থাকে । এখন খালি, ভেঙে চুরেও গিয়েছে ।
ওকে দেখে গাড়ি থামালাম আমি। মনে হ’ল ওর মাথার যা দিয়ে রক্ষ পড়ছে।

*এখানেই থাক না কি তুমি ? *মাথা নেড়ে ভাঙা কুঁড়েঘরটা দেখিয়ে দিলে । বললাম, “ওই ভাঙা ঘরে থাক কি করে ?”কোন উত্তর দিলে না। মুখের মুচকি হাসি তেমনি স্থির হ’য়েই রইল। “তোমার বাড়ি কোথা ?”
চুপ করে রইল। তার চোখের দৃষ্টিতে আগুনের ঝলক যেন দেখতে পেলাম একটু। ভাবটা—আমার সম্বন্ধে এত কৌতূহল কেন তোমার, যেখানে যাচ্ছ যাও না। ((অচেনা মুখ বেহুলা))

একটু চুপ করে থেকে কিন্তু জবাব দিলে, “বৈরিয়া গায়ে।”
“সে আবার কোথা ?”
“আমদাবাদের কাছে”
“কোন্ জেলা ?”
*পূর্ণিয়া”
* মাথার ঘায়ে মলম লাগিয়েছিলে ?”
“রোজ লাগাই”
“তবু ত রক্ত পড়ছে দেখছি”
চুপ করে রইল।
*আবার এসো আমার ডিসপেন্সারিতে। পরবার জায়গায় একজিমা হ’ল কী করে? রক্ত পড়ছে”
ভালো করে দেখব।
ঠিক সিঁদুর আশ্চর্য ও চুলকেছিলে নাকি ?
মেয়েটি কিছু বলল না। হঠাৎ আমার মনে হ’ল রক্তটাই সিন্দুরের স্থান অধিকার করেছে যেন। মনে হ’ল, যে জেলেরা প্রতিবার এখানে মাছ ধরতে আসে, মেয়েটি তাদেরই বোধ হয় আত্মীয়া। তাই ওই কুঁড়েটা অসঙ্কোচে দখল করেছে। যদিও মেয়েটির চোখে-মুখে একটা বিরুদ্ধভাব সজাগ হ’য়ে ছিল, তবু আমি জিজ্ঞাসা করলুম, “তোমরা কি ? জেলে না কি?”
মেয়েটি ঘাড় ফিরিয়ে খানিকক্ষ
করে রইল। তার পর বলল, “না,
আমরা সাপুড়ে”
মেয়েটি মলম নিতে আমার কাছে আর আসে নি। দিন সাতেক পরে একটি ছেলে এসে আমায় খবর দিলে গঙ্গার ধারে অশ্বত্থতলায় একটি মেয়ে অজ্ঞান হয়ে আছে। তাকে নিয়ে আসব কি ? আমি
সেই মেয়েটি। খুব জ্বর হয়েছে। মাথায় ঘা-টা
হাসপাতালে খোঁজ করলাম, বেড খালি নেই।
নিজেই গেলুম। গিয়ে দেখি,
দগদগে হ’য়ে উঠেছে আরও।

Google News বিস্তারিত জানতে Google News অনুসরণ করুন

তখন ছেলেদের বললাম, “ওই
কুঁড়েঘরটাতেই নিয়ে যাও ওকে। খড় পেতে বিছানা করে দাও। তোমাদের ছাত্র-সমিতি কাণ্ডে টাকা আছে ?”
ব্ৰত ৷
ছেলেটি ছাত্র-সমিতির একজন সভ্য। দুর্গত দুঃখীদের সাহায্য করাই তাদের
“খড় কেনবার টাকা আছে, কিন্তু ওষুধ কেনবার টাকা নেই”
ওষুধের ভার আমিই নিলাম ।
খড় কিনে বিছানা করবার জন্যে দুটি ছেলে ঘরের ভিতর ঢুকল। আমিও ছিলাম সে-সময়।
জিজ্ঞাসা করলাম, “ওর বিছানাপত্র কিছু নেই ভিতরে
“কিছু না। একটা কাপড়ে বাধা ঝুলি শুধু ঝুলছে চাল থেকে
“আর কিছু নেই ?”
প্রায় মাসখানেক ভুগে মেয়েটির আর ছাড়ল। অবশ্য ছেলেরা তার নিয়মিত শুশ্রূষা করতে পারত না। কেবল পথ্য দিয়ে আসত । আমি প্রায় প্রতিদিন কিংবা একদিন অন্তর তাকে গিয়ে দেখে আসতুম । একদিন একটি ছেলে দৌড়তে দৌড়তে এসে আমাকে যে খবর দিলে তা অবিশ্বাস্ত । এরকম যে হ’তে পারে তা কল্পনাতীত।
ছেলেটি বললে, “সর্বনাশ হয়ে গেছে ডাক্তারবাবু। মেয়েটিকে গোখরো সাপে কামড়েছে। আর বোধ হয় বাঁচবে না।”
“সাপে কামড়েছে? কি করে বুঝলে তুমি ?”
“আমি স্বচক্ষে দেখলুম যে। আমি সাবু দিতে গেছি, গিয়ে দেখি প্রকাণ্ড একটা গোখরো সাপ ওর গলায় পাক দিয়ে জড়িয়ে ধরেছে আর তার গালে মুখে ছোবলাচ্ছে। কী প্রকাণ্ড ফণা সাপটার ! আমি ভয়ে পালিয়ে এলুম। বাদল আর কানাইকে ডাকলাম, তারা বাড়ি নেই। আপনি যাবেন একবার আপনার
বন্দুকটা নিয়ে ?” গেলাম।

অচেনা মুখ

রয়েছে দেখলাম, গলায় নয়, সাপটা তার
সাপের ফণাটা খুব জোরে চেপে রয়েছে কর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়লাম আমি খানিকক্ষণের জন্য।
ডান বাহুতে জড়িয়ে মেয়েটি হাত দিয়ে। বন্দুক কোথায় ছু
তারপর হঠাৎ চোখে পড়ল লেজের খানিকটা কাটা। রক্ত পড়ছে। মেয়েটির তখনও জ্ঞান ছিল।
জড়িয়ে জড়িয়ে বললে, “আজকে ও জো পেয়েছে। মাস খানেক বিছানায় পড়ে আছি, ওকে কামাতে পারি নি। বিষদাত উঠেছে ওয়” সাপ কি তোমার ওই ঝুড়িতে ছিল নাকি ?”

আমার বিয়ের দিন বাসরঘরে ঢুকে আমার স্বামীকে কামড়েছিল। সঙ্গে সঙ্গে ধরে ফেলেছিলাম ওকে আমি । বেহুলা যেমন যমের সঙ্গ ছাড়ে নি, আমিও তেমনি ওর সঙ্গ ছাড়ি নি। রোজ ওকে বলেছি আমার স্বামীকে ফিরিয়ে দাও, আর এই গঙ্গার তীরে তীরে হেঁটে হেঁটে আসছি। গঙ্গার জলেই তাকে ভাসিয়ে দিয়েছিল—*
“সাপের ল্যাজটা কাটা দেখছি।”
“ওরই রক্ত দিয়ে সিঁথের সিঁদুর পরিযে গেজ। আজও পরতে গিয়েছিলাম, কিন্তু আজ ওকে সামলাতে পারলাম না
দেখলাম মাথায় রক্ত-সিদুরের রেখা। বাঁ হাতের তর্জনী আর অঙ্গুষ্ঠের মধ্যে রক্তাক্ত লেজের টুকরোটাও দেখতে পেলাম ।
একটু পরেই তার মৃত্যু হ’ল। সাপচারও হল, কারণ যে বজ্রমুষ্টিতে সে সাপের মাথাটা চেপে ধরেছিল মৃত্যুও তা শিখিল করতে পারেনি।

Check Also

ফুটানী মেরে বিয়ে

ফুটানী মেরে বিয়ে। মজার জীবন কাহিনী

Spread the loveফুটানী মেরে বিয়ে। মজার জীবন কাহিনী আমরা অনেকেই যখন ১৮/২০ হাজার টাকা বেতন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *