হযরত খিজির (আঃ) এর জীবনী
হযরত খিজির (আঃ) ইসলামী ঐতিহ্যে একজন অত্যন্ত সম্মানিত, রহস্যময় ও অলৌকিক ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। তাকে আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ জ্ঞান এবং গোপন রহস্য জানানো একজন নেক মানুষ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ইসলামী সাহিত্য ও কুরআনে তাঁর জীবনবৃত্তান্ত রহস্যময় হলেও, তিনি মানুষের জন্য শিক্ষণীয় ও আধ্যাত্মিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত।
নাম ও পরিচিতি
হযরত খিজির (আঃ)-এর প্রকৃত নাম কুরআন বা হাদীসে সরাসরি উল্লেখিত নয়। “খিজির” নামটি এসেছে ‘সবুজ’ অর্থাৎ ‘সবুজ আচ্ছাদিত’। এটি তার দীর্ঘজীবন এবং আল্লাহর রহমতের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়।
কুরআন ও হাদীসে খিজির (আঃ)
কুরআনে হযরত খিজির (আঃ)-এর নাম সরাসরি উল্লেখ না থাকলেও, তাকে “জ্ঞানী এবং আল্লাহর প্রিয় দাস” হিসেবে নির্দেশ করা হয়েছে। বিশেষ করে সুরা কাহফ (১৮:৬৩-৮৫)-এ হযরত মূসা (আঃ)-এর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতের ঘটনা বর্ণিত হয়েছে।
বিস্তারিত জানতে Google News এর সঙ্গে থাকুন
মূসা (আঃ) ও খিজির (আঃ)-এর সাক্ষাৎ
হযরত মূসা (আঃ) জানতে চান, পৃথিবীতে কি এমন কেউ আছেন যিনি আল্লাহর কাছ থেকে মহান জ্ঞান লাভ করেছেন। আল্লাহ তাঁকে খিজির (আঃ)-এর খোঁজ দেন। মূসা (আঃ) তাঁর সঙ্গে চলতে থাকেন, কিন্তু খিজির (আঃ)-এর কিছু কাজ প্রথমে অদ্ভুত মনে হয়।
-
একটি জাহাজের তলা ফাটানো
-
একটি শিশু হত্যা
-
একটি প্রাচীন দেয়াল মেরামত করা
ঘটনাগুলো নিম্নরুপঃ
১. একটি জাহাজের তলা ফাটানো
হযরত খিজির (আঃ) এক জাহাজের তলা ফাটিয়ে দেন। মূসা (আঃ) তখন আশ্চর্য হন এবং প্রশ্ন করেন, কেন তিনি এমন কাজ করলেন? খিজির (আঃ) পরে ব্যাখ্যা দেন যে, জাহাজটি একজন দুর্বল এবং দরিদ্র মানুষ মালিকের ছিল। যদি তলা ফাটানো না হতো, শত্রুরা জাহাজটি জব্দ করে নিত এবং মালিকটি সম্পূর্ণভাবে সবকিছু হারাত। তলা ফাটানোর মাধ্যমে আল্লাহ সেই দরিদ্র মানুষের জন্য বিশেষ রক্ষা এবং সুরক্ষা প্রদান করেছেন।
২. একটি শিশু হত্যা
একটি শিশু হত্যা করার ঘটনায়ও মূসা (আঃ) হতবাক হয়ে যান। খিজির (আঃ) জানালেন, শিশুটি বড় হয়ে একজন মন্দকামী এবং তার বাবা-মায়ের জন্য বিপদ সৃষ্টিকারী হতো। আল্লাহর নির্দেশে শিশুটিকে হত্যা করে ভবিষ্যতে পরিবারকে কষ্ট থেকে রক্ষা করা হয়। এ ঘটনা আমাদের শেখায় যে, আল্লাহর পরিকল্পনা আমাদের কাছে অজানা হলেও, তা মানুষের মঙ্গল ও কল্যাণের জন্য।
৩. একটি প্রাচীন দেয়াল মেরামত করা
হযরত খিজির (আঃ) একটি প্রাচীন দেয়াল মেরামত করেন, যা শহরের এক বিপন্ন স্থানে অবস্থিত ছিল। মূসা (আঃ) প্রশ্ন করেন, কেন তিনি বিনা পারিশ্রমিকে দেয়াল ঠিক করলেন? খিজির (আঃ) ব্যাখ্যা দেন, দেয়ালের নীচে একটি ধনসম্পদ লুকানো ছিল, যা দু:স্থ ও অনাথদের জন্য আল্লাহর ইচ্ছায় সংরক্ষিত। দেয়াল ঠিক না করলে তা চুরি হয়ে যেত।
খিজির (আঃ) পরে ব্যাখ্যা দেন যে, তার কাজগুলো আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী ছিল এবং এতে মানুষের জন্য বিশেষ উপকার ও রক্ষা নিহিত। এই ঘটনা আমাদের ধৈর্য, বিশ্বাস এবং আল্লাহর পরিকল্পনা বোঝার শিক্ষা দেয়।
খিজির (আঃ)-এর জীবন ও রহস্য
খিজির (আঃ)-কে ইসলামী ঐতিহ্যে অমর ও রহস্যময় ব্যক্তি হিসেবে ধরা হয়। তাঁর দীর্ঘায়ু এবং অমরত্বের ব্যাপারে বিভিন্ন রেওয়ায়েত রয়েছে। বহু বিশ্বাস অনুসারে, তিনি আজও জীবিত আছেন এবং আল্লাহর ইচ্ছায় মানুষকে সাহায্য করে থাকেন।
More : Samsung Galaxy A17 5G স্যামসাং মোবাইল Specification ও দাম
১০০ জন মনীষীর জীবনী PDF চাইলে ডাউনলোড করুন
অসীম জ্ঞান ও শিক্ষা
খিজির (আঃ)-এর জীবন থেকে মূল শিক্ষাগুলো হলো:
-
অলৌকিকতা ও রহস্যময়তা: মানুষের জীবনে অনেক ঘটনা আল্লাহর পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটে।
-
আল্লাহর ইচ্ছা: সব কিছু আল্লাহর ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল।
-
ধৈর্য ও বিশ্বাস: আমাদের কাজ ও সিদ্ধান্তের ফলাফল আল্লাহর পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটে।
-
গোপন জ্ঞান: খিজির (আঃ)-এর জ্ঞান মানুষের কাছে প্রায়শই অদ্ভুত ও রহস্যময় মনে হয়, তবে এটি আল্লাহর দৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ।
হযরত খিজির (আঃ)-এর জীবন আমাদের জন্য দার্শনিক ও আধ্যাত্মিক শিক্ষা। তার রহস্যময় কাজ, ধৈর্য, বিশ্বাস এবং আল্লাহর পরিকল্পনার প্রতি আস্থা আজও মুসলিম বিশ্বের জন্য এক মহান দৃষ্টান্ত। ইসলামী ঐতিহ্যে তিনি এক অনন্য মর্যাদা ও সম্মান অর্জন করেছেন।