আসমানী – জসীমউদ্দীন
আসমানীরে দেখতে যদি তােমরা সবে চাও,
রহিমদ্দির ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও।
বাড়ি তাে নয় পাখির বাসা ভেন্না পাতার ছানি,
একটুখানি বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি।
একটুখানি হাওয়া দিলেই ঘর নড়বড় করে,
তারি তলে আসমানীরা থাকে বছর ভরে।
পেটটি ভরে পায় না খেতে, বুকের ক-খান হাড়,
সাক্ষী দিছে অনাহারে কদিন গেছে তার।
মিষ্টি তাহার মুখটি হতে হাসির প্রদীপ-রাশি
থাপড়েতে নিবিয়ে দেছে দারুণ অভাব আসি।
পরনে তার শতেক তালির শতেক ছেড়া বাস,
সােনালি তার গা বরণের কমছে উপহাস।
ভােমর-কালাে চোখ দুটিতে নাই কৌতুক-হাসি,
সেখান দিয়ে গড়িয়ে পড়ে অশ্রু রাশি রাশি।
বাঁশির মতাে সুরটি গলায় কয় হল তাই কেঁদে,
হয় নি সুযােগ লয় যে সে-সুন্ন গানের সুরে বেঁধে।
আসমানীদের বাড়ির ধারে পদ্ম-পুকুর ভরে
ব্যাঙের ছানা শ্যাওলা-পানা কিলবিল বিল করে।
ম্যালেরিয়ার মশক সেথা বিষ গুলিছে জলে,
সেই জলেতে রান্না-খাওয়া আসমানীদের চলে।
পেটটি তাহার দুলছে পিলেয়, নিতুই যে জ্বর তার,
বৈদ্য ডেকে ওষুধ করে পয়সা নাহি আর।
আরও পড়ুন >>চুমু দেওয়া ও কদমবুছী করা কি জায়েজ
ভিডিও >> ডিসি’কে গাধা বলায় কি অবস্থা হলো দেখুন
আমার বাড়ি – জসীমউদ্দীন
আমার বাড়ি যাইও ভ্রমর,
বসতে দেব পিঁড়ে,
জলপান য়ে করতে দেব
শালি ধানের চিঁড়ে।
শালি ধানের চিড়ে দেব,
বিন্নি ধানের খই,
বাড়ির গাছের কবরী কলা
গামছা বাঁধা দই।
আম-কাঁঠালের বনের ধারে
শুয়ো আঁচল পাতি,
গাছের শাখা দুলিয়ে বাতাস
করব সারা রাতি।
চাঁদমুখে তাের চাঁদের চুমাে
মাখিয়ে দেব সুখে,
তারা-ফুলের মালা গাঁথি
জড়িয়ে দেব বুকে।
গাই দোহনের শব্দ শুনি
জেগাে সকাল বেলা,
সারাটা দিন তােমায় লয়ে
করব আমি খেলা।
আমার বাড়ি ডালিম গাছে
ডালিম ফুলের হাসি,
কাজলা দিঘির কাজল জলে
হাঁসগুলি যায় ডালি।
আমার বাড়ি যাইও ভ্রমর,
এই বার পথ,
মৌরী-ফুলের গন্ধ শুঁকে
থামিও তবে রথ।