স্বপ্নে দুধ ও পানি পান
স্বপ্নে দুধ ও পানি পান – দুধঃ দুধ ও দুধ যদি অপরিচিত ধরনের হয়, তাহলে তার ব্যাখ্যা হবে ইসলামের নৈতিক চরিত্র এবং নবী করীম (দঃ)-এর সুন্নত। তাই কেউ যদি স্বপ্ন দেখে সে অচেন ধরনের দুধ পান করেছে, অথবা দুধ তার হস্তগত হয়েছে, তাহলে অর্থ হবে সে ব্যক্তি কল্যাণের অধিকারী হবে এবং তার দ্বীনী অবস্থা ভাল থাকবে।
দুধের জাত ও প্রকার জানা থাকলে অর্থ হবে সে হালাল সম্পদ পাবে এবং উত্তম রুজি তার ভাগ্যে নসীব হবে, যার দ্বারা তার উপকার সাধিত হবে। কিন্তু এর জন্য শর্ত হল দুধ টক না হওয়া কিংবা ননী-মাখন বের করা মাঠায় পরিণত না হওয়া। কিন্তু যদি এর বিপরীত তথা দুধ টক অথবা ননীবিহীন মাঠা হয়, তাহলে দুঃখ-দুর্দশা, চিন্তা-ভাবনা ও ক্ষতির আশংকা রয়েছে।
পনীরঃ স্বপ্নে পনীর দেখা সাধারণত অর্থ-সম্পদ, কল্যাণ এবং দর্শনকারীর সুখ-সমৃদ্ধির আলামত। আর ভিজা পনীর দেখা শুকনা অপেক্ষা উত্তম। গরু, মহিষ এবং উটনীর দুধঃ এ সমস্ত দুধের সবগুলিই উত্তম ও কল্যাণকর। কিন্তু বকরী ও ভেড়ীর দুধ গাভীর দুধের তুলনায় নিম্নমানের। বন্য উটনীর দুধ দ্বীনী যােগ্যতা ও ধর্মীয় উন্নতির অর্থবােধক।
কেউ খচ্চরের দুধ পান করার অর্থ- দর্শনকারী ভয়-ভীতি এবং দুঃখ-বিড়ম্বনার শিকার হবে। গৃহপালিত গর্দভীর দুধ পানকারী কঠিন রােগে আক্রান্ত হবে, অবশ্য পরবর্তীতে সুস্থ হয়ে উঠবে। হালাল জাতীয় সকল বন্য পশু এবং হরিণীর দুধ পান করা মঙ্গল, যােগ্যতা এবং বৈধ আয়-উপার্জনের ইঙ্গিতবাহী। ঘােড়ীর দুধ পানকারী সুনাম-সুখ্যাতির অধিকারী হবে।
আরো পড়ুন: ইসলামে পবিত্রতা। গোসল। অজু। তায়াম্মুম
বাঘিনীর দুধ পান করা শত্রুর উপর জয়ী হওয়ার নিদর্শন। কুকুরীর দুধ পানকারী শত্রু ভয়ে ভীত থাকবে আর অচিরেই সে ক্ষতির সম্মুখীন হবে। চিতা বাঘিনীর দুধের অর্থ- সে ভীতির শিকার হবে এবং তার শত্রু সৃষ্টি হবে। শিয়ালনীর দুধ পান করার তা’বীর- কল্যাণ, আনন্দ-উল্লাস এবং অর্থ-সম্পদ প্রাপ্তির নিদর্শন। বনরুই, পাণ্ডা ইত্যাদি প্রাণীর দুধ পান করা রােগ-ব্যাধি ও কলহ-বিবাদের আলামত।
শূকরীর দুধ পান করেছে মর্মে স্বপ্ন দেখার ব্যাখ্যা পানকারীর মস্তিষ্কবিকৃতি দেখা দিবে। স্তন থেকে দুধ নিজে পান করুক, কিংবা পান করানাে। হােক- উভয় অবস্থায় পানকারী বন্দী অথবা আর্থিক দৈন্যদশায় পতিত হবে। কেননা, দুই বৎসর বয়সের পরে দুধ পান করা নিষেধ।
কোন স্ত্রীলোেক স্বপ্ন দেখলসে দুগ্ধবতী হয়ে গেছে এবং তার স্তন থেকে দুধ গড়িয়ে পড়ছে। এর ব্যাখ্যাকল্যাণ, মাল-দৌলত এবং আয়-উপার্জন তার প্রতি ছুটে আসবে। কিন্তু দুধ গড়িয়ে পড়ার পরিবর্তে যদি পান করেছে মর্মে দেখতে পায়, তাহলে ব্যাখ্যা বিপরীত অর্থে হবে। অর্থাৎ, কল্যাণ কিংবা অর্থ-বিত্তের সাক্ষাত পাওয়ার আশা তার সুদূর পরাহত।
মদঃ মদের ব্যাখ্যা সাধারণত হারাম মাল দ্বারা করা হয়। কিন্তু শর্ত হল স্বপ্নে মদের পেয়ালা নিয়ে কারাে সাথে যদি ঝগড়া-বিবাদ না লেগে থাকে। কেননা, বিবাদ-বিগ্রহ মূলত ধ্বংস-বিপর্যয়ের আলামত।
আঙ্গুর অথবা খেজুরের রস: এর ব্যাখ্যা- অসৎ পন্থায় সন্দেহযুক্ত সম্পদের আগমন। কিন্তু এই রস আগুনে যে পরিমাণ উত্তাপে পাকানাে হয়েছে, তার সম-পরিমাণ কষ্ট-বিড়ম্বনার ভিতর দিয়ে সে অর্থ উপার্জিত হবে। নেশার দ্রব্য ? স্বপ্নে মদ ব্যতীতই নেশা অনুভব হলে অমঙ্গলের লক্ষণ।
কেননা, আল্লাহ পাক কোরআনে বলেছেনঃ
وترى الناس سگازی وماهم بسگازی ولكن عذاب الله شديد
অর্থাৎ লােকদের তুমি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় দেখতে পাবে, অথচ বাস্তবে তারা নেশা-জড়িত নয়। তারা তাে আল্লাহ্ কঠিন আযাবের ভয়ে সন্ত্রস্ত। (সূরা হজ্জ ঃ আয়াত ২)
আরো পড়ুন: দৈনন্দিন প্রয়ােজনীয় ৫০টি আমল ও দোয়াসমূহ
কেউ যদি স্বপ্ন দেখে অপর কারাে সাথে একত্রে বসে সে মদ কিংবা ফলের রস পানে রত আছে, আর তাদের উভয়ের মাঝখানে দস্তরখান বিছানাে রয়েছে, তাহলে এর ব্যাখ্যা হবে- সে ব্যক্তি আয়-উপার্জনের চেষ্টা করবে বটে, সাথে সাথে অন্যের সাথে বিবাদেও লিপ্ত হবে। কেননা, দস্তরখানের তা’বীর রুজি-রােযগার এটা জানা কথা।
কেউ যদি মদ তৈরী করছে মর্মে স্বপ্ন দেখে, তাহলে ব্যাখ্যা হবে, সে বাদশাহর খেদমত করবে এবং তার হাতে বড় বড় কর্ম সম্পাদিত হবে। কেউ যদি মদের ফোয়ারা দেখতে পায়, তাহলে সেটি অজ্ঞাত পরিচয় বাগানে হলে ব্যাখ্যা হবে- সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। কিন্তু এই শর্তে যে, উক্ত মদ তার নিজের পান করতে হবে অথবা উক্ত বাগানে তার প্রবেশ করতে হবে। এরূপ যদি না হয়, তাহলে দর্শনকারী পার্থিব জীবনে কোন ফিতনা বা কঠিন পরীক্ষায় পতিত হবে।
মধুঃ স্বপ্নে মধু দেখতে পাওয়ার ব্যাখ্যা হল – অর্থ-সম্পদ, পরিচ্ছন্ন। | আয়-উপার্জন এবং রােগমুক্তি লাভ করা। ফলফলারি থেকে যে সমস্ত পানীয় দ্রব্য তৈরী করা হয়, সে সব স্বপ্নে দেখার ব্যাখ্যা ফলের মূল্যমান অনুপাতে করা হয়। এ সম্পর্কিত আলােচনা উপরে বর্ণিত হয়েছে।