ইমিগ্রেশনের সময় কর্মকর্তারা মূলত যাত্রী বিশ্বস্ত কিনা, বৈধ কাগজপত্র আছে কিনা, সন্দেহজনক উদ্দেশ্যে যাচ্ছেন কিনা—এসব যাচাই করেন। তাই সেখানে অযথা কিছু বলা বা ভুল তথ্য দিলে অনেক সময় বড় বিপদে পড়তে হয়।
এবার দেখি, ইমিগ্রেশনের সময় ৭টি কথা কখনোই বলা উচিত নয় এবং সমস্যা কী হতে পারে—
✈️ ইমিগ্রেশনে ৭টি নিষিদ্ধ কথা
১. “আমি শুধু একটু ট্রাই করে দেখতে যাচ্ছি”
-
এভাবে বললে তারা মনে করতে পারে আপনি বৈধ ভিসা নিয়ে যাচ্ছেন না, বা সেখানে গিয়ে অবৈধভাবে কাজ করতে চাইছেন।
-
ফলাফল: ভিসা থাকা সত্ত্বেও আপনাকে ফেরত পাঠানো হতে পারে।
২. “আমি কাজ খুঁজব” বা “চাকরি করব” (যদি ওয়ার্ক ভিসা না থাকে)
-
যদি ভিসার ধরন হয় ট্যুরিস্ট/স্টুডেন্ট/ভিজিটর অথচ আপনি বললেন কাজ করবেন, তবে তা ভিসার নিয়ম ভঙ্গ।
-
ফলাফল: ভিসা বাতিল, দেশে ফেরত পাঠানো এবং ভবিষ্যতে আবার ভিসা পাওয়া কঠিন।
৩. “আমার কোনো হোটেল বুকিং নেই” বা “কোথায় থাকব জানি না”
-
ইমিগ্রেশনের কর্মকর্তারা বুঝতে পারেন যে আপনার ভ্রমণের পরিকল্পনা স্পষ্ট নয়।
-
ফলাফল: সন্দেহজনক ভেবে আপনাকে আটকানো বা ফেরত পাঠানো হতে পারে।
৪. “আমার অনেক টাকা নেই, পরে জোগাড় করব”
-
ভ্রমণে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকলে তারা ভাবতে পারে আপনি দেশে গিয়ে সমস্যায় পড়বেন বা অবৈধভাবে কাজ করবেন।
-
ফলাফল: ভিসা থাকা সত্ত্বেও ঢুকতে না দেওয়ার সম্ভাবনা।
৫. “আমি এক আত্মীয়ের কাছে থাকব, কিন্তু ঠিকানা জানি না”
-
ইমিগ্রেশনের সঠিক ঠিকানা, ফোন নম্বর বা সম্পর্কের প্রমাণ না থাকলে সন্দেহ করা হয়।
-
ফলাফল: তারা মনে করবে আপনি অন্য কোনো কারণে যাচ্ছেন, প্রবেশে বাধা আসতে পারে।
৬. “আমি শুধু ঘুরতে যাচ্ছি, তবে কবে ফিরব জানি না”
-
ইমিগ্রেশনের সময় রিটার্ন টিকিট না থাকলে তারা মনে করবে আপনি হয়তো অবৈধভাবে থেকে যাবেন।
-
ফলাফল: প্রবেশ বন্ধ বা কঠোর জিজ্ঞাসাবাদ।
৭. “আমার কাগজপত্র বাড়িতে/ব্যাগে আছে, এখন নেই”
-
ইমিগ্রেশনের সময় সবসময় আপনার ভিসা, পাসপোর্ট, হোটেল বুকিং, রিটার্ন টিকিট, ফান্ডের প্রমাণ সঙ্গে থাকতে হবে।
-
ফলাফল: কাগজপত্র না দেখাতে পারলে সোজা রিজেক্ট।
🔎 সারসংক্ষেপ
ইমিগ্রেশনে কখনোই এমন কিছু বলা যাবে না যা সন্দেহ তৈরি করে।
-
কাজের কথা বলবেন না (যদি ট্যুরিস্ট ভিসা থাকে)
-
অর্থের অভাব দেখাবেন না
-
হোটেল/আবাসন/টিকিট নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখাবেন না
-
মিথ্যা কথা একেবারেই নয়
👉 মনে রাখবেন, ইমিগ্রেশনে সংক্ষিপ্ত, আত্মবিশ্বাসী ও সঠিক উত্তরই সবচেয়ে নিরাপদ।
বিস্তারিত জানতে Google News অনুসরণ করুন
ইমিগ্রেশনে কর্মকর্তারা সাধারণত কিছু নির্দিষ্ট প্রশ্ন করেন। এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে সংক্ষিপ্ত, ভদ্র, আত্মবিশ্বাসী ও সত্যভাবে। বাড়তি কথা বলার দরকার নেই।
✈️ ইমিগ্রেশনে সাধারণ প্রশ্ন ও উত্তর দেওয়ার কৌশল
১. আপনি কেন এই দেশে এসেছেন?
-
✅ সঠিক উত্তর: “আমি ভ্রমণে এসেছি।” / “আমি পড়াশোনার জন্য এসেছি।” / “আমি ব্যবসায়িক মিটিংয়ে এসেছি।”
-
❌ ভুল উত্তর: “আমি একটু ঘুরতে এসেছি, হয়তো কাজও করতে পারি।”
👉 সবসময় ভিসার ধরন অনুযায়ী উত্তর দিন।
২. আপনি কতদিন থাকবেন?
-
✅ সঠিক উত্তর: “৭ দিন” / “২ সপ্তাহ” / “আমার রিটার্ন টিকিট ১৫ দিনের।”
-
❌ ভুল উত্তর: “কতদিন থাকব জানি না।”
👉 নির্দিষ্ট তারিখ বা টিকিট অনুযায়ী বলুন।
৩. আপনার কোথায় থাকা হবে?
-
✅ সঠিক উত্তর: “আমি হোটেল বুক করেছি, এখানে ঠিকানা।” (প্রিন্ট কপি বা মোবাইলে দেখান)
-
❌ ভুল উত্তর: “এখনো ঠিক করি নাই।”
👉 থাকার ব্যবস্থা স্পষ্টভাবে জানাতে হবে।
4. আপনার কাছে কত টাকা আছে?
-
✅ সঠিক উত্তর: “আমার কাছে ক্যাশ আছে এবং আন্তর্জাতিক কার্ডও আছে।”
-
❌ ভুল উত্তর: “টাকা কম আছে, পরে জোগাড় করব।”
👉 পর্যাপ্ত অর্থের প্রমাণ (ক্যাশ, কার্ড, ব্যাংক স্টেটমেন্ট) থাকা জরুরি।
৫. কাউকে দেখতে যাচ্ছেন কি?
-
✅ সঠিক উত্তর: “হ্যাঁ, আমার আত্মীয়/বন্ধু। এখানে তার ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর।”
-
❌ ভুল উত্তর: “হ্যাঁ, একজন আছে… কিন্তু ঠিকানা জানি না।”
👉 আত্মীয়/বন্ধুর কাছে থাকলে প্রমাণ রাখুন (ইনভাইটেশন লেটার)।
৬. আপনার পেশা কী?
-
✅ সঠিক উত্তর: “আমি ছাত্র/কর্মচারী/ব্যবসায়ী।”
-
❌ ভুল উত্তর: “কিছু করি না।” / “যাই পাই তাই করি।”
👉 ভদ্রভাবে আসল তথ্য দিন, প্রয়োজনে ভিজিটিং কার্ড বা ছাত্র পরিচয়পত্র দেখান।
৭. আপনার রিটার্ন টিকিট আছে?
-
✅ সঠিক উত্তর: “হ্যাঁ, আমার টিকিট আছে, এই দেখুন।”
-
❌ ভুল উত্তর: “এখনো নেই, পরে কিনব।”
👉 সবসময় রিটার্ন টিকিট সঙ্গে রাখুন।
📝 কৌশল মনে রাখার নিয়ম
-
সংক্ষিপ্ত উত্তর দিন – বেশি কথা বলবেন না।
-
হাসি ও ভদ্র আচরণ রাখুন – রাগান্বিত বা নার্ভাস হবেন না।
-
কাগজপত্র সবসময় হাতের কাছে রাখুন – পাসপোর্ট, ভিসা, হোটেল বুকিং, রিটার্ন টিকিট, প্রমাণিত অর্থের কাগজ।
-
মিথ্যা কথা বলবেন না – ধরা পড়লে প্রবেশ নিষিদ্ধ হতে পারে।
-
ভিসার ধরন অনুযায়ী উত্তর দিন – ট্যুরিস্ট ভিসায় গেলে শুধু ভ্রমণ, স্টুডেন্ট ভিসায় গেলে শুধু পড়াশোনা।
👉 এই কৌশল মেনে চললে ইমিগ্রেশনের কোনো সমস্যা হবে না।
আরো জানুন >> ছয় দেশ, এক গন্তব্য এক ভিসায় 6টি দেশ ভ্রমণের সুযোগ