পবিত্র রমজানে আল্লাহর নৈকট্য লাভের 10 আমল

Spread the love

পবিত্র রমজানে আল্লাহর নৈকট্য ও পুণ্য লাভের সর্বোত্তম সময়। কেননা রমজান মাসে আল্লাহ রহমতের দুয়ার খুলে দেন এবং প্রতি নেক কাজের প্রতিদান বহু বৃদ্ধি করেন। আল্লাহর পক্ষ বান্দাদের নেককাজের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘রমজান মাসের প্রথম রাতেই শয়তান ও দুষ্টু জিনদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করে ফেলা হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়, এর একটি দরজাও তখন খোলা হয় না; জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, এর একটি দরজাও বন্ধ করা হয় না। আর একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা দিতে থাকে, ‘হে কল্যাণকামী, অগ্রসর হও! হে পাপাসক্ত, বিরত হও। আর মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে আছে জাহান্নাম থেকে বহু লোককে মুক্তি দান। প্রত্যেক রাতেই এরূপ হতে থাকে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৬৮২)

Google News বিস্তারিত জানতে Google News অনুসরণ করুন

নৈকট্য লাভের 10 আমল

পবিত্র রমজানে আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভে সহায়ক ১০ আমলের বর্ণনা দেওয়া হলো।

১ম আমল ফরজ রোজা রাখা : পবিত্র রমজানে মাসে প্রধান আমল রোজা রাখা। যে ব্যক্তি যথাযথভাবে রোজা রাখে তার জন্য বহুবিদ পুরস্কারের ঘোষণা রয়েছে। যেমন আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি বিশ্বাস ও নিষ্ঠার সঙ্গে রমজানের রোজা রাখে তার আগের পাপ ক্ষমা করা হয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯০১)
২য় আমল তাহাজ্জুদ আদায় : তাহাজ্জুদ আল্লাহর প্রিয় আমল। নফল নামাজগুলোর মধ্যে তাহাজ্জুদের মর্যাদা সবার ওপরে। রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানে তাহাজ্জুদ আদায়ের প্রতি বিশেষ তাগিদ দিয়েছেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রমজানের শেষ দশকে রাসুলুল্লাহ (সা.) রাত জেগে ইবাদত করতেন, তার পরিবারকে ডেকে দিতেন এবং লুঙ্গি শক্ত করে বেঁধে নিতেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০২৪)

অন্য হাদিসে এসেছে, ‘পবিত্র রমজানে এর রোজার পর সবচেয়ে উত্তম রোজা মুহাররমের। আর ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে উত্তম হলো রাতের নামাজ।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১১৬৩)

৩য় আমল বেশি পরিমাণে দান করা : রমজানে রাসুলুল্লাহ (সা.) অধিক পরিমাণ দান করতেন। তাই রমজানে বেশি বেশি দান করা উত্তম। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ দাতা। রমজানে তিনি আরো বেশি দানশীল হতেন, যখন জিবরাইল (আ.) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। আর রমজানের প্রতি রাতেই জিবরাইল (আ.) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন এবং তাঁরা পরস্পর কোরআন তিলাওয়াত করে শোনাতেন। নিশ্চয়ই রাসুলুল্লাহ (সা.) রহমতের বাতাস থেকেও অধিক দানশীল ছিলেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৫৫৪)
৪র্থ আমল কোরআন তিলাওয়াত করা : কোরআন পরকালে মানুষের জন্য সুপারিশকারী হবে। তাই রমজানে বেশি বেশি তিলাওয়াত করা আবশ্যক। এ ছাড়া মহানবী (সা.) রমজানে জিবরাইল (আ.)-কে কোরআন তিলাওয়াত করে শোনাতেন। ফাতেমা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘তাঁর পিতা তাঁকে বলেছেন, প্রতি রমজানে জিবরাইল (আ.)-কে একবার কোরআন তিলাওয়াত করে শোনাতেন। কিন্তু মৃত্যুর বছর তিনি তাঁকে দুবার কোরআন শোনান।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬২৮৫)
৫ম আমল আত্মীয়তার বন্ধন দৃঢ় করা : আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষাকারীকে আল্লাহ ভালোবাসেন এবং ছিন্নকারীকে অপছন্দ করেন। তাই রমজানে আত্মীয়তা রক্ষার ব্যাপারে মনোযোগী হওয়া আবশ্যক। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতিদান দেয় সে আত্মীয়তার হক রক্ষাকারী নয়, বরং আত্মীয়তার হক রক্ষাকারী সে ব্যক্তি, যে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার পরও তা বজায় রাখে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৯৯১)
৬ষ্ঠ আমল রোজাদারকে ইফতার করানো : রোজাদার ব্যক্তিকে ইফতার করানো রজমানের একটি বিশেষ আমল। রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানে অন্যদের ইফতার করাতে উৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে সে ওই রোজাদারের সমপরিমাণ সওয়াব পাবে। আর রোজাদারের সাওয়াবও কমানো হবে না।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৮০৭)
৭ম আমল বেশি পরিমাণে তাওবা করা : মহান আল্লাহ তাওবাকারীকে ভালোবাসেন। আল্লাহ রমজানে বহুসংখ্যক মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তির ঘোষণা দিয়েছেন। রমজানে বেশি বেশি তাওবা করা আবশ্যক। এ ছাড়া রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ওই ব্যক্তির নাক ধূলিমলিন হোক, যার কাছে আমার উল্লেখ করা হলো অথচ আমার ওপর দরুদ পাঠ করল না। ওই ব্যক্তির নাক ধূলিমলিন হোক, যার জীবনে রমজান মাস এলো কিন্তু তাকে ক্ষমাপ্রাপ্ত না করেই তা অতিবাহিত হয়ে গেল। ওই ব্যক্তির নাক ধূলিমলিন হোক, যে তার মাতা-পিতাকে (বা তাদের একজনকে) বৃদ্ধাবস্থায় পেল কিন্তু তাদের খেদমত করার মাধ্যমে সে জান্নাতি হতে পারল না।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৪৫)
৮ম আমল উত্তম চরিত্র অর্জন : উত্তম চরিত্র অর্জন রোজার অন্যতম উদ্দেশ্য। সুতরাং রোজাদার ব্যক্তি চেষ্টা করবে চারিত্রিক ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো সংশোধনের চেষ্টা করা। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘রোজা ঢালস্বরূপ। সুতরাং অশ্লীলতা করবে না এবং মূর্খের মতো কাজ করবে না। যদি কেউ তার সঙ্গে ঝগড়া করতে চায়, তাকে গালি দেয়, তবে সে যেন দুবার বলে, আমি রোজাদার’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৮৯৪)
৯ম আমল সময়মতো নামাজ পড়া : ঈমানের পর ফরজ নামাজ সবচেয়ে মর্যাদাবান ইবাদত। সুতরাং রমজানে ফরজ নামাজের প্রতি আরো বেশি যত্নশীল হওয়া আবশ্যক। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) একদিন নামাজ নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি নামাজ সংরক্ষণ করবে, নামাজ তার জন্য কিয়ামতের দিন আলো, সাক্ষী ও মুক্তির কারণ হবে।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৬৫৭৬)
১০ম আমল কদরের রাতে ইবাদত করা : আল্লাহ কোরআনে কদরের রাতকে হাজার মাসের চেয়ে উত্তম বলেছেন। হাদিসে এই রাতে গুনাহ মাফের ঘোষণা এসেছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি বিশ্বাস ও নিষ্ঠার সঙ্গে কদরের রাতে নামাজ পড়ে (ইবাদত করে) তার আগের গুনাহ ক্ষমা করা হয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯০১)

আরো পড়ুন >> বাংলাদেশর সেরা 5টি মোবাইল ব্যাংকিং। Mobile Banking

Check Also

এক অজুতে একাধিক নামাজ

এক অজুতে একাধিক নামাজ পড়া নিয়ম

Spread the loveএক অজুতে একাধিক নামাজ পড়া নিয়ম – অজু থাকলেও প্রত্যেক সালাতে রাসুলুল্লাহ (সা.) …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *