পেটকে সুস্থ্য সুন্দর রাখার 10 টি উপায় – পেট এর সমস্যায় অনেকেই ভুগে থাকে। আবার পেটের সাথে মস্তিষ্কের সম্পর্ক রয়েছে। গবেষকরা বলছেন, অন্ত্র লাখো নিউরনের সাথে সংযুক্ত, যে কারণে অন্ত্রকে মানবদেহের ‘দ্বিতীয় মস্তিষ্ক’ বলা হয়।
পরিপাকতন্ত্রের কাজ শুধুমাত্র খাবার শোষণ করা নয়, বরং এর চাইতেও আরো বেশি কিছু। আমাদের শরীরে যে পরিমাণ রোগজীবাণু রয়েছে সেগুলো আমাদের শরীরকে অসুস্থ করে ফেলতে পারে।
হজমের সমস্যা বা বদহজম, গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি কমবেশি সবাইকে ভোগায়। এ জন্য আপনার অন্ত্রের কী প্রয়োজন সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলেন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা।
অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম ও অন্ত্রের ভেতরে বসবাসকারী ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ও অন্য জীবাণুগুলো মানুষের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত শরীরচর্চা, মানসিক চাপ কমানো, অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার মাত্রা বাড়িয়ে তোলে এমন খাবার খাওয়াসহ আরো অনেক অভ্যাস অন্ত্রের জন্য উপকারী।
চিকিৎসা বিজ্ঞানী ড. সুন্নি প্যাটেল বলছেন, একজন মানুষ তার লাইফস্টাইলের মাধ্যমে তার মাইক্রোবায়োমের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে। সেটা ভালো হতে পারে আবার খারাপও হতে পারে।
তার মতে, এটা ‘একটা উপযুক্ত বিনিয়োগ’, যে কাজ করার জন্য আপনি কখনই খুব কম বয়সী বা খুব বেশি বয়সী হতে পারবেন না৷ (পেটকে সুস্থ্য সুন্দর রাখার টিপস)
অন্ত্রের স্বাস্থ্যের ওপর জিনের তুলনায় বেশি প্রভাব ফেলে খাদ্যের মতো পরিবেশগত কিছু বিষয়। আপনি যা খাচ্ছেন তা শুধু আপনার জন্য পুষ্টি নয়, এটি আপনার অন্ত্রে বসবাসকারী কোটি কোটি জীবাণুকে খাওয়ায় এবং পরিবর্তন করে। আবার আপনার অন্ত্রই আপনার দেহে কোনো ইনফেকশন হলে তার বিরুদ্ধে লড়াই করে। আপনি যে খাবারগুলো খাচ্ছেন, তা থেকে পুষ্টি উপাদান শুষে নিয়ে দেহের জন্য সরবরাহ করে।
ড. প্যাটেল বলছেন, ‘আপনি চাইলেই অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়াগুলোকে খুব দ্রুত পরিবর্তন করতে পারেন, এমনকি কয়েক দিনের মধ্যেই এটা করা সম্ভব।’
তবে দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তন ও উপকারিতা পেতে কয়েক মাস সময় লেগে যায়। অন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে প্রথমেই যথাযথ খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
গাট বা অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কী করণীয় :
যতটা সম্ভব সবজি খান
বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি, ফলমূল, বাদাম, শস্যজাতীয় খাবারে যে ফাইবার থাকে অন্ত্রের জীবাণুগুলো তা পছন্দ করে। অন্ত্রের সুস্থতায় খাদ্য নির্বাচন করা জরুরি।
আমাদের অন্ত্রে রয়েছে কয়েক ট্রিলিয়ন জীবাণুর বসতি। ওই জীবাণুগুলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ কেননা, তারা নির্দিষ্ট কিছু পুষ্টিকর উপাদান হজম করতে সাহায্য করে। প্রতিটি মাইক্রোবায়াল গ্রুপ একেক ধরনের খাবারের ওপর কাজ করে।
বিভিন্ন বৈচিত্র্যের খাবার অন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত করে, যা আমাদের আরো সুস্থ হয়ে ওঠার সাথে সম্পর্কিত।
শাক-সবজিতে প্রচুর পরিমানে ডায়েটারি ফাইবার, ভিটামিন, মিনারেল ও আয়রন থাকে। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পালং শাক, ব্রকোলির মতো শাক-সবজি থাকলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে। কলা আমাদের খুবই পরিচিত একটি ফল। কলায় রয়েছে পর্যাপ্ত ক্যালরি ও পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার।
এছাড়া পেঁয়াজ, রসুন, বাঁধাকপিসহ ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার বেশি খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। প্রচুর পরিমাণে ফাইবার ও শাকসবজি অন্ত্রের মাইক্রোবায়োমের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। তবে কারো কারো জন্য ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার সংবেদনশীল হতে পারে। এর জন্য খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনার আগে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিতে হবে।
আরো পড়ুন >> বাংলাদেশর সেরা 5টি মোবাইল ব্যাংকিং। Mobile Banking
হোল গ্রেইন ফুড বা শস্যজাতীয় খাবার:
শস্যজাতীয় খাবারে থাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অন্য মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টি। শস্যে থাকা ফাইবার আমাদের অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য প্রিবায়োটিকের কাজ করে। এটা অন্ত্রে থাকা ভালো ব্যাকটেরিয়ার স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
ব্রাউন রাইস, লাল আটা, ওটস ইত্যাদি খাবারগুলোতে থাকে পর্যাপ্ত ফাইবার। এগুলো প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখলে পেটের বিভিন্ন সমস্যা ও কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যাও দূর হতে পারে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
ফার্মেন্টেড ও প্রোবায়োটিক ফুড
দই, কম্বুচা, কিমচি, চিজ, ভিনেগার, পাউরুটি, কয়েক ধরনের আচার হলো ফারমেন্টেড ফুড। এই খাবারগুলোতে ভালো ব্যাকটেরিয়া থাকে। ওই ব্যাকটেরিয়া অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। তাই নিয়মিত এ ধরনের খাবারের পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
তবে বেশি তেল দেয়া আচার ও উচ্চ চর্বিযুক্ত দুধের তৈরি দই পরিহার করতে বলেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা মূলত টকদই খাওয়ার পরামর্শ দেন।
অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার পরিহার করা
অন্ত্রের স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য বিশেষজ্ঞরা অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন।
কিংস কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক টিম স্পেক্টর বলেন, অন্ত্রের মধ্যে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া কমিয়ে দিতে পারে।
এ জন্য অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার কম খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি, যার মধ্যে রয়েছে :
– মিষ্টি বা মসলাযুক্ত স্ন্যাকস
– চকলেট বার ও মিষ্টি
– সোডা ও কোমল পানীয়
– মিটবল, ফিশ নাগেটের মতো ফ্রোজেন খাবার
– ইনস্ট্যান্ট নুডলসের মতো প্রক্রিয়াজাত খাবার।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবারে ‘খারাপ জীবাণু’ থাকে। যা অন্ত্রের স্বাস্থ্যে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। (পেটকে সুস্থ্য সুন্দর রাখার টিপস)
এছাড়া এমন খাবার গ্রহণের কারণে উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবারগুলোকে কেউ ডায়েট চার্টের বাইরে রেখে দিতে পারেন বলেও আশঙ্কা করেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা আরো বলেন, অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের গঠন বা খাদ্যের ম্যাট্রিক্স, যান্ত্রিক বা রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যাহত হয়। যা খাদ্যকে দ্রুত হজমযোগ্য করে তোলে।
ফলে এমন খাবার খেলে তা নিম্ন অন্ত্রে পৌঁছায় না, যা অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়।
তবে এক্ষেত্রে আরো গবেষণার প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
গভীর রাতে খাবার এড়িয়ে চলা
রাতের খাবার ও সকালের নাস্তার সময়ের ব্যবধান অন্তত ১২ ঘণ্টা রাখার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। একটা বড় ব্যবধানে সকাল ও রাতের খাবার গ্রহণ করা বা ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
অধ্যাপক টিম স্পেক্টর তার বইয়ে লিখেছেন, ‘দেহঘড়ি বা সার্কাডিয়ান রিদমের অংশ হিসেবে প্রতিদিনই অন্ত্রের জীবাণুগুলোর বিশ্রাম প্রয়োজন, যা আমাদের অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
এছাড়া অন্য কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে রমজানে যারা রোজা রাখেন, তাদের অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বেড়ে যায় এবং মাইক্রোবায়াল বৈচিত্র্যও (মাইক্রোবায়োমে বিভিন্ন প্রজাতির ব্যাপক উপস্থিতি) বাড়ে।
বিস্তারিত জানতে Google News অনুসরণ করুন
তবে এ বিষয়েও আরো গবেষণা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করছেন গবেষকরা।
পুষ্টিবিদ ডা. মেগান রসির মতে, ‘রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলার পেছনে অন্ত্রের স্বাস্থ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কেননা আমাদের রোগ প্রতিরোধক কোষের ৭০ ভাগ অন্ত্রের ভেতরে থাকে।’
বেশ কয়েকটি গবেষণায় উঠে এসেছে যে গ্যাস্ট্রো-ইনটেস্টাইনাল বা পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা সর্দি, কাশি, জ্বরের মতো সাধারণ রোগ হওয়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়।
যারা সবসময় একই ধরনের খাবার খায় তাদের অন্ত্রের জীবাণুগুলো এতটা সক্রিয় বা শক্তিশালী থাকে না।
দৈনিক ব্যায়াম
যদি অন্ত্রের সমস্যা বেশি দেখা দেয়, তাহলে আপনি কতটা মানসিক চাপে আছেন তা পরীক্ষা করা প্রয়োজন বলে মনে ডা. মেগান রসি।
আমাদের অন্ত্রের সাথে মেজাজ যুক্ত থাকার পেছনে একটি সাধারণ কারণ হলো, আমাদের পরিপাকতন্ত্রে আনুমানিক ৮০ থেকে ৯০ ভাগ সেরোটোনিন উৎপন্ন হয়।
সেরোটোনিন এক ধরনের রাসায়নিক বার্তাবাহক। যার সাথে আমাদের পরিপাক ক্রিয়া থেকে শুরু করে মানসিক রোগ সংক্রান্ত শরীরের নানা কার্যক্রম জড়িত। এক কথায় সেরোটোনিনের নিঃসরণের ওপর নির্ভর করে আমাদের মেজাজ ভালো থাকা, না থাকা।
ভিডিও >> সুরাতুল আসর তাফসীর ।। সুন্দর বর্ণনা ।। হাফেজ মোহাম্মদ আলী
এ জন্য দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় ফাইবারসমৃদ্ধ পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত শরীরচর্চা খুবই প্রয়োজন। এতে শরীরের আর্দ্রতা বজায় থাকে এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্যও ভালো থাকে।
অন্ত্রের সমস্যা থাকলে অ্যালকোহল, ক্যাফেইন ও মশলাযুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ এ ধরনের উপাদান অন্ত্রের সমস্যা আরো বাড়িয়ে দিতে পারে। এছাড়া অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ভালোভাবে ঘুমানোর চেষ্টা থাকতে হবে সবসময়।
এক গবেষণায় উঠে এসেছে, কেউ যদি ঘুমের ধরন পরিবর্তন করে দেহঘড়ির ছন্দ ব্যাহত করে তবে তার অন্ত্রের জীবাণুগুলোর চক্রও বাধাগ্রস্ত হবে। (পেটকে সুস্থ্য সুন্দর রাখার টিপস)
মনে রাখতে হবে, অন্ত্রের জীবাণুগুলোকে সুস্থ রাখতে তাদের সাথে ভালো আচরণ করা জরুরি।
(পেটকে সুস্থ্য সুন্দর রাখার টিপস) (পেটকে সুস্থ্য সুন্দর রাখার টিপস) (পেটকে সুস্থ্য সুন্দর রাখার টিপস)