চাকুরীজীবিদের বিষয়ে কয়েকটি জানা অজানা প্রশ্নোত্তর – কোন প্রতিষ্ঠান, সরকারী পদে বা অন্য কোন পদে লোক নিয়োগের জন্য ইসলামের সুনির্দিষ্ট কিছু নীতিমালা রয়েছে। যা প্রতিটি মানুষের জানা থাকা আবশ্যক। তা না হলে জীবনের সকল আয় পরকালের কঠিন বিপদের সম্মুখিন হতে হবে।
যে সব প্রতিষ্ঠানে অবৈধ কাজকর্ম হয় সেখানে চাকুরী করা বৈধ নয় এবং সেখান থেকে অর্জিত বেতন/ভাতাও হালাল নয়। যেমন সিনেমা-বাইস্কোপ, পূর্ণ সুদ ভিত্তিক ব্যাংক, বীমা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি। তবে ফোকাহায়ে কেরাম বলেছেন, যার হালাল উপায়ে জীবিকা নির্বাহের কোনই উপায় নেই অনন্যোপায় অবস্থায় বিকল্প হালাল ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত তার জন্য ব্যাংক বীমা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করা এবং সেখান থেকে বেতন/ভাতা গ্রহণ করা জায়েয হবে।
প্রভিডেন্ট ফাণ্ডের অর্থ (মূল ও বর্ধিত অংশ সহ) গ্রহণ করা জায়েয় । তবে চাকুরীজীবি স্বেচ্ছায় যে অংশ কর্তিত করাবে, সে ক্ষেত্রে তাকওয়া হল তার উপর অর্জিত বর্ধিত অংশ ভোগ না করা।
১। কোন চাকুরী গ্রহণের উদ্দেশ্যে উলঙ্গ হয়ে মেডিকেল করানো বৈধ নয়।
২। চাকুরী ঠিক রাখার জন্য বা চাকুরীতে কোন সুযোগ, সুবিধা লাভ করার জন্য ভ্যাসেকটমিলাইগেশন করা নাজায়েয ও হারাম।
৩। চাকুরী প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে যদি এই নিয়ম থাকে যে, চাকুরী ছাড়তে হলে এক মাস বা এরকম কোন নির্দিষ্ট সময় পূর্বে মৌখিক/ লিখিতভাবে প্রতিষ্ঠানকে অবহিত করতে হবে, তাহলে নিয়ম ভঙ্গ করলে চাকুরীজীবির পাপ হবে, তবে প্রতিষ্ঠান এর জন্য চাকুরীজীবি থেকে কোন ক্ষতিপূরণ আদায় করতে পারবে না কি চাকুরীজীবিকে উক্ত এক মাসের বেতন ফেরত দিতে হবে না।
৪। চাকুরী প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান যদি শর্ত আরােপ করে যে, অন্ততঃ এক বৎসর/বা নির্দিষ্ট এত সময় পূর্বে চাকুরী ছাড়তে পারবে না, তাহলে শরীয়ত সম্মত ওযর ব্যতীত সে মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পূর্বে চাকুরী ছাড়লে শক্ত গােনাহগার হবে, তবে যত দিন চাকুরী করেছে, তার বেতন ভাতা সে পাবে।
আরও পড়ুন >> বাকী এবং কিস্তিতে ক্রয়-বিক্রয় ইসলামে জায়েজ কিনা?
বিস্তারিত জানতে Google News অনুসরণ করুন |
৫। নির্দিষ্ট মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পূর্বে নিছক অযােগ্যতার কারণে কোন চাকুরীজীবিকে বরখাস্ত করা হলে অবশিষ্ট সময়ের বেতন ভাতা সে পাবে না।
৬। চাকুরীজীবি নির্ধারিত ছুটির বাইরে যে কয়দিন ছুটি কাটাবে তার বেতন/ভাতা সে পাবে না। প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ছুটির দিন নির্দিষ্ট করা না থাকলে অনুরূপ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক রেওয়াজ কি তা দেখা হবে।
৭। এক বৎসর নির্ধারিত ছুটি না কাটালে বা কম কাটালে পরর্বতী বৎসর বিগত বৎসরের বকেয়া ছুটি ভােগ করার দাবী করতে পারবে না ।
৮। নির্ধারিত ছুটি ভােগ না করে সে ছুটির সময় ডিউটি পালন করার জন্য অতিরিক্ত বেতন/ভাতা দাবী করা যায় না ।
৯। অফিস টাইমে ব্যক্তিগত কাজ করা এমন কি একটি ব্যক্তিগত চিঠি-পত্র লেখাও জায়েয নয়। তবে অফিসের কোন কাজ না থাকলে ভিন্ন কথা।
১০। মাদ্রাসার মুদাররিছ (বা স্কুল কলেজের শিক্ষক) যে ঘন্টায় তার ক্লাশ নেই তখন ব্যক্তিগত কাজ করতে পারে বা অন্যের কোন কাজ করে দিতে পারে।
চাকুরী বা বসবাসের জন্য বিদেশ গমনের মাসায়েলঃ
১। নিজের দেশে এবং নিজের শহরে অন্যান্য লােকদের ন্যায় জীবন জীবিকা চালানাের মত আয় উপার্জনের ব্যবস্থা থাকলে শুধু মাত্র জীবনের স্টান্ডার্ড বৃদ্ধির জন্য এবং বিলাসী জীবন যাপনের উদ্দেশ্যে কোন অমুসলিম দেশে গমন করা মাকরূহ।
২। সমাজে সম্মান বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে বা অন্যান্য মুসলমানের উপর বড়ত্ব প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে বা বিজাতীয় কৃষ্টি সভ্যতার সঙ্গে নিজেকে খাপ খাওয়ানাের উদ্দেশ্যে কোন অমুসলমান দেশে বসতি গ্রহণ করা হারাম।
৩। নিজের দেশে থেকে নুনতম জীবন জীবিকার ব্যবস্থাও করতে না পারলে যদি কোন অমুসলিম দেশে কোন বৈধ চাকুরী পাওয়া যায় তাহলে সেখানে যাওয়া ও থাকা জায়েয দুইটি শর্তেঃ
(ক) সেখানে গেলে ঈমান আমল রক্ষা পাওয়ার ব্যাপারে এতমীন থাকতে হবে।
(খ) সেখানে প্রচলিত অন্যায় ও অশ্লীলতা থেকে নিজেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে বলে নিশ্চয়তা থাকতে হবে।
৪। কোন অপরাধ ছাড়া নিজের দেশে জেল জরিমানা বা সম্পদ বাজেয়াপ্ত হওয়ার মত পরিস্থিতির সম্মুখীন হলেও অমুসলিম দেশে বসবাস করতে যাওয়া জায়েয উপরােক্ত দুইটি শর্তে।
৫। অমুসলিমদেরকে দাওয়াত ও তাবলীগের উদ্দেশ্যে হলে অমুসলিমদের দেশে বসবাস করতে যাওয়া জায়েয বরং উত্তম।
কোন পদে লোক নিয়োগের নীতিমালাঃ
(১) যে পদের জন্য লােক নিয়ােগ করা হবে, সে পদের দায়িত্ব পাণ করার মত প্রয়ােজনীয় জ্ঞান ও বিদ্যা বুদ্ধি তার মধ্যে থাকতে হবে।
(২) যাকে যে পদের জন্য নিয়ােগ করা হবে তার মধ্যে উক্ত পদের দায়িত্ব পালন করার মত আমানতদারী ও সততা থাকতে হবে ।
(৩) উক্ত পদের জন্য যে সব শর্তাবলী ও যােগ্যতার প্রয়ােজন রয়েছে তার মধ্যে | সে সব শর্তাবলী ও যােগ্যতা বিদ্যমান থাকবে হবে। যেমন কোন কোন পদের জন্য পুরুষ হওয়া শর্ত, কোন কোন পদের জন্য আলেম হওয়া শর্ত, কোন কোন পদের জন্য বিচক্ষণতা ও ইজতেহাদের ক্ষমতা থাকা আবশ্যক ইত্যাদি।
(৪) শ্রমের সময়, পারিশ্রমিক ও বেতন-ভাতা ইত্যাদি নির্ধারিত হওয়া আবশ্যক।
(৫) চাকুরি এক ধরনের লেন-দেন, অতএব অন্যান্য বাকীতে লেনদেনের বিষয়ের ন্যায় চাকুরি সংক্রান্ত বিষয়েরও একটি লিখিত চুক্তিনামা থাকা উত্তম ।
(৬) যােগ্যতা ও শর্তাবলী পূরণ হওয়ার ভিত্তিতে কোন আপনজন বা আত্মীয়কে নিয়ােগ প্রদান করা স্বজনপ্রীতি ও অন্যায় নয়। যােগ্যতা ও শর্তাবলীর দিকটাকে উপেক্ষা করে নিছক আত্মীয়তার বা আপনজন হওয়ার ভিত্তিতে নিয়ােগ দেয়া অন্যায় ।
অমুসলিম রাষ্ট্রে সরকারী পদ গ্রহণ সম্পর্কে বিধানঃ
কারও অধীনে পদ গ্রহণ করা তাকে সাহায্য সহযােগিতা করারই নামান্তর। আর অমুসলিমকে যেহেতু সাহায্য সহযােগিতা করা অবৈধ, তাই সাধারণ ভাবে অমুসলিমকাফের সরকারের অধীনে সরকারী পদ গ্রহণ করা জায়েয নয়। তবে নিম্নোক্ত শর্তাবলী পাওয়া গেলে জায়েযঃ
(১) যদি এমন হয় যে, উক্ত পদ গ্রহণ না করলে জনগণের অধিকার খর্ব হওয়ার অথবা অত্যাচার উৎপীড়নের আশংকা রয়েছে আর উক্ত সরকারকে উৎখাত করারও ক্ষমতা নেই।
(২) যদি এরূপ বােঝা যায় যে, সে সরকার তাকে শরীয়ত বিরােধী কোন আইন জারী করতে বা মান্য করতে বাধ্য করবে না।