ইসলামে পবিত্রতা। গোসল। অজু
পবিত্রতার বিবরণ ইসলামী শরিয়তের হুকুম আহকামগুলি পারনের জন্য পবিত্রতা অর্জন করা অপরিহার্য। পবিত্রতা অর্জনের জন্য তিন রকমের ব্যবস্থা ইসলামে অনুমােদিত। তা হল গোসল, অজু এবং তায়াম্মুম ।
গোসলঃ আরবী শব্দ। এর অর্থ ধৌত করা। আর শরীয়তের পরিভাষায় যে সকল কারনে গােসল ফরজ হয় সেই কারণসমূহ হতে কোন একটি কারণ পাওয়া গেলে পবিত্রতা অর্জনের জন্য গড়গড়ার সহিত কুলি করে, নাকে পানি দিয়ে, সর্বাঙ্গ ধৌত করাকে গােসল বলা হয়।
গােসল ফরজ হওয়ার কারণ : চারটিঃ
১। উত্তেজনা সহকারে বীর্যপাত হলে, তা স্বপ্নদোষের মাধ্যমে হােক বা স্ত্রীসহবাসের দ্বারা হােক।
২। পুরুষের লিঙ্গমুন্ড স্ত্রর যােনীর ভিতর প্রবেশ করলে তার দ্বারা বীর্যপাত হােক বা না হােক।
৩। মহিলাদের হায়েজ অর্থাৎ মাসিক বন্ধ হলে।
৪। নিফাসের রক্ত বন্ধ হলে। অর্থাৎ সন্তান জন্ম গ্রহণের পর যে রক্ত জারী হয় তা বন্ধ হলে।
ফরজ গােসলের ফরজ তিনটিঃ
১। গড়গড়ার সাথে কুলি করা, রােযাদার হলে গড়গড়া করতে হবে না। কারণ, তাতে, গলার মধ্যে পানি প্রবেশ করে রােযা ভেঙ্গে যাবার সম্ভাবনা থাকে।
২। দু’নাকের নরম হাড় পর্যন্ত পানি পৌছে দেয়া, এটাও। রােযাদার হলে করবে না। এতেও রােযা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
৩। সমস্ত শরীর ভালভাবে দৌত করা, যদি পুকুর, খাল কিংবা নদীতে গােসল করে, তবে তাতে সরাসরি নেমে শরীর মর্দন করবে, আর উপরে বালতি বা কলসের পানি দ্বারা গােসল করলে ভালভাবে গায়ে পানি ঢেলে গােসল করবে। মনে রাখতে হবে, এর যে কোন একটি বাদ পড়লে যেমন কুলি করা, নাকে পানি দেয়া এবং সমস্ত শরীরের মধ্যে একটি পশম বা তার সম পরিমাণ স্থান শুকনাে থাকলে ফরয গােসল আদায় হবে না; অপবিত্র থেকে যাবে।
ফরজ গােসলের সুন্নত পাঁচটিঃ
১। দু’হাত কজি পর্যন্ত ধােয়া।
২। গােসল করার পূর্বে নারী। হােক অথবা পুরুষ হােক, তাদের লজ্জাস্থান ভালভাবে ধৌত করে ফেলা।
৩। শরীরের অন্যত্র কোন প্রকার নাপাক লেগে থাকলে তা পূর্বেই ধুয়ে নিতে হবে।
৪। পা ধোত করা ছাড়া অবিকল নামাযের ওযূর ন্যায় ওযূ করে নেয়া এবং
৫। সমস্ত শরীরে ভালভাবে পানি বইয়ে দেয়া। কলস বা বালতির পানি দ্বারা দাঁড়িয়ে গােসল করলে গায়ে তিনবার পানি দেয়ার পর উক্ত স্থান হতে সরে পা তিনবার ধৌত করতে হবে। আর পুকুর কিংবা নদীতে গােসল করলে গায়ে তিনবার পানি দেয়ার বদলে তিনটি ডুব দিলেই সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে।
গােসলের নিয়তঃ
উচ্চারণ : নাওয়াইতুল গুছলা লিরাফয়িল জানাবাতি।
অর্থ : আমি নাপাকি দূর করিবার জন্য গােসল করিতেছি।
ওযুর বিবরণঃ
নামায এবং অন্যান্য ইবাদতের জন্য দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গসমূহ । পবিত্র করিবার উদ্দেশ্যে হাত, পা, মুখমন্ডল ধৌত এবং মাথা মাসেহ্ করাকে অজু বলে। কুরআন পাঠ করা এবং নামায আদায়ের জন্য ওযু করা ফরজ।
ওযুর ফরজ চারটিঃ
১। সমস্ত মুখমন্ডল কপালের উপরিভাগের চুলের গােড়া হইতে থুতনী পর্যন্ত, এক কর্ণের লতি হইতে অন্য কর্ণের লতি পর্যন্ত ধৌত করা।
২। উভয় হাত কনুইসহ ধৌত করা।
৩। চারভাগের একভাগ মাথা মাসেহ করা। (ঘন দাড়ি থাকিলে আঙ্গুলী দ্বারা খেলাল করা ফরজ)।
৪। উভয় পা টাখনু গিরা সহকারে ধৌত করা।
ওযুর সুন্নাতসমূহঃ
১। নিয়ত করা।
২। বিসমিল্লাহ বলে ওযু আরম্ভ করা।
৩। হাতের আঙ্গুলগুলাে খিলাল করা।
৪। উভয় হাত কবজি পর্যন্ত তিনবার ধৌত করা।
৫। মিসওয়াক করা।
৬। তিনবার কুলি করা।
৭। তিনবার নাকে পানি দেয়া।
৮। সম্পূর্ণ মুখ-মন্ডল তিনবার ধৌত করা।
৯। উভয় হাত কনুইসহ তিনবার ধৌত করা।
১০। সমস্ত মাথা একবার মাসেহ করা।
১১। উভয় কান একবার মাসেহ করা।
১২। টাখনু সহ উভয় পা তিনবার ধৌত করা।
১৩। পায়ের আঙ্গুলগুলাে খিলাল করা।
১৪। এক অঙ্গ শুকানাের পূর্বেই অন্য অঙ্গ ধৌত করা।
১৫। ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ওয়ূর কাজগুলাে সম্পূর্ণ করা।
ওযুর নিয়তঃ
নাওয়াতু আন আতাওয়াজ্জায়া লিরাফয়িল হাদিসি ওয়া ইস্তিবাহাতা লিছছালাতি ওয়া কাত্বাররুবান ইলাল্লাহি তা’য়ালা।
অর্থাৎ : আমি ওযুর নিয়ত করছি যে, নাপাকী দূর করার জন্যে। বিশুদ্ধ রূপে নামায আদায়ের উদ্দেশ্যে এবং আল্লাহ তা’য়ালার নৈকট্য লাভের জন্য।
ওযুর নিয়মঃ
নিয়ত পাঠ করার পর সর্বপ্রথম ডান হাত ও পরবর্তীতে বাম হাতের কবজি পর্যন্ত যথাক্রমে তিনবার ধৌত করবে। অতঃপর সম্পূর্ণ মুখ-মন্ডল । অর্থাৎ ললাটের উপরিভাগের চুল উঠার স্থান হতে থুতনীর নিচ পর্যন্ত এবং এক কানের লতি হতে অপর কানের লতি পর্যন্ত ভালভাবে তিনবার ধৌত করবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন মুখ-মন্ডলের কোন অংশ শুকনাে না থাকে। যাদের দাড়ি অত্যন্ত ঘন তাদের দাড়ি খিলাল করে ভিজিয়ে নিতে হবে। এরপর উভয় হাতের কনিষ্ঠ, অনামিকা ও মধ্যমা-এ তিনটি আঙ্গুলি একত্র করে মাথার এক চতুর্থাংশ মাসেহ করবে এবং সাথে সাথে দু’হাতের কনিষ্ঠা আঙ্গুলিদ্বয় কানে ঢুকিয়ে বৃদ্ধাঙ্গুল দ্বারা কানের পূদেশ মাসেহ করবে আর উভয় হাতের পিঠ দ্বারা ঘাড় মাসেহ করবে। এরপর ডান পা প্রথমে তিনবার টাখনু অর্থাৎ ছােট গিরাসহ ধৌত করবে এরপর বাম পা তিনবার ধৌত করবে।
ওযু ভঙ্গের কারণ ৭টিঃ
১। পায়খানা বা পেশাবের রাস্তা দিয়া কোন কিছু বাহির হওয়া। (সামান্য হইলেও)।
২। মুখ ভরিয়া বমি হওয়া।
৩। শরীরের ক্ষতস্থান হইতে রক্ত, পুঁজ বা পানি বাহির হইয়া গড়াইয়া পড়া।
৪। থুথুর সঙ্গে রক্তের ভাগ সমান বা বেশি হওয়া।
৫। চিৎ বা কাৎ হইয়া হেলান দিয়া ঘুমানাে।
৬। পাগল, মাতাল ও অচেতন হওয়া।
৭। নামাযে উচ্চস্বরে হাসা।