সকালে খালি পেটে পানি পানের উপকারীতা
পানি পান করার সময় দোয়া:
উচ্চারণ : বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।
অর্থ : সকল প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার।
পানি পান করার শেষে দোয়া
উচ্চারণ : আলহামদুলিল্লাহীল্লাজী জাআলাহু
আজবান ফুরাতান ওয়া লাম ইয়াজ আল্লাহু মিলহান উজাজান।
অর্থ : সকল প্রশংসা আল্লাহ তা’য়ালার জন্য, যিনি পানিকে মিষ্টি করেছেন। আমাদের গুনাহের কারণে তিক্ত করেননি। তথ্যসূত্র : তিরমিজি, আবু দাউদ, মিশকাত, আবু দাউদ, তিরমিযী
পানি পানের সময় সাধারণত যে যে বিষয়গুলি মাথায় রাখতে হবে, সেগুলি হল-
১। অনেকই আছে যারা পানি পানের সময় একেবারে অনেক মাত্রায় পানি পান করে থাকেন এবং এমনটা করতে গিয়ে পানি প্রায় গিলে গিলে খান। এইভাবে পানি পান করলে শরীরের ভিতর হঠাৎ করে চাপ খুব বেড়ে যায়, ফলে নানাবিধ অঙ্গের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই সব সময় অল্প অল্প করে জল পান করতে হবে।
২। শরীরে জলের পরিমাণ কমতে থাকলে নানাবিধ লক্ষণের প্রকাশ ঘটে থাকে। যেমন ধরুন প্রস্রাব হলুদ হতে থাকে, সেই সঙ্গে ঠোঁট এবং গলা শুকিয়ে যায়। এই ধরনের লক্ষণ প্রকাশ পেলে সঙ্গে সঙ্গে পানি পান করাটা জরুরি। এই বিষয়ে যত সচেতনতা বাড়বে, তত রোগের প্রকোপ কমতে থাকবে। কারণ শরীরকে চাঙ্গা রাখতে পানি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
আরো পড়ুন>> প্রতিদিন হাঁটার উপকারিতা || দিনে প্রায় ৬০০০ ধাপ হাটতে হবে
৩। শরীরের কথা ভেবে এই বিষয়টা সর্বক্ষণ মনে রাখতে হবে যে ভুলেও দাঁড়িয়ে পানি পান করা চলবে না। কারণ এমনটা করলে দেহের ভিতর জলের ভারসাম্য ঠিক থাকে না। ফলে জয়েন্টে পানি জমে গিয়ে আর্থ্রাইটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। তাই যতই ব্যস্ততা থাকুক না কেন, বসে জল খেতে হবে।
৪। ঘুম থেকে উঠেই পানি পান করলে শরীর থেকে ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানেরা বেরিয়ে যায়। ফলে রোগভোগের আশঙ্কা একেবারে কমে যায়। এই কারণেই তো ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে কম করে ২ কাপ জল খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। গবেষণায় দেখা গেছে সকাল সকাল পানি পানের অভ্যাস করলে কিডনি এবং ইনটেস্টাইনের কর্মক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।
৫। চিকিৎসকেদের মতে খাবার খাওয়ার কম করে ১-২ ঘন্টা পর পানি পান করা উচিত। এমনটা না করলে হজমে সহায়ক পাচক রসের কর্মক্ষমতা কমতে শুরু করে। ফলে হজম ঠিক মতো না হাওয়ার কারণে বদ-হজম এবং গ্যাস-অম্বলের মতো সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।
পানি পানের সময়:
১। পানি করুন যখন আপনি ঘুম থেকে জাগবেন মনে করুন আপনি একটা অন্ধকার ঘরে হাঁটছেন আর খুঁজছেন কিছু। হয়তো আলো ছাড়া আপনি সেটা খুঁজে পেতে ব্যর্থ হবেন। আবার ধরুন একটা গাড়ির শীতল ইঞ্জিন কি গরম না হলে স্টার্ট নেবে। শরীরের ভেতরের কার্যক্রমও সেরকম। প্রতিদিন সকালে জেগে এক গ্লাস পানি পান করে শরীরটাকে সচল করতে পারেন। তারপর শুরু করুন আপনার দিন। এই এক গ্লাস পানি আপনার শরীরের কার্যক্রম শুরু করে দেবে। পানি আপনার শরীরের ক্ষতিকর উপাদানগুলোকে বের করে দিতে সহায়তা করে আর বিপাক ক্রিয়াকে করে সচল।
২। প্রতিবার খাবারের পূর্বে পানি পান করুন: প্রতিবার খাবারের ১০ মিনিট পূর্বে পানি পান করুন। পানি আপনার পাকস্থলিকে প্রস্তুত করবে খাদ্যের জন্য। পানি আপনার জিহ্বার স্বাদ নেয়ার গ্রন্থিগুলোকে সচল করবে। মুখ ও খাদ্য নালীর শুকনো ভাব দূর করবে। সকালে খালি পেটে পানি পানের উপকারীতা।
৩। স্ন্যাকের সাথে পানি পান করুন: যদি অসময়ে খিদে পেয়ে যায়, তবে প্রথমে ঠাণ্ডা পানি পান করুন। অনেক সময় তৃষ্ণাও ক্ষুধার অনুভূতি দেয়। এ ছাড়াও হালকা নাস্তার সাথে পানি পান করলে আপনি মোটা হয়ে যাওয়া রোধ করতে পারবেন।
৪। কাজ শুরুর পূর্বে পানি পান করুন: তাপমাত্রা, আদ্রতা এবং আপনার শরীরের পানির পরিমানের উপর নির্ভর করে সাধারণত কী পরিমান পানি আপনার পান করা জরুরী। আপনি কী ধরনের কাজ করবেন সেটাও অবশ্য বিবেচ্য। হোক সেটা অফিসে বসে বা বাইরে, কিংবা খেলাধূলা বা যে কোন কাজ। কাজ শুরুর আগে যথেষ্ট পরিমান পানি পান করুন। এতে আপনার শরীর থাকবে ঝরঝরে।
আরো পড়ুন >> ইসলামে দাড়ি রাখা ফরজ নাকি সুন্নত || Mufti Kefayetullah Al Azhari
৫। কাজ শেষ হওয়ার পর: কাজ শেষে ধীরেসুস্থে কিছু পানি পান করতে পারেন। কাজের কারণে আপনার শরীর থেকে খরচ হয়ে যাওয়া এনার্জি তৈরিতে বেশ কিছুটা পানি প্রয়োজন হয়েছে। সেই ঘাটতি পূরণ করতে কিছুটা পানি আপনার পান করা উচিত। তবে এই সময় হুট করে বা ঢক ঢক করে পানি গিলে ফেলবেন না। ধীরে ধীরে পানি পান করুন।
৬। পানি পান করুন যখন আপনার ইচ্ছে হবে: আপনার যখনই পানি পান করতে ইচ্ছে হবে, তখনই কিছু পরিমান পানি আপনি পান করতে পারেন। নির্দিষ্ট সময় মেনে পানি পান করতে হবে এমন কোন কথা নেই। আপনার সিস্টেমের প্রয়োজন বলেই আপনার পানি পানের ইচ্ছা হয়েছে।
৭। একটু বেশি পানি পান করুন রোগ প্রতিরোধ করতে: আপনার চারপাশে যদি রোগের প্রকোপ দেখা দেয়, একটা সিজনে সকলেরই সর্দি-জ্বর বা অন্য কোন রোগ দেখা দিতে থাকে। এটাতো হয় সংক্রমনের কারণে। এই রকম পরিস্থিতিতে আপনার স্বাভাবিকের তুলনায় একটু বেশি পানি পান করা প্রয়োজন। কারণ পানি আপনার শরীর থেকে ক্ষতিকর রোগজীবানু বের করে দিতে সহায়তা করে। প্রতিদিন ঘরের বাইরে বের হবার আগে ও পরে পানি পানের অভ্যাস অনেক ভাইরাস ও রোগের আক্রমন থেকে আপনাকে বাঁচিয়ে দিতে পারে।
৮। অসুস্থ হলে পানি পান করুন: অসুস্থ হলে যথেষ্ট পরিমার পানি পান করা উচিত আপনার। এতে পানির মাধ্যমে রোগ জীবানু আপনার শরীর থেকে বের হয়ে যাবে। আর পানি আপনার শরীরকে রাখবে আদ্র, যা আপনাকে দেবে সতেজতা। সকালে খালি পেটে পানি পানের উপকারীতা
৯। যখন ক্লান্তি বোধ করবেন তখন পানি পান করুন: ক্লান্তি বোধ করছেন? অবসন্ন? তাহলে এক গ্লাস পানি পান করুন। পানি আপনার শরীরে দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে। এমনকি মস্তিষ্ককেও সচল করে দেবে। বিশেষ করে ঠাণ্ডা পানি আপনার শরীরের ইন্দ্রিয়কে সজাগ করবে। হলো তো? বেশ এখন আপনি পান করুন পরিমান মতো বিশুদ্ধ পানি । আবার অতিরিক্ত পানি পানও ভালো না। এতে শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তাদের স্বাভাবিক কাজ কর্ম বন্ধ করে দেবে। তাই প্রয়োজনীয় পানি পান করুন। আর অবশ্যই বিশুদ্ধ পানি ।