সাহাবী সা’দ ইবনে মুআ’য (রাঃ)
সাহাবী সা’দ ইবনে মুআ’য (রাঃ) ৩০ বছর বয়সে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। ৩৬ বছর বয়সে মৃত্যু বরণ করেছেন।তার ইসলামের বয়সকাল মাত্র ৬ বছর। এই ৬ বছরের তিনি এমন জীবন গঠন করেছিলেন যে-
– তাঁর মৃত্যুতে আসমানের সকল দুয়ার খুলে দেওয়া হয়েছিল।
– তাঁর রূহ আসমানে পৌঁছার পর আসমানীরা আনন্দে মেতেছিলেন।
– জানাযায় অংশগ্রহণের জন্য ৭০ হাজার ফেরেশতা যমীনে অবতরণ করেছিলেন।
তিনি ছিলেন সাহাবী সা’দ ইবনে মুআ’য (রাঃ)
বদর প্রান্তরে চুড়ান্তভাবে ঘাঁটি স্থাপনের আগে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সাহাবীদের নিয়ে একটি মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন। মদীনার আনসার সাহাবীদের তাঁর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)- প্রতি আনুগত্যের শপথের মধ্যে এই শর্ত ছিল না যে তাঁরা মদীনার বাইরেও রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে যুদ্ধে সহায়তা করবেন। মুসলিম বাহিনীর মধ্যে তাঁরাই অধিক।সেই কারণেই মতবিনিময় সভা।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) মতামত চাইলে আবু বকর ও উমার (রাঃ) সর্ববস্থায় তাঁর সাথে থাকার ওয়াদা পূনর্ব্যক্ত করলেন। আরেক মুহাজির সাহাবী মিক্বদাদ বিন ‘আমর (রাঃ) চমৎকার একটি কথা বলেছিলেন-
“ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ), মহান আল্লাহ তা’আলা আপনাকে যে পথে চলার কথা বলেছেন, আপনি সেই পথে চলতে থাকুন। মহান আল্লাহর শপথ, আমরা কখনোই আপনাকে সেই কথা বলবো না যা বনী ইসরাঈল মুসা (আঃ) কে বলেছিল – “আপনি ও আপনার পালনকর্তাই যান এবং উভয়ে যুদ্ধ করে নিন। আমরা তো এখানেই বসলাম। [সুরা আল-মায়িদাহ, আয়াত ২৪]। বরং আমরা বলবো -আপনি ও আপনার পালনকর্তা যুদ্ধ করুন, আমরা সর্বাবস্থায় আপনার সাথে আছি।”
আরো পড়ুন: দৈনন্দিন প্রয়ােজনীয় ৫০টি আমল ও দোয়াসমূহ
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তিনজনের জন্যই মহান আল্লাহ তা’আলার কাছে দু’আ করলেন। কিন্তু তিনি মূলত আনসার সাহাবীদের মনোভাব জানতে চাচ্ছিলেন। বিষয়টি অনুধাবন করার পর অন্যতম আনসার নেতা সা’দ বিন মু’আজ (রাঃ) দাঁড়িয়ে বললেন-
“আমরা তো ঈমান এনেছি, সাক্ষ্য দিয়েছি আপনার আনীত রিসালাতের বিষয়ে, সেগুলো মেনে চলার পরে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। অতএব, আপনি যা ইচ্ছা করছেন – তা পূর্ন করার জন্য সামনে এগিয়ে চলুন। শপথ সেই পবিত্র সত্ত্বার যিনি আপনাকে সত্য সহ প্রেরণ করেছেন – আপনি যদি বাহিনী বারকে গীমাদ পর্যন্ত নিয়ে যান, আমাদেরকে আপনার সাথে পাবেন।
আপনি আদেশ করলে আমরা উত্তাল সাগরের বিক্ষুব্ধ বুকেও ঝাঁপ দিতে পারি। পৃথিবীর দুর্গমতম জায়গাকেও পায়ের নিচে পিষে ফেলতে পারি ইনশাআল্লাহ। আমাদের (আনসারদের) একজন সদস্যও পিছে থাকবে না। আপনি আমাদের প্রত্যক্ষ করবেন সাহসী ও নির্ভীক ভূমিকায়। সম্ভবত মহান আল্লাহ তা’আলা আপনাকে আমাদের মধ্য দিয়ে এমন নৈপুন্য প্রদর্শন করাবেন, যা দেখে আপনার চোখ শীতল হবে। সুতরাং, যেখানে ইচ্ছা – সেখানেই নিয়ে চলুন আমাদের। মহান আল্লাহ তা’আলা যাবতীয় কর্মকান্ডে বারাকাহ প্রদান করুক।”
সা’দ বিন মু’আজ (রাঃ) এর অসীম সাহসিকতাপূর্ণ এই বক্তব্য শুনে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এঁর পবিত্র মুখ আনন্দে উদ্ভাসিত হয়ে উঠলো। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আনন্দচিত্তে বললেন,
“চলো এবং আনন্দিত মনে চলো। মহান আল্লাহ তা’আলা আমাকে দু’টি দলের একটি (বিজয়ী কিংবা শহীদ) সম্পর্কে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। মহান আল্লাহর শপথ – আমি যেন এসময়ে কাফির সম্প্রদায়ের বধ্যভূমি দেখতে পাচ্ছি!”
ফলাফলঃ এক-তৃতীয়াংশ জনবল নিয়েও মহান আল্লাহর ইচ্ছায় মুসলিম বাহিনীর নিরঙ্কুশ বিজয়!
আর এই যুদ্ধেই তিনি শহীদ হয়েছিলেন। আল্লাহ্র নিকট প্রিয় পাত্র হয়ে যান, আর মহানদের তালিকায় নিজেকে যুক্ত করে ফেলেন। “সুবহানআল্লাহ!!”
আমল হিসেবে ছিল শুধুই সর্বাবস্থায় রাসুল (সাঃ) এর আনুগত্য। আল্লাহ্র রাহে যুদ্ধ, আল্লাহ্ এবং তার রাসুলকে ভালোবাসা।
( বুখারীঃ ৩৮০৩, মুসলিমঃ ২৪৬৬, ইবনে হিব্বানঃ,৭০৩৩, ফাজায়িলুস সাহাবাঃ ১৪৯১)