শরীয়ত ও তরিকতের মৌলিক পার্থক্য এবং সম্পর্ক

Spread the love

শরীয়ত ও তরিকতের মৌলিক সম্পর্ক ইসলামিক ইবাদতের দুইটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। শরীয়ত হলো আল্লাহর নীতি ও আইন অনুযায়ী জীবনযাপন, যা ফরজ, সুন্নত ও নফল আমল নির্ধারণ করে। তরিকত হলো আধ্যাত্মিক পথ, যার মাধ্যমে অন্তরের পরিশুদ্ধি ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা হয়। শরীয়ত ও তরিকতের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ; শরীয়ত তরিকতের ভিত্তি, আর তরিকত শরীয়তের গভীর প্রয়োগ।

শরীয়ত ও তরিকতের মৌলিক পার্থক্য এবং সম্পর্ক


✅ ১. শরীয়ত (الشرِيعة): বাহ্যিক বিধান

শরীয়ত হল ইসলামের সেই বিধানসমূহ, যা মহান আল্লাহ ﷻ ও তাঁর রাসুল ﷺ বাহ্যিকভাবে মানুষকে জানিয়ে দিয়েছেন। এতে রয়েছে:

১) নামাজ, রোযা, হজ্জ, যাকাত
২) হালাল-হারাম
৩) লেনদেন, আচার-আচরণ
৪) অপরাধ ও শাস্তির বিধান
৫) পারিবারিক ও উত্তরাধিকার বিধান।
৬) রাজনৈতিক, সামাজিক, রাষ্ট্রিয় দায়িত্ব।

👉শরীয়ত হল ইসলামের সেউ বাহ্যিক দিক, যা দ্বারা একজন মুসলমানের জীবনের আচরণ গঠিত হয়।


✅ ২. তরিকত (الطَّرِيقَة): অন্তর্দৃষ্টি ও আত্মিক পথ

তরিকত শব্দের অর্থই পথ। এটি হল সেই আত্মিক ও আধ্যাত্মিক পথ যার মাধ্যমে এক মুমিন ব্যক্তি মহান আল্লাহ ﷻ ও রাসুলুল্লাহ ﷺ’র নৈকট্য হাসিল করে। এখানে রয়েছে:

১) রিয়া, হিংসা, অহংকার, লোভের রোগ দূর করা।
২) উচ্চাকাঙ্খা, দাম্ভিকতা, আমিত্বের রোগ দূর করা।
৩) ইখলাস, তাওয়াক্কুল প্রভৃতি গুণ অর্জন করা।
৪) তাওবা, যুহদ প্রভৃতি গুণ অর্জন করা।
৫) মোহাব্বত সোহবত, জিকির।
৬) আত্মার তাযকিয়া (পরিশুদ্ধি)।

👉তরিকত হল সেই ভিতরের রূপ, যা শরীয়তের চর্চার গভীরতা ও বাস্তবতা প্রকাশ করে।

🔹 “শরীয়তের বাতেনী রূপ হল তরিকত” — এই কথার ব্যাখ্যা
লোকেরা এতটাই জাহিল যে, শরীয়ত ও তরিকতের পার্থক্যই বোঝে না এটিই সত্য। কারণ:

শরীয়ত ও তরিকতের কেউ যদি শুধু বাহ্যিক নামাজ পড়ে, কিন্তু অন্তরে রিয়া বা অহংকার থাকে, তাহলে সে প্রকৃত মু’মিন নয়। শরীয়তের বাহ্যিক চর্চা তরিকত ছাড়া অসম্পূর্ণ, কারণ অন্তর বিশুদ্ধ না হলে আমলের গভীরতা হয় না। তরিকত হচ্ছে সেই গভীরতা, সেই আত্মিক নির্মলতা; যেটা শরীয়তের ভিতর থেকে বের হয়ে আসে।

শরীয়ত ও তরিকতের মৌলিক পার্থক্য এবং সম্পর্ক

🟢 মালিকি মাজহাবের ইমাম, ইমাম দারুল হিজরাহ, শাইখুল ইসলাম, ইমাম মালিক আবু আবদিল্লাহ আল-আসবাহী রহমতুল্লাহ আলাইহি বলেন:
“যে ব্যক্তি ফক্বাহ (শরীয়ত) শিখলো কিন্তু তাসাউফ শিখলো না, সে ফাসিক (অপরাধী) হবে। আর যে ব্যক্তি তাসাউফ শিখলো কিন্তু ফক্বাহ (শরীয়ত) শিখলো না, সে জিন্দিক (গুপ্ত নাস্তিক) হবে। আর যে উভয়টিই শিখলো, সে হক্বপন্থী হবে।”
📚 (আল-ইমাম আল-শা’রানি, তাবাক্বাতুল কুবরা)

🟢 আল্লামা শেরে গাজি, শেরে মিল্লাত, আলহাজ্ব আকবর আলী রেজভী শাহ সুন্নি আল-কাদরী, আল-হানাফি রহমতুল্লাহ আলাইহি বলেন,
“কামেল ঐ ব্যক্তি যার মাথায় শরীয়ত, বগলের মধ্যে তরিক্বত এবং সম্মুখে দুনিয়া ঠিক মতো চালায়, অথচ আল্লাহর রাস্তা ঠিক রাখে। মসজিদে নামাজি, ময়দানে গাজী, কাচারীতে কাজী এবং বাড়িতে পাক্কা দুনিয়াদার। ফলকথা, ঐ ব্যক্তি মসজিদে আসেতো ফেরেশতার খাছালত ধরে। বাজারে যায়তো মাতাব্বর সাজে।”

অলসতা সকল অনর্থের মূল অলসতা সকল অনর্থের মূল ।। ভাবসম্প্রসারণ

শিক্ষার গুরুত্ব

শিক্ষার গুরুত্ব একটি প্রবন্ধ/রচনা লিখ। ক্লাস ৮ম থেকে ১০ম

📚 (ফতোয়া-এ-আকবরীয়া)

🔹 বাতেনী (অন্তর) মানেই গোপন ও অদৃশ্য
“বাতেন” আরবি শব্দ, অর্থ — ভিতর, গোপন, অদৃশ্য। সুতরাং:

তরিকত বাহ্যিক চোখে দেখা যায় না। এটি আত্মিক চর্চা, যা হৃদয়ে ঘটে। মুরীদ ও মুর্শিদের মাঝে যে আত্মিক সম্পর্ক তা বাহ্যিক বিচার দিয়ে ধরা যায় না।

🟡 পবিত্র আল-কুরআনে মহান আল্লাহ ﷻ বলেন:
“وَأَنَّ إِلَىٰ رَبِّكَ الْمُنتَهَىٰ”
“নিশ্চয়ই তোমার প্রভুর দিকেই সবকিছুর পরিণতি।” (সূরা নাজম: ৪২)
এই গন্তব্যে পৌঁছানোর পথই তরিকত, যার বাহ্যিক কাঠামো শরীয়ত।

🔹 উদাহরণ দিয়ে বুঝাই যে,
❝শরীয়ত হল ফল গাছের ছাল, পাতা, ডাল—যা সবার চোখে পড়ে।
তরিকত হল সেই গাছের ভেতরের সুধা, তার শিকড়, যা না থাকলে ফল আসবে না।❞

শুধু বাহ্যিক কাঠামো দিয়ে অন্তরের পবিত্রতা আসে না, বরং সেই কাঠামো ব্যবহার করে ভিতরের আত্মাকে নির্মল করতে হয় এটাই তরিকত।

❝যারা শরীয়তকে তরিকতের বিরোধী মনে করে, তারা অজ্ঞ। যারা তরিকতকে শরীয়তবিহীন চর্চা মনে করে, তারাও গোমরাহ।❞

✅ সত্যিকার ইসলাম বুঝতে হলে এই দুটি দিক “শরীয়ত ও তরিকত” একসাথে ধারণ করতে হবে।

❝শরীয়ত পথের আলোক, তরিকত সেই পথে হাঁটার অন্তর্জ্ঞান।❞

Google News বিস্তারিত জানতে Google News এর সঙ্গে থাকুন

Loading spinner

Check Also

সোমবারের বিশেষ আমল

সোমবারের বিশেষ আমল: রোজা ও নামাজ আল্লাহর বরকত বাড়ান

Spread the loveসোমবারের বিশেষ আমল: ইসলামিক শরীয়াহ অনুসারে সপ্তাহের প্রতিটি দিনের জন্য কিছু নির্দিষ্ট আমল …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *