রোজা রাখার দলিল ও ফজিলত সমুহ

Spread the love

রোজা শুধু আল্লাহর জন্য। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নিজের সঙ্গে রোজা সম্পর্ক ঘোষণা করেছেন। এমনিভাবে তিনি সব ইবাদত-বন্দেগি থেকে রোজাকে আলাদা মর্যাদা দিয়েছেন।

সাহাবি আবু হুরাইরা (রা.) যখন বলেছিলেন, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাকে অতি উত্তম কোনো নেক আমলের নির্দেশ দিন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘তুমি রোজা রাখো। কারণ এর সমমর্যাদার আর কোনো আমল নেই। ‘ (নাসায়ি-২৫৩৪)

রোজার এত মর্যাদার কারণ কী, তা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ভালো জানেন। তবে আমরা যা দেখি তা হলো, রোজা এমন একটি আমল, যাতে লোক দেখানো ভাব থাকে না। এটি বান্দা ও আল্লাহর মধ্যকার একটি অতি গোপন বিষয়। নামাজ, হজ, জাকাতসহ অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগি কে সম্পাদন করল তা দেখা যায়। পরিত্যাগ করলেও বোঝা যায়। কিন্তু রোজার ক্ষেত্রে লোক দেখানো বা শোনানোর সুযোগ থাকে না। ফলে রোজার মধ্যে ইখলাস, আন্তরিকতা বা আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠতা নির্ভেজাল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘রোজাদার আমার জন্যই পানাহার ও সহবাস পরিহার করে। ‘ (মুসলিম-২৭৬৩)

রোজা ফরজ হওয়ার দলিল:

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ

হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পার। [২:১৮৩]

রোজা জাহান্নাম ঢাল:

হাদিসে এসেছে, ‘রোজা হলো ঢাল ও জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার মজবুত দুর্গ। ‘ (মুসনাদে আহমদ-৯২১৪)

বুখারি ও মুসলিমের হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য এক দিন রোজা রাখবে, আল্লাহ তার থেকে জাহান্নামকে এক খরিফ (৭০ বছরের) দূরত্বে সরিয়ে দেবেন। ‘ (মুসলিম-২৭৬৯)

আরও পড়ুন >>  ১০০/- টাকার প্রাইজবন্ড ড্র ।। Prize Bonds Result

রোজা জান্নাত লাভের পথ:

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জান্নাতে একটি দরজা রয়েছে। যার নাম রাইয়ান। কিয়ামতের দিন রোজাদারগণই শুধু সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। তাদের ছাড়া অন্য কেউ সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। সেদিন ঘোষণা করা হবে, রোজাদারগণ কোথায়? তখন তারা দাঁড়িয়ে যাবে এবং সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। যখন তাদের প্রবেশ শেষ হবে, তখন দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। ফলে তারা ছাড়া অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। ‘ (বুখারি-১৭৯৭)

রোজাদারের মুখের গন্ধ মেশকের চেয়েও উত্তম:

নবী করিম (সা.) বলেন, ‘যার হাতে মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবন, সে সত্তার শপথ, রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহ তায়ালার কাছে মেশকের ঘ্রাণ থেকেও প্রিয়। ‘ (বুখারি-১৭৯০)

রোজা ইহকাল ও পরকালের সাফল্যে:

যেমন হাদিসে এসেছে, ‘রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দ : একটি হলো ইফতারের সময়, অন্যটি তার প্রতিপালকের সঙ্গে সাক্ষাতের সময়। ‘ (মুসলিম-১১৫১)

রোজা কিয়ামতের সুপারিশকারী:

আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘রোজা ও কোরআন কিয়ামতের দিন মানুষের জন্য এভাবে সুপারিশ করবে যে রোজা বলবে, হে প্রতিপালক! আমি দিনের বেলা তাকে পানাহার ও সহবাস থেকে বিরত রেখেছি। তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবুল করো। কোরআন বলবে, হে প্রতিপালক! আমি তাকে রাতে নিদ্রা থেকে বিরত রেখেছি, তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবুল করো। তিনি বলেন, ‘এরপর উভয়ের সুপারিশই কবুল করা হবে। ‘ (মুসনাদে আহমদ-৬৬২৬)

রোজা গুনাহ মাফের রাস্তা:

হাদিসে এসেছে, ‘মানুষ যখন পরিবার-পরিজন, প্রতিবেশী ও ধন-সম্পদের কারণে গুনাহ করে ফেলে, তখন নামাজ, রোজা, সদকা সে গুনাহগুলোকে মিটিয়ে দেয়। ‘ (বুখারি-১৭৯৫)

আর রমজান তো গুনাহ মাফ ও মিটিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে আরো বেশি সুযোগ দিয়েছে।

হাদিসে এসেছে, ‘যে রমজান মাসে ইমান ও ইহতিসাবের সঙ্গে রোজা রাখবে, তার অতীতের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। ‘ (বুখারি-২০১৪)

ইহতিসাব : ইহতেসাব হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরস্কার পাওয়া যাবে- এ দৃঢ় বিশ্বাস রেখে নিষ্ঠার সঙ্গে সন্তুষ্টচিত্তে রোজা ও অন্যান্য আমল করা।

রোজার হিকমত, লক্ষ্য ও উপকারিতা:

১. তাকওয়া বা আল্লাহভীতি অর্জন। ২. শয়তান ও কুপ্রবৃত্তির ক্ষমতা দুর্বল করা।
৩. রোজা আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ ও তাঁর দাসত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যম।
৪. ইমানকে দৃঢ় করা, মোরাকাবা ও আল্লাহর ভয় সৃষ্টি করার সুন্দর পন্থা।
৫. ধৈর্য, সবর ও দৃঢ় সংকল্প সৃষ্টির মাধ্যম। ৬. নিজেকে আখিরাতমুখী করার অনুশীলন।
৭. আল্লাহর অনুগ্রহের প্রতি শুকরিয়া ও সৃষ্ট জীবের সেবা করার দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দেয়।
৮. জাগতিকভাবে শারীরিক শক্তি ও সুস্থতা অর্জনের উত্তম উপায়।

সেহরি খাওয়া:

রোজা রাখার জন্য সেহরি খাওয়া সুন্নত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা সেহরি খাও। কারণ সেহরিতে বরকত রয়েছে। ‘ (বুখারি-১৯২৩)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমাদের ও ইহুদি-খ্রিস্টানদের রোজার মধ্যে পার্থক্য হলো সেহরি খাওয়া। ‘ (মুসলিম-২৬০৪)

আরও পড়ুন >> সূরা ইখলাস ও সূরা কাহাফ পাঠের ফজিলতসমুহ

দেরি করে সেহরি খাওয়া:

সেহরির অর্থ হলো যা কিছু রাতের শেষভাগে খাওয়া হয়। সুন্নত হলো দেরি করে সেহরি খাওয়া। রাসুলুল্লাহ (সা.) সর্বদা শেষ সময়ে সেহরি খেতেন। ফজরের ওয়াক্ত আসার পূর্বক্ষণে সেহরি খেলে রোজা রাখতে অধিকতর সহজ হয়, ফজরের নামাজ আদায় করার জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে কষ্ট করতে হয় না। সতর্কতা অবলম্বন করে ফজরের অনেক আগে সেহরি শেষ করা সুন্নত নয়। সেহরির সময় শেষ হলো কি না তা জানবেন নিজের চোখে পূর্বাকাশের শুভ্রতা দেখে, অথবা নির্ভরযোগ্য ক্যালেন্ডার ও নির্ভুল ঘড়ির মাধ্যমে সূক্ষ্ম ও সতর্ক হিসাব করে।

ইফতারে বিলম্ব না করা:

সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে রাতের আগমন ঘটে ও ইফতার করার সময় হয়ে যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মানুষ যত দিন সময় হওয়া মাত্র ইফতার করবে, তত দিন কল্যাণের সঙ্গে থাকবে। ‘ (বুখারি-২৮৫২)

তিনি আরো বলেছেন, ‘যত দিন মানুষ সময় হওয়া মাত্র ইফতার করবে, তত দিন দ্বীন বিজয়ী থাকবে। কেননা, ইহুদি ও খ্রিস্টানরা ইফতারে দেরি করে। ‘ (আবু দাউদ-২৩৫৫)

Ansar VDP আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী চাকরি 2019

Check Also

রোজা ও ইফতারের দোয়া

রোজা ও ইফতারের দোয়া এবং ইফতারের আগে ও পরের দোয়া

Spread the loveরোজা ও ইফতারের দোয়া রোজা ও ইফতারের দোয়া আমাদের সকলকে সঠিক ও সুন্দর …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *