যাকাতের গুরুত্ব ও ফজিলত | ইসলামে যাকাত দেওয়ার নিয়ম

Spread the love

যাকাতের গুরুত্ব ও ফজিলত

যাকাত শব্দের অর্থ কি

যাকাতের গুরুত্ব ও ফজিলত – যাকাত শব্দের অর্থ যা পরিশুদ্ধকর, এটি হলো ইসলাম র্ধমরে পঞ্চস্তম্ভবের একটি। শরীয়তের পরিভাষায় নিজের ধন-সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ দান করা। যাকাত ফরজ করে আল্লাহ পাক মানুষকে এক কঠিত পরীক্ষার সম্মুখীন করেছেন।

যাকাতের শর্তাবলী

ক. সাধারণত নির্ধারিত সীমার অধিক সম্পত্তি হিজরি ১ বছর ধরে থাকলে মোট সম্পত্তরি ২.৫ শতাংশ (২.৫%) বা ১/৪০ অংশ বিতরণ করতে হয়। ইসলামরে পঞ্চস্তম্ভের মধ্যে হজ্জ্ব এবং যাকাত শুধুমাত্র র্শতসাপক্ষে সম্পদশালীদের জন্য ফরয বা আবশ্যিক হয়।

খ. স্বাধীন, র্পূণবয়স্ক মুসলিম নর-নারীর কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে কতিপয় র্শতসাপক্ষে তার উপর যাকাত ফরয হয়ে থাকে।

গ. পবিত্র কুরআনরে সূরা আত-তাওবা যাকাত বন্টনে আটটি খাত আল্লাহ তায়ালা নির্ধারণ করছেন এই খাতগুলো সরাসরি কুরআন দ্বারা নির্দিষ্ট, এবং যেহতেু তা আল্লাহ`র নির্দেশে, তাই এর বাইরে যাকাত বণ্টন করলে যাকাত ইসলামী শরয়িত সম্মত হয় না।

যাকাত কাকে দেবেন

ক. সূরা তওবার ৬০ নং আয়াতে আল্লাহ পাকের ঘোষণা মোতাবেক নিম্ন লিখিত ৮ প্রকারের লোক যাকাতের হকদার। এরা হলেন

i. ফকির (যাদের কিছুই নেই)
ii. মিসকিন (যাদের নিকট নেছাব পরিমাণ সম্পদ নেই)
iii. যাকাত আদায়কারী
iv. ইসলামী বিশ্বাসে পরিপক্ক করার জন্য চিত্তাকর্ষণের নিমিত্তে
v. আল্লাহর পথে জেহাদকাীদের অস্ত্রশস্ত্র ক্রয় করার জন্য
vi. দাসি মুক্তির জন্য
vii. ঋণ ভারাক্রন্ত ব্যক্তি – যাকাতের গুরুত্ব ও ফজিলত অনুযায়ী
viii. বিপদগ্রস্থ মুছাফির।

খ. নিজের আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে যারা অভাবগ্রস্ত তাদেরকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
গ. অন্যান্য গরীব মিসকিন যাদের সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে জানা আছে।

কাকে যাকাত দেবেন না

ক. মা, বাবা, দাদা, দাদী, নানা, নানী, পুত্র, কন্যা, পৌত্র, দৌহিত্র, দৌহিত্রী, স্বামীর যাকাত স্ত্রীকে এবং স্ত্রীর যাকাত স্বামীকে।
খ. সৈয়দ বংশের লোক, হজরত আলী (রা:), হজরত আব্বাস (রা:), হজরত আকীল, হজরত হারিস বিন আ: মোত্তালিব (রা:) এর বংশধরগণকে।
গ. যাকাতের অর্থ দিয়ে মসজিদ, মাদ্রাসা নির্মাণ করা যাবে না। মুরদার দাফন ও মুরদারের পক্ষে তার ঋণ আদায় করা যাবে না।

যেসব জিনিসের উপর যাকাত ফরয

ক. সব ধরনের সম্পদ ও সামগ্রীর ওপর যাকাত ফরয হয় না। শুধু সোনা-রুপা, টাকা-পয়সা, পালিত পশু এবং ব্যবসার পণ্যে যাকাত ফরয হয়।
খ. সোনা-রুপার অলংকার সর্বদা বা কালেভদ্রে ব্যবহৃত হোক কিংবা একেবারেই ব্যবহার না করা হোক সর্বাবস্থাতেই তার যাকাত দিতে হবে।
গ. অলংকার ছাড়া সোনা-রুপার অন্যান্য সামগ্রীর ওপরও যাকাত ফরয হয়।
ঘ. জামা-কাপড় কিংবা অন্য কোনো সামগ্রীতে সোনা-রুপার কারুকাজ করা থাকলে তা-ও যাকাতের হিসাবের অন্তর্ভুক্ত হবে এবং যে পরিমাণ সোনা-রুপা কারুকাজে লেগেছে অন্যান্য যাকাতযোগ্য সম্পদের সঙ্গে তারও যাকাত দিতে হবে।
(সোনা-রুপা ছাড়া অন্য কোনো ধাতুর অলংকার ইত্যাদির উপর যাকাত ফরয নয়। তদ্রূপ হিরা, মণি-মুক্তা ইত্যাদি মূল্যবান পাথর ব্যবসাপণ্য না হলে সেগুলোতেও যাকাত ফরয নয়)
ঙ. মৌলিক প্রয়োজন থেকে উদ্ধৃত্ত টাকা-পয়সা নিসাব পরিমাণ হলে এবং এক বছর স্থায়ী হলে বছর শেষে তার যাকাত আদায় করা ফরয হয়। ব্যাংক ব্যালেন্স, ফিক্সড ডিপোজিট, বন্ড, সার্টিফিকেট ইত্যাদিও নগদ টাকা-পয়সার মতোই। এসবের ওপরও যাকাত ফরয হয়।

চ. টাকা-পয়সা ব্যবসায় না খাটিয়ে এমনি রেখে দিলেও তাতে যাকাত ফরয হয়।
ছ. হজ্বের উদ্দেশ্যে কিংবা ঘর-বাড়ি নির্মাণ, ছেলে-মেয়ের বিয়ে-শাদি ইত্যাদি প্রয়োজনের জন্য যে অর্থ সঞ্চয় করা হচ্ছে তা-ও এর ব্যতিক্রম নয়। সঞ্চিত অর্থ পৃথকভাবে কিংবা অন্যান্য যাকাতযোগ্য সম্পদের সাথে যুক্ত হয়ে নিসাব পরিমাণ হলে এবং নিসাবের ওপর এক বছর অতিবাহিত হলে যাকাত ফরয হবে। বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই তা যদি খরচ হয়ে যায় তাহলে যাকাত ফরয হবে না।
জ. দোকান-পাটে যা কিছু বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে রাখা থাকে তা বাণিজ্য-দ্রব্য। এর মূল্য নিসাব পরিমাণ হলে যাকাত আদায় করা ফরয।
ঝ. ব্যবসার নিয়তে কোনো কিছু ক্রয় করলে তা স্থাবর সম্পত্তি হোক যেমন জমি-জমা, ফ্ল্যাট কিংবা অস্থাবর যেমন মুদী সামগ্রী, কাপড়-চোপড়, অলংকার, নির্মাণ সামগ্রী, গাড়ি, ফার্নিচার, ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী, হার্ডওয়ার সামগ্রী, বইপুস্তক ইত্যাদি, তা বাণিজ্য-দ্রব্য বলে গণ্য হবে এবং মূল্য নিসাব পরিমাণ হলে যাকাত দেওয়া ফরয হবে।

যেসব জিনিসের উপর যাকাত ফরয নয় (যাকাতের গুরুত্ব ও ফজিলত)

ক. গৃহ সামগ্রী যেমন- হাঁড়ি, পাতিল, থালা, কাপড়, জুতা, খাট, আলমারী, চেয়ার, টেবিল, ব্যবহার হোক বা না হোক।
খ. নিজ বসতবাড়ি, ভাড়া দেয়ার বাড়ি, দোকান, মিল, ফ্যাক্টরী, গাড়ী (যাবতীয়)।
গ. দোকানে ব্যবহৃত জিনিসের যেমন- আলমারী, র্যাক, পাল্লা, বাটখারা ইত্যাদি যা ব্যবসার কাজে সহায়ক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
ঘ. ভাড়া দেয়ার জন্য ক্রয়কৃত থালা, বাসন,হাঁড়ি পাতিল, সামিয়ানা, ত্রিপল, বাঁশ ইত্যাদি।
ঙ. স্ত্রীলোকের ব্যবহার্য কাপড় যত মূল্যবানই হোক।
চ. ব্যাংক ঋণ, ধারকৃত টাকা, ব্যবসার জন্য বাকিতে আনা দ্রব্যসামগ্রী।

পরিশেষে, ইসলাম আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা কতৃক মনোনীত একটি পরিপুর্ন জীবন বিধান। তিনি মানুষে সর্বাঙ্গীন কল্যাণের জন্য’গাইডবুক’হিসাবে মহা গ্রন্থ আল-কুরআনুল কারীম অবতীর্ণ করেছেন এবং মহানবী (সা:) কে সত্যের দিশারী হিসাবে এ দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। সুন্দর পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের জন্য দরকার সুসম ভারসাম্যপুর্ন অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, যাকাত তেমনি একটি ।

You read the content. As a result, You gained.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *