মানুষ পরকীয়া কেন করে – এই প্রশ্নের উত্তর অনেকগুলো দিক থেকে খুঁজে পাওয়া যায়। সামাজিক, মানসিক, ব্যক্তিগত, এমনকি জৈবিক কারণও এর সঙ্গে জড়িত। মানুষ পরকীয়া কেন করে নিচে বিষয়টি বিস্তারিতভাবে পয়েন্ট আকারে আলোচনা করা হলো:
মানুষ পরকীয়া কেন করে এর কারণসমূহ
- বৈবাহিক জীবনে অশান্তি বা অসন্তুষ্টি
- দাম্পত্য জীবনে ঝগড়া-বিবাদ, মানসিক অশান্তি বা ভালোবাসার অভাব থাকলে মানুষ বাইরের সম্পর্ক খোঁজে।
- শারীরিক চাহিদা পূরণ না হওয়া
- দম্পতির মধ্যে যৌন চাহিদা যদি মেটানো না যায়, অনেকেই বিকল্প খোঁজে এবং পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে।
- মনোযোগ ও যত্নের অভাব
- এক পক্ষ যদি সঙ্গীকে যথেষ্ট সময়, ভালোবাসা ও যত্ন না দেয়, অন্য পক্ষ তা অন্য কোথাও খুঁজে নিতে পারে।
- নতুনত্ব ও রোমাঞ্চ খোঁজা
- মানুষ পরকীয়া কেন করে – দীর্ঘ সময় একই সম্পর্কে থেকে অনেকেই একঘেয়েমি অনুভব করে এবং নতুন কারও সাথে সম্পর্ক করে রোমাঞ্চ উপভোগ করতে চায়।
- প্রতিশোধের মনোভাব
- সঙ্গী যদি অবিশ্বাস করে বা অবহেলা করে, অনেকেই প্রতিশোধ হিসেবে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে।
- আবেগ ও মানসিক সমর্থন পাওয়া
- অনেকে শারীরিক কারণে নয়, বরং আবেগিক সমর্থন ও বোঝাপড়া পাওয়ার জন্য পরকীয়ায় জড়ায়।
- সামাজিক ও কর্মস্থল পরিবেশ
- অফিস, বন্ধু মহল কিংবা ঘনিষ্ঠ সামাজিক সম্পর্কের মাধ্যমেও ধীরে ধীরে পরকীয়া গড়ে উঠতে পারে।
- অতিরিক্ত স্বাধীনতা ও সুযোগ
- প্রযুক্তি, সোশ্যাল মিডিয়া, মোবাইল ফোনের সহজ ব্যবহার অনেক সময় পরকীয়ার সুযোগ তৈরি করে।
- নৈতিকতার অভাব বা চরিত্র দুর্বলতা
- মানুষ পরকীয়া কেন করে তা কেউ কেউ নৈতিক মূল্যবোধকে গুরুত্ব না দিয়ে শারীরিক আকর্ষণ ও ক্ষণিক আনন্দের জন্য পরকীয়ায় লিপ্ত হয়।
- জীবনধারার পরিবর্তন
- আধুনিক ব্যস্ত জীবন, বিদেশে কাজ, দূরে থাকা ইত্যাদি কারণে দূরত্ব তৈরি হয় এবং অন্য সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
- জৈবিক ও মানসিক প্রবৃত্তি
- মানুষের স্বভাবজাত প্রবৃত্তি এবং হরমোনজনিত প্রভাবও অনেক সময় পরকীয়া প্রবণতায় ভূমিকা রাখে।
পরকীয়া মূলত দাম্পত্য জীবনে অসন্তুষ্টি, মানসিক ও শারীরিক চাহিদা পূরণ না হওয়া, সুযোগ ও পরিবেশের কারণে ঘটে। তবে সব মানুষের ক্ষেত্রে কারণ একই নয়। মানুষ পরকীয়া কেন করে – শক্ত পারিবারিক বন্ধন, পারস্পরিক বিশ্বাস, ভালোবাসা ও বোঝাপড়া থাকলে পরকীয়া এড়ানো সম্ভব।
মানুষ পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়া রোধ করার জন্য পরিবারে, ব্যক্তিগত জীবনে ও সমাজে কিছু বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়া যায়। নিচে সমাধানের উপায়গুলো পয়েন্ট আকারে দেওয়া হলো:
More :: কল এলে মোবাইল ডাটা বন্ধ হয়? কিভাবে এর সমাধান করা যায়
পরকীয়া প্রতিরোধ ও সমাধানের উপায়
🏡 দাম্পত্য জীবনে করণীয়
- পারস্পরিক বিশ্বাস ও সততা বজায় রাখা
- স্বামী-স্ত্রী একে অপরের সাথে খোলামেলা ও সত্যবাদী আচরণ করলে সন্দেহ ও অবিশ্বাস কমে যায়।
- মানসিক ও আবেগিক যত্ন নেওয়া
- একে অপরের আবেগ, দুঃখ-সুখ বোঝা এবং মানসিক সমর্থন দেওয়া জরুরি।
- শারীরিক চাহিদা পূরণ করা
- সুস্থ দাম্পত্য জীবনে যৌন সম্পর্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একে অপরের চাহিদা ও সীমাবদ্ধতা বোঝা উচিত।
- সময় দেওয়া ও একসাথে সময় কাটানো
- একসাথে ভ্রমণ, আড্ডা বা পারিবারিক অনুষ্ঠান উপভোগ করলে সম্পর্ক দৃঢ় হয়।
- সমস্যা হলে আলাপ-আলোচনা করা
- ঝগড়া বা অবহেলার পরিবর্তে শান্তভাবে কথা বলে সমাধান করা জরুরি।
👩❤️👨 ব্যক্তিগত জীবনে করণীয়
- নৈতিকতা ও মূল্যবোধ বজায় রাখা
- ধর্মীয় চর্চা, নৈতিক শিক্ষা ও আত্মসংযম পরকীয়া থেকে বিরত রাখে।
- আত্মনিয়ন্ত্রণ ও আত্মসম্মান গড়ে তোলা
- ক্ষণিক আনন্দের জন্য দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক নষ্ট করা উচিত নয়।
- খারাপ পরিবেশ ও সম্পর্ক এড়িয়ে চলা
- সন্দেহজনক বন্ধুত্ব, গোপন আলাপচারিতা ও অতিরিক্ত কাছাকাছি আসা থেকে দূরে থাকা দরকার।
🌍 সামাজিক ও প্রযুক্তিগত দিক
- সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে সতর্কতা
- অপ্রয়োজনীয় চ্যাট, বন্ধুত্ব বা গোপন সম্পর্ক এড়িয়ে চলা।
- সুস্থ সামাজিক পরিবেশ তৈরি করা
- পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করলে পরকীয়ার সুযোগ কমে যায়।
- পরামর্শ ও কাউন্সেলিং গ্রহণ করা
- গুরুতর সমস্যায় মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বা দাম্পত্য কাউন্সেলরের সাহায্য নেওয়া কার্যকর হতে পারে।
👉 শেষকথা:
পরকীয়া প্রতিরোধে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে বিশ্বাস, ভালোবাসা, যত্ন এবং খোলামেলা যোগাযোগ। সম্পর্ককে গুরুত্ব দিয়ে একে অপরের প্রতি সম্মান দেখানোই সুস্থ ও সুন্দর দাম্পত্য জীবনের মূল চাবিকাঠি।
বিস্তারিত জানতে Google News অনুসরণ করুন