করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্তে বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত সব দৃঢ় পদক্ষেপে দেশবাসী অনেকটা আস্থা ফিরে পেয়েছে। আপনার সাহসী পদক্ষেপেই আমরা সবাই সম্মিলিত ভাবে দেশকে করোনা ভাইরাস থেকে হেফাজত রাখবো ইনশআল্লাহ। মুজিব শতবর্ষেই মহান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের আত্মস্বীকৃত হত্যাকারীকে পুনরায় ফাঁসির রায় কার্যকর করে দেশকে কলঙ্ক মুক্ত করার জন্য আপনার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
করোনা পরিস্থিতিতে দেশকে সুরক্ষিত রাখার জন্য এবং জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য ইতোমধ্যে আপনার ৯২ হাজার কোটি টাকার বিশাল প্রণোদনা প্যাকেজ ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক এনডিডিসহ (নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী) সকল প্রতিবন্ধী ব্যাক্তিদের জন্য ৩,০০,০০,০০০ (তিন কোটি) টাকা বরাদ্দ প্রদানে প্রতিবন্ধীসহ সকল জনগনের মনে মানষিক ভাবে একটু হলেও প্রশান্তি এনে দিয়েছে। আপনার বিচক্ষণতার কারনে আপনার প্রতি জনগনের আস্থা আরো বহুগুন বেড়ে গেছে।
সরকারি, বেসরকারি (এমপিও ভুক্ত) ও স্বায়ত্বশাসিত সকল শিক্ষক কর্মচারীদের আপাতত কোন সমস্যা না থাকলেও বড় বিপদের মধ্যে পড়েছি আমরা বিশেষায়িত বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক-কর্মচারিগণ। আমরা সরকার থেকে এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে কোন আর্থিক সুবিধা পাই না। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে আমরা বিশেষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারিরা অত্যন্ত মানবেতর জীবন যাপন করছি।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকাকালীন আমরা সংসারের নিত্যপ্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানোর জন্য কেউ কেউ প্রাইভেট টিউশনি ও ব্যবসা বানিজ্য করে কোন রকম সংসার চালাতাম। যেটাকে বলা যায় “নুন আনতে পানতা ফুরায়” অবস্থা। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সেগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আর চলতে পারছি না। কারো কাছে সাহায্য ও চাইতে পারছি না। এখন আবার রমজান মাস।
পরিস্থিতি বর্তমানে খুবই খারাপ অবস্থা। কারো কাছে সাহায্য চাওয়া তো দুরের কথা সাহায্যের কথা মনে আসতেই লজ্জায় মাথা হেট হয়ে যায়। কারন আমিতো শিক্ষক,আত্মসম্মান বোধ টুকু ছাড়া আমাদের তো আর কিছুই নেই। এহেন পরিস্থিতিতে উপরে আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমত আর নিচে আপনিই একমাত্র ভরসা। আপনার সাহায্য এই মুহুর্তে একান্ত প্রয়োজন।
আমরা সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ও স্বীকৃতির জন্য আবেদনকৃত শিক্ষক-কর্মচারী। দীর্ঘ ১০ বছর বিশেষ বিদ্যালয় সমূহ এমপিওভ‚ক্ত না থাকার কারনে আমরা সরকার থেকে কোন আর্থিক সুবিধা পাই না। সরকার ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক নীতিমালা অনুযায়ী সরকারী বিধি মোতাবেক শিক্ষক-কর্মচারী হিসেবে আমাদেরকে নিয়োগ দিয়েও কোনরকম আর্থিক সহযোগিতা করা হয় না।
আরও পড়ুন>> স্বপ্নে বাড়ী ঘর দেখলে আপনার কি হতে পারে -পড়ুন
এমতাবস্থায় সংসারের নিত্যপ্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানোর জন্য প্রাইভেট টিউশনি ও ব্যবসা বানিজ্য করে কোন রকম চলত কিন্তু বর্তমানে লকডাউনের কারনে ঘরে বসে অনাহারে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। তার পর আবার শিশুখাদ্য, বিদ্যুৎ বিল, পানির বিল, গ্যাস বিলের খরচ। করোনায় আপনার ঘোসিত ৯২ হাজার কোটি টাকার বিশাল প্রণোদনা প্যাকেজে প্রায় ১ কোটি ৯০ লক্ষ পরিবার সহায়তা পাবে।
সেখান থেকে আমাদের জন্য কি কিছু অংশ জন্য বরাদ্দ আছে ? নাকি প্রতি বছরের মতো আর্থিক বাজেটের আয়ের অংশীদার নয় শুধু খরচের অংশীদারই হতে হবে? দশ বছর বিনা বেতনের চাকরিতে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ভরা যৌবনের সময় টুকু শেষ করে খালি হাতে এখন হতাশা এবং আতঙ্ক গ্রস্থ্যের মধ্যে দিন অতিবাহিত করছি।
কখন যেন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাই, ইতোমধ্যে বিশেষায়িত বিদ্যালয়ের একজন প্রধান শিক্ষক আক্রান্ত্র হয়েছেন। মারা যাওয়ার আগে যেন শুনে যেতে পারি বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা, দেশ মাতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের জন্য অন্ততঃ কিছু একটা করে গেছেন। শুধু আমি একা নই, আমার মত সারাদেশে স্বীকৃতি প্রাপ্ত বিশেষায়িত বিদ্যালয় আছে ৬২টির মতো। আর স্বীকৃতি না পাওয়া বিশেষায়িত বিদ্যালয় আছে আরও ১২০০টি (সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে)।
এতে মোট শিক্ষক-পেশাজিবী রয়েছে-সতের হাজার ৬৬৮জন এবং কর্মচারী রয়েছে-তের হাজার ৮৫২জন মোট- প্রায় আঠাশ হাজার ৫৫০জন শিক্ষক- কর্মচারী আজ মানবেতর জীবন যাপন করছে। দেশে দীর্ঘদিন সরকার প্রধান হিসেবে বঙ্গবন্ধুর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি দেশের প্রতিটি মানুষের দুঃখ দূর্দশা ও অভাব মোচনের জন্য দিনরাত সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। এটা এদেশের মানুষ সহ পৃথিবীর সবাই জানে। সেই প্রধানমন্ত্রীর নিকট থেকে হাতে গোনা মাত্র কয়েক শত বিশেষায়িত বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় আনতে পারছেন না।
আরও পড়ুন>> ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড ব্রাঞ্চ ও জোনাল অফিস
এই ব্যর্থতার দায় ভার আসলে কার ?
বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে আমার প্রস্তাব ঃ
১। লকডাউনের মধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বা সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ফান্ড থেকে সকল বিশেষায়িত বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের সম্মানিভাতা প্রদান করা প্রয়োজন। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে অনেক টাকা অলস পড়ে থেকে লাভ কি? যদি জনকল্যাণে কাজে না লাগে। সেখান থেকে এই শিক্ষক-কর্মচারীদের সম্মানি ভাতা দেওয়া হলে মাসে মাত্র কয়েক কোটি টাকা খরচ হবে। বিশেষ শিক্ষার্থীদের শিক্ষার গুণগতমান বৃদ্ধি পাবে এবং গতিশীল হবে।
২। বর্তমান সরকার প্রধান করোনার কারনে অনেক দীর্ঘমেয়াদী সাজাপ্রাপ্ত আসামীদের সাধারন ক্ষমা করে জেল থেকে মুক্তি দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সুযোগ দিয়ে মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছেন।
বিভিন্ন গবেষণার রিপোর্টে জানা যায় কোভিড-১৯ এ নাকি লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা যাবে সেই হিসেবে আমি বাঁচব কি না জানি না তবে মুজিব শতবর্ষে সরকারের সাহসী পদক্ষেপের অংশ হিসেবে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর পুর্বে অন্ততঃ যেন এই অবহেলিত শিক্ষক হিসেবে শুনে যেতে পারি যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকেও কয়েদীদের মতো সাধারণ ক্ষমা ঘোষনা করে দীর্ঘ ১০ বছর পর সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় বিশেষ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতনের ঘোষনা দিয়েছেন।
মোঃ সিমানুর রহমান
প্রধান শিক্ষক
ছায়া প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়
লালপুর, নাটোর।
সভাপতিঃ বাংলাদেশ বেসরকারি অটিজম-প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশন।