কসর নামায কখন এবং কিভাবে পড়তে হয়

Spread the love

কসর নামায আভিধানিক অর্থ কম করা, সংক্ষেপ করা। ইসলামী শরী’আতে কোন ব্যক্তি ৪৮ মাইল দূরে বা ততোধিক দূরত্বের সফরে বের হলে এর কোথাও ১৫ দিন বা ততোধিক সময় অবস্থানের নিয়্যাত না করলে সে মুসাফির বলে গণ্য হবে।

মুসাফিরকে চার রাকা’আত বিশিষ্ট ফরয নামায-যোহর, আসর এবং এশা সংক্ষেপ করে বা কমিয়ে দু’ রাকাআত আদায় করতে হবে। এটাই হলো কসর বা সংক্ষেপকরণ।

কেউ তিন মঞ্জিল, অর্থাৎ ৪৮ মাইলের কম দূরত্বে যাওয়ার সিদ্ধান্তে ঘর থেকে বের হলে তাকে পূর্ণ চার রাকাআত নামাযই আদায় করতে হবে। কোন স্থানে পায়ে হেঁটে বা উটে চড়ে যেতে তিন দিন লাগে আর উড়োজাহাজ, স্টিমার, লঞ্চ, ট্রেন বা অন্য কোন দ্রুতযানে অপেক্ষাকৃত কম সময় লাগে, তখনও সে মুসাফির হিসাবে গণ্য হবে এবং নামাযে কসরই করতে হবে।

কোন মুসাফির যদি পনের দিনের কম সময়ের নিয়ত করে ভ্রমণে বের হয়, কিন্তু নিয়ত ছাড়া পনের দিনের বেশি অবস্থান করে, এমতাবস্থায়ও তাকে কসরই করতে হবে। যারা নিজ বাড়িতে অবস্থান করে অথবা দূরে কোথাও গিয়ে পনের দিনের বেশি সময় থাকার নিয়্যত করে শরী’আতের দৃষ্টিতে সেও মুকীম। আর মুকীমকে পুরো নামাযই আদায় করতে হয়, কসরের বিধান তার জন্য নয়।

আরও পড়ুন >> বাংলাদেশ ব্যাংক সহকারী পরিচালক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি

এ বিধান তিন বা দু’রাকা’আত বিশিষ্ট ফরয নামাযের জন্য প্রযোজ্য নয়। তাই ফজর এবং মাগরিবের নামাযের কোন কসর নেই।

কুরআন মাজীদে বর্ণিত হয়েছেঃ

واذا ضربتم في الأرض فليس عليكم جناح أن تقصروا من الصلوة .

তোমরা যখন জমিনে সফর করবে তখন তোমাদের জন্য নামাযে কর করায় কোন আপত্তি নেই। (সূরা নিসা, ৪:১০১)।

কসরের নামায সম্পর্কে হাদীসে বর্ণিত হয়েছেঃ

من المدينة الى مكة فگانا عن أنس رضي الله عنه قال خرجنا مع رسول الله يصلي ركعتين ركعتين حتى رجعنا إلى المدينة قيل أقمتم بمگه ليلا قال آقا بها

হযরত আনাস (রা) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সঙ্গে মদীনা থেকে মক্কাতিমুখে রওনা হয়েছিলাম। তিনি ফরয নামায দু’রাকাআত আদায় করলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা মদীনায় ফিরে এলাম। এ সময় হযরত আনাস (রা)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো, আপনারা কি সেখানে কিছুদিন অবস্থান করেছিলেন ? তিনি উত্তরে করলেন, আমরা দশদিন অবস্থান করেছিলাম মুসলিম মিল্লাতের জন্য নামাযের কর বা সংক্ষেপকরণ এক বিশেষ নি’আমত। মহান আল্লাহর দয়া, বিশেষ অনুগ্রহ। তাঁর বান্দাদের সফরের কষ্ট লাঘব করার জন্যই নামাযে কসরের বিধান রেখেছেন। এর অমর্যাদা করে পূর্ণ নামায আদায় করলে গুনাহ্ হবে।

কসরের নিয়মাবলীঃ

১। কেবলমাত্র চার রাকাআতবিশিষ্ট ফরয নামাযে করের বিধান রয়েছে। যেমনঃ যোহর, আছর ও এশার ফরয নামায চার রাকাআতের পরিবর্তে দু’রাকাআত আদায় করে করতে হয়।
২। মুসাফির নামাযে ইমামত করলে মুক্তাদীদের আগেই জানিয়ে দেবেন এবং ইমাম দু’রাকাআত নামায শেষ করে সালাম ফিরালে মুক্তাদীরা উঠে বাকি নামায শেষ করবেন।
৩। মুসাফির মুকীম ইমামের পেছনে নামায আদায় করলে ইমামের অনুসরণে পূর্ণ চার। রাকা’আতই আদায় করতে হবে।
৪। মুসাফিরের প্রবাসের কোন নামায যদি বাড়ি ফিরে এসে কাযা করতে চায়, তাহলে তাকে কর আদায় করতে হবে। আবার বাড়ি থাকাকালীন কোন নামাযের কাযা প্রবাসে আদায় করতে চাইলে পুরো চার রাকাআতই আদায় করতে হবে।
৫। কেউ অসৎ উদ্দেশ্যে মুসাফির সাজলে শরীআতের দৃষ্টিতে সে মুসাফির হিসাবে পরিগণিত হবে না এবং তার জন্য কসরের হুকুম হবে না।
৬। কসর নামাযের জন্য নিদিষ্ট ওয়াক্তের নিয়্যাত উল্লেখ করতে হবে। যথা, আসরের নামাযের কসর আদায় করতে হলে নিয়্যাত করতে হবে এভাবেঃ

نويت أن أقصر لله تعالی رکعت صلواة القصر فرض الله تعالی متوجها إلى جهة الكبة الشريفة الله اكبر .

কিবলামুখী দাঁড়িয়ে আল্লাহর ওয়াস্তে তাঁরই নির্দেশে আসর ওয়াক্তের ফরয চার রাকাআতের স্থলে দু’রাকাআত নামায আদায় করছি, আল্লাহু আকবার।

আল্লাহ্ তা’আলার পক্ষ থেকে মুসাফিরের জন্য কসর নামায একটি বিশেষ অনুগ্রহ। সফরের ব্যস্ততায় পুরো নামায আদায় করা যে বান্দার পক্ষে কষ্টসাধ্য, তা মহান প্রভু সম্যক জানা আছেন বিধায়ই প্রিয় বান্দাদের জন্য নিয়ামত স্বরূপ বিশেষ বিধান জারী করেছেন।

আরও পড়ুন >> কৃষি ব্যাংকে লাখ থেকে কোটি টাকার ডিপোজিট স্কীম

কসর নামাযের ফযীলতঃ

কসর নামাযের ফযীলত অপরিসীম। আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় বান্দাদের সার্বিক কল্যাণের প্রতি লক্ষ্য রেখেই করের বিধান দিয়েছেন। বস্তুত মানুষের মঙ্গলের জন্যই শরী’আতের সব বিধান। যদিও বাহ্যিকভাবে মনে হয় যে, চার রাকাআত নামাযের স্থলে দু’রাকা’আত পড়াতে সাওয়াব কমে যাবে। কিন্তু আল্লাহর কাছে এই নামাযই চার রাকা’আত বলেই পরিগণিত হবে।

মুসাফির অবস্থায় নামায কসর করলে তাতে কোন গুনাহ্ নেই, বরং আল্লাহর বিধান অনুসরণ করার জন্য পূর্ণ সাওয়াব হবে।

সফরে মুসাফিরকে নানাবিধ অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়, ব্যস্ত সময় কাটাতে হয়। সফরের সময় যানবাহনে চলাচলেও কষ্ট রয়েছে। বান্দার এসব কষ্টের কারণেই আল্লাহ্ তা’আলা কসর নামাযের বিধান দিয়েছেন। তা না হলে পুরো নামায আদায় করা মুসাফিরের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে পড়তো।

আল্লাহ পাকের নির্দেশ পালনে সার্বিক ফযীলত নিহিত রয়েছে, আর সে নির্দেশ অনুসারেই মুসফিরকে কসর আদায় করতে হয়।

Check Also

পবিত্র রমজানে

পবিত্র রমজানে আল্লাহর নৈকট্য লাভের 10 আমল

Spread the loveপবিত্র রমজানে আল্লাহর নৈকট্য ও পুণ্য লাভের সর্বোত্তম সময়। কেননা রমজান মাসে আল্লাহ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *