ঐতিহাসিক ময়না যুদ্ধ দিবস আজ পালিত হচ্ছে

Spread the love

ঐতিহাসিক ময়না যুদ্ধ – আজ ৩০ শে মার্চ নাটোরের লালপুর উপজেলার ওয়ালিয়া ইউনিয়নের ঐতিহাসিক ‘ময়না যুদ্ধ’ দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে উত্তরবঙ্গে সর্বপ্রথম উপজেলার ময়না গ্রামে পাকিস্তানী হানাদারবাহিনীর সাথে লালপুর উপজেলার মুক্তি পাগল জনতা, ইপিআর ও আনসার বাহিনীর সম্মুখ যুদ্ধ হয়েছিলো।

এ যুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর ২৫ রেজিমেন্ট ধ্বংস হয় এবং বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল আসলাম হোসেন খান ওরফে রাজা খান জনতার হাতে ধরা পড়ে। পরের দিন ৩১ মার্চ লালপুর শ্রীসুন্দরী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

আরও পড়ুন >> জীবন বীমা কর্পোরেশন । নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি

 

ঐতিহাসিক ময়না যুদ্ধ – এই ময়না যুদ্ধে প্রায় অর্ধশত বাঙ্গালি শহীদ ও ৩২ জন আহত হন। সেই থেকে দিবসটিকে ঐতিহাসিক ‘ময়না যুদ্ধ’ দিবস হিসাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন নানা কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে পালন করে আসছে। প্রতিবছর এ উপলক্ষে ময়ন স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গনে মিলাদ মাহফিল ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

তবে এবছর করোনা ভাইরাসের প্রদুর্ভাবের কারনে সকল প্রকার অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঐ এলাকার স্থানীয় ইউপি সদস্য হারুনর রশিদ।

আরও পড়ুন >> ট্রাস্ট ব্যাংক বাড়ী নির্মানের জন্য ১০ লক্ষ টাকা দিচ্ছে সহজেই

 

যুদ্ধের প্রেক্ষাপট ও বিশদ বিবরণ

  • তারিখ: ১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মাত্র চতুর্থ দিনে।

  • পরিস্থিতি: পাক সেনাবাহিনীর ২৫ নম্বর রেজিমেন্ট, তিনটি জিপ ও ছয়টি ট্রাক নিয়ে পাবনার নগরবাড়ি থেকে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। পথিমধ্যে দাশুড়িয়া ও রাজাপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধে তাদের দল বিভক্ত হয়ে পড়ে।

  • ময়না গ্রামে প্রবেশ ও প্রতিরোধ: পাক বাহিনী কাঁচা রাস্তা দিয়ে ওয়ালিয়া ইউনিয়নের ময়না গ্রামে ঢুকে পড়ে এবং বিজিপ ও ঢালিয়া জনতা, সাঁওতাল, তিরন্দাজ মুক্তি‑পাগল জনতা, ইপিআর, আনসারসহ স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা একাত্ম হয়ে তাদের ঘিরে ফেলেন।

  • যুদ্ধের ফলাফল: প্রায় ৪০ জন বাঙালী শহীদ হন, ৩২ জন আহত হন। একই সময় পাক বাহিনীর মেজর জেনারেল আসলাম হোসেন খান (রাজা খান)সহ সাতজন সৈন্য জনতার হাতে আটক হন এবং পরবর্তীতে পালাতে গিয়ে তারা মারা যায় বা জনতাই পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে।

  • সৈয়দ আলী মোল্লার ছেলের স্মৃতি: আবুল হাসেম মোল্লা—যিনি তখন কলেজ ছাত্র—বর্ণনা করেন, মেজর রাজা খানসহ আটক সৈন্যদের জনতা পিটিয়ে হত্যা করে।

যুদ্ধের গুরুত্ব ও স্মৃতিচিহ্ন

  • উত্তরাঞ্চলের প্রথম ও একমাত্র সম্মুখযুদ্ধ: ঐ সময় লালপুরে এটাই মুক্তিযুদ্ধের অগ্রভাগে সংঘটিত একমাত্র সরাসরি প্রতিরোধ যুদ্ধ বলে বিবেচিত হয়।

  • স্মৃতিসৌধ: ১৯৭৮ সালে সাবেক সংসদ সদস্য মমতাজ উদ্দীনের উদ্যোগে ময়না স্মৃতি সৌধ নির্মিত হয়, যেখানে ১৫–১৭ জন শহীদের নাম সংরক্ষিত আছে।

  • অপ্রতুল রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি: নানা প্রতিবেদন অনুযায়ী, শহীদ ও আহত মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার আজো রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, সুবিধা বা অর্থনৈতিক সহায়তা থেকে বঞ্চিত। স্মৃতিসৌধ এবং শহীদদের কবরগুলোও প্রযমনীয়ভাবে রক্ষিত হয়নি।

পরবর্তী প্রতিশোধ ও নির্মম গণহত্যা

  • পরবর্তীতে প্রতিশোধ: ময়না যুদ্ধের পর প্রতিশোধ হিসাবে পাক বাহিনী নাটোরে ব্যাপক গণহত্যা চালায়—যেখানে বিভিন্ন গ্রামের নিরীহ মানুষ ও শ্রমিকদের নির্মম হত্যা করা হয়, যেমন নর্থ বেঙ্গল চিনিকল, চংধুপইল, বিলমাড়িয়া, নীলকুঠি প্রভৃতি স্থানগুলিতে।

যুদ্ধের প্রতিচ্ছবি—“জীবন্ত স্মৃতিসৌধ”

  • ময়না গ্রামের একটি আমগাছ “জীবন্ত স্মৃতিসৌধ” হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে—সেখানে আটক মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে আমগাছে বাধা হয়, ভোরভোর গুলি চালানো হয় এবং এক যুবক আব্দুস সামাদ প্রাণ বাঁচিয়ে পালাতে সক্ষম হন।

  • সারসংক্ষেপ:

    বিষয় ঐতিহাসিক ময়না যুদ্ধ বিবরণ
    তারিখ ১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ
    স্থান লালপুর উপজেলা, ওয়ালিয়া ইউনিয়নের ময়না গ্রাম
    প্রতিরোধকারীরা সাধারণ জনগণ (সাঁওতাল, তিরন্দাজ), মুক্তি‑পাগল জনতা, ইপিআর, আনসার ইত্যাদি
    প্রকাশযোদ্ধা ও শহীদ প্রায় ৪০ জন শহীদ, ৩২ আহত, পাক বাহিনীর উচ্চ পদস্থ অফিসারসহ সাতজন আটক ও নিহত
    মুহূর্ত উত্তরাঞ্চলের প্রথম সম্মুখ যুদ্ধ হিসেবে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের প্রতীক
    স্মৃতিসৌধ ১৯৭৮ সালে নির্মিত, শহীদদের সম্মানে
    চ্যালেঞ্জ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির অভাব, পরিবার ও স্মৃতিচিহ্নের রক্ষণের অপ্রতুলতা

    ঐতিহাসিক ময়না যুদ্ধ – ময়না যুদ্ধের স্মৃতি আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের সাহসিকতা, ঐক্য এবং ত্যাগের অম্লান প্রমাণ। লোকজনের হাতে তৈরি এই প্রতিরোধ ইতিহাস বাঙালির অস্তিত্বের জন্য কতটা ন্যূনতম হলেও একটি গৌরবময় অধ্যায়। আপনি যদি আরও কোন দিক—মূলত স্থানের ভৌগোলিকতা, শহীদদের নাম, বা শিশুটির বর্ণনা—সম্পর্কে জানতে চান, জানালে আমি বিস্তারিত জানাতে প্রস্তুত।

Check Also

কুমিল্লায়

কুমিল্লায় 4তলা ছাদ থেকে ফেলে দারোয়ানকে হত্যা

Spread the loveকুমিল্লায়, চান্দিনা – কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার পল্লী বিদ্যুৎ রোডে অবস্থিত একটি ভবনের ছাদে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *