ঈদের নামাজ ও ফজিলত – ঈদের নামাজে ভুল সমুহ
ঈদের নামাজ ও ফজিলত – ঈদ-এর অর্থ আনন্দ, খুশি, আমোদ, আহ্লাদ, উৎসব ইত্যাদি। অর্থ ফিরে আসা, পুনঃ পুনঃ আসা। মুসলমানদের জাতীয় জীবনে ঈদ বারবার আসে। ঈদের দিন অত্যন্ত পুণ্যময়, এদিন ইবাদতের গুরুত্ব রয়েছে। এই বিশেষ দিন মুসলমানদের জীবনে বছরে দু’বার ফিরে আসে।
একটি ঈদুল ফিতর অন্যটি ঈদুল আযহা। ঈদের দিন বিশ্ব-মুসলিম পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঈদগাহে গিয়ে ছোটট-বড়, ধনী-নির্ধন, আমীর-ফকীর একই কাতারে দাড়িয়ে এই বিশেষ ইবাদত করে থাকে।
উম্মতে মুহাম্মদী (সা)-কে আল্লাহ তাআলা বিশেষ কিছু বরকতময় অনুষ্ঠান প্রদান করেছেন, যা অন্য কোন নবী-রাসূলের কাওম লাভ করেনি। তন্মধ্যে পরস্পর ভ্রাতৃত্ব ও ভালবাসা, প্রীতি ও সৌহার্দ্যের এক অনুপম দৃষ্টান্ত প্রদর্শনের অনুষ্ঠান ঈদ।
আরও পড়ুন >> ব্যায়াম কিংবা জিম না করে ওজন কমাবেন কিভাবে
ঈদের দিন মুসলিম মিল্লাতের জন্য এক পরম আনন্দ ও উৎসবের দিন। পূর্ণ একমাস সিয়াম সাধনা আর কঠোর সংযম ও কৃচ্ছতা সাধন শেষে রােযাদারদের অবস্থা উদ্ভাসিত হয় নিম্নের হাদীসে :
للصائم فرحتان فرحة عند فطره وقرحة عند لقاء ربه . .
.
রোজাদারদের জন্য দুটি আনন্দঃ
১. রোজা ভঙ্গের সময়, অর্থাৎ ইফতারের সময় এবং,
২. তার প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাতের সময়।
পূর্ণ একমাস আল্লাহর হুকুমে তারই সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য রােযা রাখার পর ঈদের নামায পড়ার উদ্দেশ্যে মাঠে গেলে একে অপরের হাতে হাত, বুকে বুক রাখলে মুসলমান ভুলে যায়। সারা মাসের উপবাসের কষ্ট।
ঈদের নামায হলো সামাজিক নামায। বছরান্তে দুদিন সমাজের সর্বস্তরের মুসলিম জনতা ঈদের জামা’আতে সানন্দে উপস্থিত হয়। একে অন্যের সাথে সাক্ষাত ও কুশল বিনিময়ের একটা অপূর্ব সুযােগ। তখন ছােট-বড়, ধনী-নির্ধন, আমীর-ফকীর, শিক্ষিতঅশিক্ষিতের কোন ভেদাভেদ থাকে না।
আরও পড়ুন >> অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটার নতুন নিয়ম : যেভাবে কাটবেন ট্রেনের টিকেট
মহান আল্লাহর কাছে আত্মনিবেদনের পর একে অন্যের সাথে বুক মিলিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময়ের যে অনন্য সুযােগ লাভ করা যায়, তার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে ঈদের নামায। ইদুল ফিতরের সময় সমাজের গরীব-দুঃখীকে সাদাকা-ফিতর এবং কুরবানীর মাধ্যমে আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে যে পরিবেশের সৃষ্টি হয় তা-ই দুনিয়াকে বেহেশতের বাগানে পরিণত করে।
পবিত্র ঈদের দিনের অনেক ফযীলত রয়েছে। যারা দুই ঈদের নামায যথারীতি আদায় করে তাদের দু’আ কবুল করে আল্লাহ্ তা’আলা তাদেরকে অফুরন্ত পুরস্কার প্রদানে ধন্য করেন ।
হাদীস শরীফে যে ক’টি রাতে আল্লাহর পক্ষ হতে দু’আ কবূল হবার কথা বলা হয়েছে, তার মধ্যে দুই ঈদের রাত অন্যতম। ঈদ উৎসবের সন্ধিক্ষণে কে কতো দামী এবং সন্দর পোশাক পরলো বা কে কত উন্নতমানের পানাহার করলো সেটা কখনাে বিচার্য নয়, বরং বিচার্য বিষয় হচ্ছে নিজ আত্মাকে কে কতটুকু নিস্পাপ রাখতে পেরেছে, আল্লাহ রাব্বল আলামীনের দরবারে ত্যাগ স্বীকার করে তাঁর নৈকট্য লাভে কে কতটা ধন্য হয়েছে তাই।
ভিডিও >> বর্তমান পরিস্থিতি থেকে মুক্তি লাভের উপায় | হাবিবুল্লাহ কাওছারী
ঈদের দিনের মর্যাদা ও ফযীলত সম্পর্কে মহানবী (সা) ইরশাদ করেছেনঃ
যে ব্যক্তি পুণ্য লাভের অদম্য স্পৃহায় দুই ঈদের রাতে জেগে ইবাদত-বন্দেগীতে মশগুল থাকবে, সেদিন তার অন্তর এতটুকু ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়বে না, যেদিন অন্য সবার অন্তর ভীত-সন্ত্রস্ত মৃতবৎ হয়ে পড়বে।
হাদীসে আছে, যারা ঈদের নামায আদায় করার জন্য ঈদের ময়দানে একত্রিত হয় তাদের সম্পর্কে দয়াময় আল্লাহ্ তাঁর ফিরিশতাদের জিজ্ঞেস করেন, যারা স্বেচ্ছায় দায়িত্ব পালন করে আজ এখানে সমবেত হয়েছে তাদের কী প্রতিদান দেয়া উচিত ? ফিরিশতারা জবাবে বলেন, তাদের পুণ্যময় কাজের সম্পূর্ণ পারিশ্রমিক দেয়া দরকার। তখন আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর ইষ্যতের শপথ করে বলেন, অবশ্যই তিনি তাদের প্রার্থনা কবূল করবেন।
চাকরির খবর >> আর্মি মেডিকেল কলেজ বগুড়া ।। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ২০২২
এরপর আল্লাহ্ তা’আলা ঈদের নামায সমাপনকারী তার নেক বান্দাদের উদ্দেশ্যে ঘােষণা করেন—আমি তােমাদের ক্ষমা করে দিয়েছি। আর তােমাদের কৃত অতীত পাপকে নেকীতে পরিণত করে দিয়েছি। এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন ; নামায সমাপনকারীরা নিস্পাপ অবস্থায় ঈদের মাঠ থেকে স্বগৃহে প্রত্যাবর্তন করে, যেন তারা নবজাত শিশুর ন্যায় নিস্পাপ।
ঈদের নামাযের গুরুত্ব অপরিসীম। ঈদ আসে বিশ্ব-মুসলিমের বাৎসরিক আনন্দের বার্তা নিয়ে, আসে সীমাহীন প্রেম-প্রীতি, ভালােবাসা ও কল্যাণের সওগাত নিয়ে, সেই ঈদকে যথার্থ মর্যাদায় উদ্যাপন করা এবং ঈদের নামায যথাযথভাবে আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের অবশ্য কর্তব্য।
বছরে দু’দিন যে সম্মিলনের ব্যবস্থা মহান আল্লাহ্ করে দিয়েছেন, এর মাধ্যমেই মানুষ পারে কুরআন নির্দেশিত সমাজ নির্মাণ করতে পারে কুরআনী শাসন কায়েমের পদক্ষেপ নিতে, সমাজের কলুষতা বিদূরিত করতে। হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে পরস্পর প্রীতির ডােরে আবদ্ধ হয়ে ঈদের আনন্দের মধ্য দিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়ে তােলা উম্মতে মুহাম্মাদ (সা)-এর অবশ্য কর্তব্য।