ইসলামে আকীদা বা আখেরাত সম্বন্ধে ঈমান – আখেরাত বা পরকাল সম্বন্ধে বিশ্বাস করার অর্থ হল- মৃত্যুর পর থেকে শুরু করে কবর ও তার সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়, হাশর- নশর ও তার সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয় এবং জান্নাত জাহান্নাম ও তার সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়- যেগুলো সম্পর্কে ঈমান আনার শিক্ষা দেয়া হয়েছে- তার সব কিছুতেই বিশ্বাস করা। অতএব এ পর্যায়ে মোটামুটি ভাবে নিম্নোক্ত বিষয়াবলীতে বিশ্বাস রাখতে হবে।
(ইসলামে আকীদা) কবরের সওয়াল জওয়াব সত্য : কবরে প্রত্যেক মানুষের সংক্ষেপে কিছু পরীক্ষা হবে। মুনকার ও নাকীর নামক দু’জন ফেরেশতা কবরবাসীকে প্রশ্ন করবে তোমার রব কে? তোমার দ্বীন ধর্ম কি? তোমার রাসূল কে? সে নেককার হলে এ প্রশ্নাবলীর উত্তর সঠিকভাবে দিতে সক্ষম হবে।
তখন তার কবরের সাথে এবং জান্নাতের সাথে দুয়ার খুলে যোগাযোগ স্থাপন করে দেয়া হবে এবং কিয়ামত পর্যন্ত সে সুখে বসবাস করতে থাকবে। আর সে নেককার না হলে (অর্থাৎ কাফের বা মুনাফেক হলে) প্রত্যেক প্রশ্নের উত্তরেই সে বলবে অর্থাৎ . হায় হায় আমি জানি না! তখন জাহান্নামের ও তার কবরের মাঝে দুয়ার খুলে দেয়া হবে এবং বিভিন্ন রকম শাস্তি তাকে দেয়া হবে।
(ইসলামে আকীদা) কবরের আযাব সত্যঃ কবর মূলত : শুধু নির্দিষ্ট কোন গর্তকে বলা হয় না, কবর বলতে আসলে বোঝায় মৃত্যুর পর থেকে নিয়ে হাশরের ময়দানে পুনর্জীবিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সময়কালীন জগতকে। এ জগতকে কবর জগত, আলমে বরযখ বা বরযখের জগত বলা হয়। মৃত্যুর পর মানুষের মরদেহ যেখানেই যেভাবে থাকুক না কেন সে কবর জগতের অধিবাসী হয়ে যায় এবং বদকার হলে তার উপর আযাব চলতে থাকে।
কবরের এ আযাব মূলতঃ হয় রূহের উপর এবং রূহের মাধ্যমে দেহও সে আযাব উপলব্ধি করে থাকে। তাই দেহ যেখানেই যেভাবে থাকুক না কেন, জ্বলে পুড়ে ছাই বা পঁচে গলে মাটি হয়ে যাক না কেন, তার যে অংশ অবশিষ্ট থাকবে সেটুকু আযাব উপলব্ধি করবে। আর মৌলিক ভাবে আযাব যেহেতু রূহের উপর হবে, তাই কবরের আযাব হওয়ার জন্য এই দেহ অবশিষ্ট থাকাও অপরিহার্য নয়।
বিস্তারিত জানতে Google News অনুসরণ করুন
(ইসলামে আকীদা) পুনরুত্থান ও হাশর ময়দানের অনুষ্ঠান সত্য : কিয়ামতের সময় শিংগায় ফুঁক দেয়ার পর সবকিছু নেস্ত-নাবুদ হয়ে যাবে। আবার আল্লাহর হুকুমে এক সময় শিংগায় ফুঁক দেয়া হলে আদি অন্তের সব জ্বিন, ইনছান ও যাবতীয় প্রাণী পুনরায় জীবিত হয়ে হাশরের ময়দানে একত্রিত হবে।
(ইসলামে আকীদা) আল্লাহর বিচার ও হিসাব নিকাশ সত্য : পুনর্জীবিত হওয়ার পর সকলকে আল্লাহ তা’আলার বিচারের সম্মুখীন হতে হবে।
(ইসলামে আকীদা) নেকী ও বদীর ওজন সত্য : কিয়ামতের ময়দানে হিসাব-নিকাশের জন্য মীজান বা দাড়িপাল্লা (মাপযন্ত্র) স্থাপন করা হবে এবং তার দ্বারা নেকী বদী ওজন করা হবে ও ভাল-মন্দ এবং সৎ-অসতের পরিমাপ করা হবে।
(ইসলামে আকীদা) আমল নামার প্রাপ্তি সত্য : কিয়ামতের ময়দানে আমল নামা উড়িয়ে দেয়া হবে এবং প্রত্যেকের আমলনামা তার হাতে গিয়ে পড়বে এবং প্রত্যেকে তার জীবনের ভাল-মন্দ যা কিছু করেছে সব তাতে লিখিত অবস্থায় পাবে। নেককারের আমলনামা তার ডান হাতে গিয়ে পৌঁছবে, আর বদকারের বাম হাতে আমল নামা গিয়ে পড়বে।
(ইসলামে আকীদা) হাউযে কাউছার সত্য : এই উম্মতের মধ্যে যারা পূর্ণভাবে সুন্নাতের পায়রবী করবে, কিয়ামতের ময়দানে রাসূল (সঃ) তাদেরকে একটি হাউয থেকে পানি পান করাবেন, যার ফলে আর তাদেরকে পিপাসায় কষ্ট দিবে না। এই হাউযকে বলা হয় হাউযে কাউছার।
(ইসলামে আকীদা) পুলসিরাতকে বিশ্বাস করা : হাশরের ময়দানের চতুর্দিক জাহান্নাম দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকবে। এই জাহান্নামের উপর একটি পুল স্থাপন করা হবে, যা চুলের চেয়ে সরু এবং তলোয়ারের চেয়ে ধারালো হবে। এটাকে বলা হয় পুলসিরাত। সকলকেই এই পুল পার হতে হবে। এই পুলসিরাত হল দুনিয়ার সিরাতে মুস্তাকীমের স্বরূপ।
দুনিয়াতে যে যেভাবে সিরাতে মুস্তাকীমের উপর চলেছে, সে সেভাবে পুলসিরাত পার হয়ে যাবে-কেউ বিদ্যুৎ গতিতে, কেউ চোখের পলকে, কেউ দ্রুতগামী ঘোড়ার গতিতে, কেউ দৌড়ে, কেউ হেটে, আবার কেউ হামাগুড়ি দিয়ে। মোট কথা, যার যে পরিমাণ নেকী সে সে রকম গতিতে উক্ত পুল পার হবে। আর পাপীদেরকে জাহান্নামের আংটা জাহান্নামের মধ্যে টেনে ফেলে দিবে।
আরও পড়ুন >> বাংলা ব্যাকরণের ১০০টি সন্ধি বিচ্ছেদ
(নয়) শাফায়াত সত্য একথা বিশ্বাস করা : পরকালে রাসূল (সঃ), আলেম, হাফেজ প্রমুখদেরকে বিভিন্ন পর্যায়ে সুপারিশ করার ক্ষমতা দেয়া হবে । রাসূলে কারীম (সঃ) অনেক প্রকারের শাফায়াত বা সুপারিশ করবেন। তন্মধ্যে:
(১) হাশরের ময়দানের কষ্ট থেকে মুক্তির জন্য। হাশরের ময়দানের কষ্টে সমস্ত মাখলূক যখন পেরেশান হয়ে বড় বড় নবীদের কাছে আল্লাহর নিকট এই মর্মে সুপারিশ করার আবেদন করবে, যেন আল্লাহ পাক বিচারকার্য সমাধান করে হাশরের ময়দানের কষ্ট থেকে সকলকে মুক্তি দেন, তখন সকল নবী অপারগতা প্রকাশ করবেন। কারণ আল্লাহ তা’আলা সেদিন অত্যন্ত রাগান্বিত থাকবেন । অবশেষে রাসূল (সঃ) সেই সুপারিশ করবেন। এটাকে ‘শাফায়াতে কুরা’ বা বড় সুপারিশ বলা হয় ।
(২) কোন কোন কাফেরের আযাব সহজ করার জন্য । যেমন রাসূলের চাচা আবু তালেবের জন্য এরূপ সুপারিশ হবে।
(৩) কোন কোন মুমিনকে জাহান্নাম থেকে বের করার জন্য ।
(৪) যে সব মুমিন বদ আমল বেশী হওয়ার কারণে জাহান্নামের যোগ্য হয়েছে— এরূপ মুমিনদের কতকের মাগফেরাতের জন্য ।
(৫) কোন কোন মুমিনকে বিনা হিসেবে বেহেশতে প্রবেশ করানোর জন্য।
(৬) বেহেশতে মুমিনদের সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য।
(৭) আ’রাফ তথা জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝে অবস্থিত প্রাচীরে যারা অবস্থান করবে তাদের মুক্তির জন্য।
(ইসলামে আকীদা) জান্নাত বা বেহেশতকে বিশ্বাস করা : আল্লাহর নেক বান্দাদের জন্য আল্লাহ এমন সব নেয়ামত তৈরী করে রেখেছেন যা কোন চোখ দেখেনি, কোন কান শোনেনি, কারও অন্তরে তার পূর্ণ ধারণাও আসতে পারেনা। এই সব মহা নেয়ামতের স্থান হল জান্নাত বা বেহেশত। জান্নাত কোন কল্পিত বিষয় নয় বরং সৃষ্ট রূপে তা বিদ্যমান আছে এবং অনন্ত কাল বিদ্যমান থাকবে। মুমিনগণ ও অনন্তকাল সেখানে থাকবেন। জান্নাত বা বেহেশত আটটি।
যথা :
(১) জান্নাতুল খুদ
(২) দারুস সালাম
(৩) দারুল কারার
(৪) জান্নাতু আদন
(৫) জান্নাতুল মা’ওয়া
(৬) জান্নাতুন নাঈম
(৭) জান্নাতু ইল্লিয়্যীন বা দারুল মুকামাহ
(৮) জান্নাতুল ফিরদাউস।
(ইসলামে আকীদা) জাহান্নাম বা দোযখকে বিশ্বাস করা : পাপীদেরকে আল্লাহ আগুন ও আগুনের মধ্যে অবস্থিত সাপ, বিচ্ছু, শৃঙখল প্রভৃতি বিভিন্ন শাস্তির উপকরণ দ্বারা আযাব দেয়ার জন্য যে স্থান প্রস্তুত করে রেখেছেন, তাকে বলা হয় জাহান্নাম বা দোযখ। দোযখ আল্লাহর সৃষ্ট রূপে বিদ্যমান রয়েছে এবং অনন্তকাল বিদ্যমান থাকবে। কাফেররা অনন্তকাল তাতে অবস্থান করবে।
জাহান্নামের সাতটি স্তর বা দরজা থাকবে। একেক স্তরের শাস্তির ধরন হবে একেক রকম। অপরাধ অনুসারে যে যে স্তরের উপযোগী হবে তাকে সে স্তরে নিক্ষেপ করা হবে। এ স্তরগুলোর পৃথক পৃথক নাম রয়েছে। যথা :
(১) জাহান্নাম
(২) লাযা
(৩) হুতামা
(৪) সায়ীর
(৫) সাকার
(৬) জাহীম
(৭) হাবিয়া ।
ইসলামের প্রতিটি নিয়ম সুন্দর যা মুসলিম জাতির জন্য আখেরাতের মঙ্গলময়।
আমি বাংলার কথা বলি