আখিরাত কি । আখিরাতে পরিবেশ ও পরিস্থিতি
আখিরাত অর্থ মৃত্যু পরবর্তী জীবন। আখিরাত বলতে মৃত্যুর পর থেকে অনন্তকাল জীবনকে বুঝায়। কবর, হাশর হিসাব, পুলসিরাত এবং জান্নাত-জাহান্নাম সবকিছুই-এর অন্তর্ভুক্ত।
পবিত্র কুরআন ও হাদীসে আখিরাতের জীবনকে দুটি পর্যায়ে বিন্যাস করা হয়েছেঃ
১. মৃত্যু থেকে কিয়ামত পর্যন্ত
২. কিয়ামত থেকে অনন্তকাল অবধি। সেখান মৃত্যু ও ধ্বংস নেই।
প্রথম পর্যায়ের নাম বরযখ বা কবরের জীবন। মৃত্যুর পর মানব দেহ কবরস্থ করা হােক কিংবা সাগরে ভাসিয়ে দেওয়া হােক অথবা আগুনে পুড়িয়ে ভস্মীভূত করে দেওয়া হােক বা অন্য কোনভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হােক, সব অবস্থাই তার জন্য বরখ।
আরও পড়ুন>> নবীজির সহি ৩০টি হাদিস বাংলা অনুবাদ সহি দলিল সহ
আর দ্বিতীয় পর্যায় হল, কিয়ামত, হা-নশর তথা অনন্তকালের জীবন। কিয়ামত বলতে এমন এক সময়কে বোঝায় যখন আল্লাহর নির্দেশে জগতের সব কিছু ধ্বংস হয়ে যাবে। তারপর যখন আল্লাহ তাআলার ইচ্ছা হবে তখন তিনি আবার সকলকে জীবিত করবেন, সকলেই পুনরুত্থিত হয়ে হাশরের ময়দানে একত্রিত হবে।
এরপর সকলের কাছ থেকে জাগতিক জীবনের সব কিছু হিসাব গ্রহণ করা হবে। হিসাব-নিকাশের মানদণ্ডে আল্লাহর যে সব বান্দা উত্তীর্ণ হবেন তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করা হবে। আর যারা উত্তীর্ণ হতে পারবে না তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। এ পর্যায় হতেই মানুষ অনন্তকালের জন্য জান্নাতে বা জাহান্নামে অবস্থান করতে থাকবে। আখিরাতের উপর ঈমান আনার আবশ্যকতা। আখিরাতে বিশ্বাস ইসলামের আকীদাসমূহের মধ্যে অন্যতম। আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস ছাড়া ঈমান বিশুদ্ধ হয় না।
আরও পড়ুন >> রোজা ও ইফতারের দোয়া এবং ইফতারের আগে ও পরের দোয়া
কুরআন মাজীদে এ সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছেঃ
আর যারা পরকালের উপর নিশ্চিত বিশ্বাস রাখে। (সূরা বাকারা, ২ : ৪)
আরো ইরশাদ হয়েছেঃ
পূর্ব ও পশ্চিমদিকে মুখ ফিরাননাতে কোন পুণ্য নেই কিন্তু পুণ্য আছে কেউ আল্লাহ্, আখিরাত, ফিরিশতাগণ, সমস্ত আসমানী কিতাব এবং নবীগণের উপর ঈমান আনলে। (সূরা বাকারা, ২:১৭৭)।
যারা আখিরাতে বিশ্বাস করে না তারা ভ্রান্ত। আল্লাহ্ তা’আলা ইরশাদ করেন :
যে ফিরিশতাগণকে এবং তাঁর কিতাবসমূহকে, রাসূলগণকে এবং আখিরাতকে প্রত্যাখ্যান করল, সে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট হয়ে পড়বে। (সূরা নিসা, ৪ : ১৩৬)।
ইসলামের যাবতীয় বিধি-বিধান ও আদর্শের উপর নিজেকে সুদৃঢ় রাখার জন্য আখিরাতের উপর আস্থাশীল হওয়া আবশ্যক। কারণ মৃত্যুর পর আরেকটি জীবন শুরু হবে এবং সে জীবনে পুরস্কার কিংবা শাস্তি, সফলতা কিংবা ব্যর্থতা ইহকালের কর্মকাণ্ডের উপরই নির্ভরশীল, এ কথার বিশ্বাসই মানুষকে পার্থিব জীবনে সত্যপথের অনুসারী বানায় এবং আমলে সালিহের পথে উদ্বুদ্ধ করে। আখিরাতের বিশ্বাস মানব মনে সত্যের প্রতি আনুগত্য এবং অসত্য পরিহার করার মনােভাবের জন্ম দেয়।
ভিডিও >> মাহফিলে হুজুর বদ দোয়া করে দিলেন || Amir Hamza
কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছেঃ
এক ইলাহ্, তিনিই তোমাদের ইলাহ্, সুতরাং যারা আখিরাতে বিশ্বাস করে না তাদের অন্তর সত্যবিমুখ এবং তারা অহংকারী। (সূরা নাহল, ১৬ : ২২)।
রাসূলুল্লাহ (সা) ঈমানের পরিচয় দিতে গিয়ে আখিরাতের বিশ্বাসের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। বর্ণিত আছে, হযরত জিব্রাঈল (আ) রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে বললেন, আমাকে বলুন, ঈমান কাকে বলে? উত্তরে তিনি বললেন : আল্লাহকে বিশ্বাস করবে এবং তাঁর ফিরিশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ এবং আখিরাতকে বিশ্বাস করবে। আর বিশ্বাস করবে তাকদীরের ভালমন্দের উপর।